Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Sandip Ghosh

কী না হয় মাথায় ‘ক্ষমতার হাত’ থাকলে! তদন্তের মাঝপথেই ‘খারিজ’ হয়েছিল সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ

চিকিৎসক মহলের বড় অংশের অভিযোগ, সন্দীপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। বরং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার পদে থাকার সময়ে, ২০২০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ দায়ের হয়।

সন্দীপ ঘোষ।

সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল ছবি।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৯
Share: Save:

মাথায় ‘ক্ষমতার হাত’ থাকলে কি সবই সম্ভব রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়! আর্থিক দুর্নীতির মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সব সময়েই যে ক্ষমতার অলিন্দে বসে থাকতেন, তার প্রমাণ মিলেছে বহু ক্ষেত্রেই। অভিযোগ, অধ্যক্ষ হওয়ার বহু আগে উপাধ্যক্ষ তথা সুপার পদে থাকার সময় থেকেই তিনি ওই ক্ষমতা ভোগ করতেন। আর, সেই ‘জোরে’ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রাতারাতি তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল দফতরের শীর্ষ কর্তার নোটে। ফলে অতি সহজেই অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন তিনি।

চিকিৎসক মহলের বড় অংশের অভিযোগ, সন্দীপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। বরং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার পদে থাকার সময়ে, ২০২০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ দায়ের হয়। যেখানে আর্থিক দুর্নীতি, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনায় অনৈতিক ভাবে টাকার লেনদেন, অনুমতি না নিয়ে দুবাই ভ্রমণ, বিভিন্ন সরবরাহকারী সংস্থার থেকে ঘুষ নিয়ে বেলেঘাটায় বাড়ি তৈরি, প্রাইভেট প্র্যাক্টিস সহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, ২০২০-র ৩ ফেব্রুয়ারিতে জনৈক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় এবং ১ অক্টোবর রঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ওই দুটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। স্বাস্থ্য ভবনের অন্দরের খবর, প্রশান্তের অভিযোগের তদন্ত করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের ভিজিল্যান্স বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর, রঞ্জিতের অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে ২০২০-র ১৫ অক্টোবর অভ্যন্তরীণ নোট দিয়ে এক যুগ্ম অধিকর্তা দাবি করেছিলেন বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাতে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তৎকলীন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। জানা যাচ্ছে ২০২০-র ৫ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিক্যালের তৎকালীন অধ্যক্ষ অজয় রায় নোট দিয়ে দাবি করেন, রঞ্জিত যে অভিযোগ তুলেছিলেন তার প্রেক্ষিতে সন্দীপ প্রায় সব কিছুই অস্বীকার করে চিঠি দিয়েছেন।

পাশাপাশি, ওই নোটে অজয় আরও দাবি করেন একই প্রতিষ্ঠানে একই সঙ্গে কাজ করার দরুণ সন্দীপের বিষয়ে কোনও নিরপেক্ষ মতামত দেওয়া হয়তো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাও, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রাথমিক রিপোর্টে তিনি জানান ২০১৮ সালে ন্যাশনাল মেডিক্যালের সুপার পদে যোগ দেন সন্দীপ। ওই পদে থাকা সত্বেও তিনি কী ভাবে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন, তা নিয়ে ওঠা প্রশ্নে সন্দীপ দাবি করেছিলেন, এর জন্য ২০০৬ সালে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিবের অনুমতি নিয়েছিলেন। যদিও অজয় নোটে জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য দফতরের নিয়মানুযায়ী উপাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শীর্ষস্তরের সমস্ত পদ ‘নন-প্র্যাক্টিসিং’। পাশাপশি তিনি প্রকারান্তরে নিজের মতামতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সন্দীপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে এবং তা নিয়ে যথেষ্ট বিড়ম্বনা সহ্য করতে হচ্ছে।

তার পরে ১৮ নভেম্বর যুগ্ম অধিকর্তা তাঁর নোটে জানিয়ে দেন প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে সন্দীপের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক
ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও, সেটি তৎকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে ভিজিল্যান্স বিভাগকে আরও এক বার দেখতে দেওয়া প্রয়োজন। যদিও ওই দিনই দেবাশিস নোট দিয়ে সন্দীপের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ খারিজ করে দিতে বলেন। দিন কয়েক পরে তিনি আরও নির্দেশ দেন, সন্দীপের বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাই তাঁকে অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এর পরেই সন্দীপ আর জি করের অধ্যক্ষ হন।

কেন অভিযোগ খারিজ করতে বলেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা? এ ব্যাপারে জানতে তাঁকে ফোন করা হলে ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

অন্য বিষয়গুলি:

Sandip Ghosh R G Kar Hospital CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE