কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নজরুল মিঞার মা সাকিনা বেওয়া। ছবি: মফিদুল ইসলাম
এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কে মৃত্যুর তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। মাস তিনেক আগে ডোমকলের শিবনগর গ্রামের মিলন মণ্ডল গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন বিলপাড়ার নজরুল মিঞা (৫৯)। মৃতের পরিবারের দাবি নয়া আইনে নিজের বিটেমাটি ছাড়ার ভয়েই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। নজরুলের স্ত্রী রমেলা বিবি বলেন, ‘‘দেশ ছাড়ার চিন্তায় সন্ত্রস্ত হয়ে ছিল মানুষটা। সেই চিন্তায় আমাদের ছেড়েই চলে গেল।’’
মৃত নজরুল মিঞা ইটভাটায় কাজ করতেন। বছরের অন্য সময় পরের জমিতে কাজ করেই চলত তাঁর সংসার। একাই রোজগেরে ছিলেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার বারুইপাড়ায় হাট সেরে বাড়ি ফেরেন রাত করে। তার পর অন্য দিনের মতোই বারান্দায় বসে ছেলেদের সঙ্গে নয়া আইনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ভিটেমাটি হারানোর চিন্তায় না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফের ইটভাটায় কাজে যাওয়ার আগে স্ত্রীর সাথে ফের কাগজপত্র নিয়ে কথাবার্তা বলেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরেই শৌচাগার থেকে ফিরে উঠোনে পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক সেলিম মিঞা বলেন, ‘‘নজরুল বেশ কিছু দিন ধরেই এনআরসি আতঙ্কে ভুগছিলেন। তার উপর নয়া নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে ভয় আরও বেড়ে গিয়েছিল। আমার কাছে এসে জমির রেকর্ড কাভাবে পেতে হয়, তা নিয়ে কথা বলতেন প্রায়ই। ভোটার কার্ডে নাম কিভাবে ঠিক করতে হবে তা নিয়েও কথা হয়। ভয়ই তাঁর মৃত্যুর কারণ হল।’’ নজরুল মিঞা আদতে ভুমিহীন। বাড়ির এককাঠা ভিটেই তাঁর সম্বল। পুরনো জমির দলিল বা রেকর্ড কিছুই নেই তাঁর। তা ছাড়া অন্যান্য নথিপত্রেও রয়েছে অল্প বিস্তর ভুলভ্রান্তি। সব নিয়েই তিনি খুব চিন্তায় ছিলেন বলেই জানান পরিবারের লোকজন।
মৃতের বড় ছেলে পিন্টু মিঞা বলেন, ‘‘আব্বা বেশ কিছু দিন ধরেই এনআরসি আতঙ্কে ভুগছিলেন। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনের খবর দেখে আরও ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।’’
গ্রামের বাসিন্দা সাহাদ আলি বলছেন, ‘‘নজরুল মিঞার মতো গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এনআরসি আতঙ্কে রয়েছেন। নাওয়া খাওয়া ভুলে নথিপত্র জোগাড়ের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন অনেকেই। আরও কত জন যে এ ভাবে চলে যাবেন!’’
হরিহরপাড়ার বিডিও পুর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। সরকারি ভাবে পরিবারটিকে সহায়তা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy