মামলার রায় শুনে কেঁদে ফেললেন অনুপম সিংহের বাবা-মা। বৃহস্পতিবার, বারাসত আদালত চত্বরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
অনুপম সিংহ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী মনুয়া মজুমদার ও মনুয়ার প্রেমিক অজিত রায়কে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করল বারাসত আদালত। আজ, শুক্রবার বিচারক বৈষ্ণব সরকার দু’জনের সাজা ঘোষণা করবেন। এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি শ্যামলকান্তি দত্ত বলেন, ‘‘খুন ও ষড়যন্ত্রের ধারায় দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর ন্যূনতম শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’’
২০১৭ সালের ২ মে বেসরকারি সংস্থার কর্মী অনুপমকে তাঁর বাড়িতেই নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। তদন্তে নেমে প্রথমে ধোঁয়াশায় ছিল পুলিশ। পরে নানা তথ্যের উপর ভিত্তি করে মনুয়া ও অজিত ওরফে বুবাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৮৬ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। এ দিন দুপুরে বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক চতুর্থ কোর্টে রায় ঘোষণার সময়ে বিচারক খুনের ঘটনার বিবরণ দেন।
আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, অজিতের সঙ্গে মনুয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এর জেরে অনুপমের সঙ্গে মনুয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়। এর পরেই অনুপমকে খুনের চক্রান্ত করে দু’জন। খুনের দিন দুপুরে তারা অনুপমের বাড়িতে যায়। সন্ধ্যায় অনুপম ফেরার আগেই অজিতকে ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় মনুয়া। এর পরে দু’টি ফোন থেকে এক বার অনুপম, এক বার অজিতের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে থাকে মনুয়া। খুনের সময়ে ফোনে অনুপমের আর্তনাদও শোনে মনুয়া।
পরের দিন অনুপমের দেহ ছাড়াও বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার হয়। সেই সব প্রমাণের সঙ্গে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে খুনের ১৫ দিন পরে অজিত ও মনুয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র, পোশাক উদ্ধার করে পুলিশ। সে সবই আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। অজিত যে খুনের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিল, তা প্রমাণ করতে তার আঙুলের ছাপ ও ফরেন্সিক রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে। এ দিন সরকারি কৌঁসুলি জানান, সাক্ষীদের বয়ান এবং প্রমাণের উপরে ভিত্তি করেই দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
এ দিন মামলার রায় শুনতে ভিড় ছিল আদালতে। অনুপমের মা, বাবা, আত্মীয়েরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বন্ধুরা। মুখ ঢাকা অবস্থায় আনা হয় মনুয়াকে। অজিতের পরনে ছিল জিন্স আর লাল শার্ট। রায় ঘোষণার পরে কোনও ভাবান্তর দেখা যায়নি দু’জনের মধ্যেই। মনুয়ার আইনজীবী সুব্রতকুমার মণ্ডল জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টে আবেদন করবেন।
এ দিন রায় ঘোষণার পরে কাঁদতে থাকেন অনুপমের মা কল্পনা সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে-বৌমাকে আমরা খুবই ভালবাসতাম। বৌমা যে এমন করবে, ভাবতেও পারিনি।’’ অনুপমের বাবা জগদীশ বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ অবস্থায় এসেছি। এই দু’বছর একফোঁটা ঘুমোতে পারিনি। ওদের ফাঁসির সাজা হলেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।’’ এ দিন মনুয়া বা অজিতের পরিবারের কাউকে আদালত চত্বরে দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy