গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘স্যার’ নিয়মিত স্কুলে আসতেন না। তবে এলে খুব ভাল পড়াতেন। গল্পগুজব করতেন পড়ুয়াদের সঙ্গে। তবে ব্যস্ত থাকতেন তো খুব, বাড়িতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব সময়ে বিশ-তিরিশ জনের আনাগোনা। ওঁর তো ‘অন্য অনেক ব্যস্ততা’ ছিল!
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বাসিন্দা রঞ্জন সম্পর্কে কাহিনির ছড়াছড়ি এলাকায়। এক ভিডিয়োয় প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের দাবি, ‘রঞ্জন’ বহু লোককে টাকা নিয়ে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। যে প্রাথমিক স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকতা করেন তিনি, সেখানে গিয়ে পাওয়া গেল পঞ্চাশোর্ধ্ব ‘স্যার’ সম্পর্কে এই তথ্য।
২০০৮ সালে চাকরি পেয়েছিলেন রঞ্জন। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে জানালেন, তার পর থেকে অভাবের সংসারে হাল ফেরে রঞ্জনের। কিন্তু সামান্য টাকার চাকরি করে সেই স্বাচ্ছন্দ্য কী করে হল, তখনও প্রশ্ন ছিল পাড়া-পড়শির মনে। নিজে এক সময়ে গৃহশিক্ষকতা করে পড়াশোনা চালিয়েছেন রঞ্জন। পরে তিনিই লোককে স্কুলে চাকরি করে দিতে শুরু করেন। ২০১২ সালের পর থেকে এ কাজে তাঁর হাতযশ শুরু।
পাড়াপড়শিদের কেউ কেউ জানালেন, রঞ্জনের কাছ থেকেই শুনেছেন, কলকাতায় উপরমহলে তাঁর অনেকের সঙ্গে ওঠাবসা। টাকা নিয়ে স্কুলে চাকরি দেওয়ার কারবার জমে ওঠে সেই সূত্রেই।
তবে রঞ্জনের জীবনযাপন ছিল খুবই সাদাসিধা। স্কুটিতে ঘোরাফেরা করতেন। বরং তাঁর সঙ্গে কাজ করে অন্য অনেকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখেছেন বাগদার গ্রামের মানুষ।
রঞ্জনের ঘনিষ্ঠ এক যুবকের কথাই ধরা যাক। গ্রামের কেউ কেউ জানালেন, টাকা দিয়ে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার রঞ্জনের কারবার পরের দিকে দেখাশোনা করতেন এই যুবক। ঝাঁ চকচকে অফিস তাঁর। গাড়ি চড়ে ঘোরেন।
তবে সেই অফিসে কী কাজ হয়, এলাকার লোকজন জানেন না। অনেক যুবক-যুবতীর আনাগোনা অবশ্য চোখে পড়েছে নানা সময়ে। ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রঞ্জন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে সটান জানিয়ে দিলেন। কথাও বাড়াতে চাইলেন না। তবে এলাকার লোকজনের দাবি, ওই যুবক, তাঁর স্ত্রী এবং শ্যালিকাকে রঞ্জনই স্কুলে চাকরি করে দিয়েছিলেন।
স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন, চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে রাজনীতির রং দেখতেন না রঞ্জন। ফলে সব দলের লোকজনের আনাগোনা ছিল তাঁর কাছে। নিজে ফোনে কথা বলা পছন্দ করতেন না। এলাকায় আড্ডা মারতেও দেখা যেত না। অনুষ্ঠান বাড়িতে গেলে ছবি তোলার ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না একেবারেই। এলাকায় মেলামেশা বিশেষ না করলেও ঘটা করে কালীপুজো করতেন রঞ্জন। বস্ত্র বিতরণ হত। গ্রামের লোক জানালেন, পুজোয় টাকা ঢালতেন যাঁরা, তাঁদের কোনও না কোনও সময়ে টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন রঞ্জন।
‘সুবিধাভোগী’দের একাংশ দাবি করছেন, স্কুলে চাকরি দেওয়া শুধু নয়, টাকা দিয়ে পছন্দসই জায়গায় বদলির ব্যবস্থাও হত। এমনিতে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, হাইস্কুলে চাকরির জন্য ১০-২০ লক্ষ টাকা নিতেন রঞ্জন। ১-২ লক্ষ টাকায় বদলির ব্যবস্থা করে দিতেন। কাউকে ফেরাতেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, টাকা নিয়ে গত কয়েক বছরে কয়েকশো জনকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন রঞ্জন। এই টাকার লেনদেন পুরোটাইহয়েছে নগদে।
সেই টাকা গেল কোথায়?
(চলবে)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy