Advertisement
E-Paper

বাদাবন কার্বন গিলে ফেলাতেই কি কমছে বৃষ্টি

ম্যানগ্রোভ অরণ্য বায়ুবাহিত কার্বনকণা গিলে ফেলায় বর্ষার ছন্দ বিগড়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র

সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪৫
Share
Save

খাতায়-কলমে বর্ষা এলেও জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টির হাহাকার লেগেই থাকছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। জলবায়ু বদল বা প্রকৃতির অন্যান্য খামখেয়ালিপনার পাশাপাশি এ বার সেই ‘কার্পণ্যের’ নতুন একটি কারণ তুলে ধরছেন শহরের এক দল বিজ্ঞানী। তাঁদের গবেষণায় ফুটে উঠছে সুন্দরবনের বাদাবনের নতুন এক চরিত্রও।

বোস ইনস্টিটিউটের এক দল গবেষক তাঁদের নতুন এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, শুধু সামুদ্রিক ঝড়ঝাপটা নয়, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বড় একটি অংশকে বায়ুদূষণের হাত থেকেও বাঁচাচ্ছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। কিন্তু এই কাজটির একটি নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। কারণ, ম্যানগ্রোভ অরণ্য বায়ুবাহিত কার্বনকণা গিলে ফেলায় বর্ষার ছন্দ বিগড়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকা ‘কেমোস্ফিয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

শিবাজী রাহা, অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সনৎকুমার দাস, সঞ্জয় ঘোষের মতো প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী এবং অভিনন্দন ঘোষ ও অরিন্দম রায়ের মতো তরুণ গবেষকদের নিয়ে গঠিত দলটি দেখেছে, গ্রীষ্মে ‘ঝুম’ চাষের জন্য পূর্বঘাট পর্বতের লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন জনজাতি খেত থেকে বিভিন্ন শস্য তোলার পরে সেই সব গাছের অবশিষ্টাংশ পোড়ায় নির্বিচারে। সেই পোড়া ছাই এবং কার্বনকণা দখিনা বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসে বাংলার দিকে। তবে শেষমেশ তা বাংলার হাওয়ায় ঢুকতে পারে না। কারণ, সুন্দরবনের হাওয়ায় মিশে থাকা লবণকণা এবং ম্যানগ্রোভ থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন জৈব গ্যাস সেই কার্বনকণা শুষে নেয়। ফলে ওই ছাই বা পোড়া সূক্ষ্ম কার্বনকণা কলকাতার দিকে বয়ে আসতে পারে না।

বাদাবন ওই সব কার্বনকণা শুষে নেওয়ার ফলেই কি বর্ষার ‘স্বভাব’ বদলে যাচ্ছে? পরিবেশবিদদের অনেকে বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত কমেই চলেছে। ফলে বর্ষার চরিত্রে একটি বদলের ধারাও লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা স্থায়ী বদল কি না, সেই বিষয়ে এখনও ধন্দে অনেক গবেষকই।

অভিজিৎবাবু বলছেন, কার্বনকণার সঙ্গে এই বিক্রিয়ার ফলে বাতাসে মিশে থাকা লবণকণার চরিত্র বদলে যায়। তারই প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর উপরে। স্বাভাবিক চরিত্র মেনে লবণকণা দ্রুত জল ধারণ করে মেঘ তৈরিতে সাহায্য করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কার্বনের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে সেই স্বাভাবিক চরিত্র হারাচ্ছে সামুদ্রিক বাতাসে মিশে থাকা লবণকণা। যে-হেতু এই গোটা প্রক্রিয়া গ্রীষ্মের শেষ এবং বর্ষার গোড়ায় ঘটছে, তার ফলে সেটা কুপ্রভাব ফেলছে বর্ষাকালের বর্ষণের উপরে।

কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের ঢাল হিসেবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য কত বড় ভূমিকা পালন করে, সম্প্রতি ‘বুলবুল’ ঘূর্ণিঝড়ের সময়েই সেটা হাড়ে হাড়ে মালুম হয়েছে। পরিবেশবিদ ও আবহবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ম্যানগ্রোভের পাঁচিল না-থাকলে ওই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যেত কলকাতা-সহ উপকূলীয় বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই ঝড়ের আঘাত বুক পেতে নিয়ে মহানগর-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বাদাবন। তবে তাতে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার শুশ্রূষার কাজও শুরু করেছে বন দফতর।

অভিজিৎবাবু জানাচ্ছেন, ভেসে আসা পোড়া কার্বনকণার দূষণ থেকে কলকাতাকে বাঁচাতে হলে ম্যানগ্রোভের বিস্তার তো বাড়াতেই হবে। একই ভাবে রাশ টানতে হবে পূর্বঘাট অঞ্চলের ‘ঝুম’ চাষেও।

Mangroves Sundarbans Monsoon Air Pollution Carbon

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}