কোভিড-যোদ্ধাদের সংবর্ধনাই আজ, শনিবার স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হতে চলেছে। কোভিড লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসাবে রেড রোডের অনাড়ম্বর ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ২৫ জন কোভিড-যোদ্ধাকে কুর্নিশ জানাবে রাজ্য সরকার।
অতিমারির কারণে এ বছর জৌলুসহীন হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান। কেন্দ্র বা রাজ্যের তরফে কোভিড-মোকাবিলার যাবতীয় পরিকল্পনা-পদক্ষেপ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ভার ছিল চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী, সাফাই কর্মচারী, পুলিশ-সহ অন্য কর্মী-আধিকারিকের উপর। স্বাধীনতা-অনুষ্ঠানে তাঁরাই এ বার ‘প্রধান অতিথি’। দিল্লিতেও যেমন কোভিড যোদ্ধারা এ দিন সংবর্ধিত হবেন, তেমনই এ রাজ্য সম্মান জানাবেন তাঁদের।
সরকারি তালিকা অনুযায়ী, তিন জন করে ডাক্তার, পুলিশকর্মী, হোমগার্ড, কোভিড ওয়ারিয়ার ক্লাবের সদস্য, দু’জন করে নার্স, আশাকর্মী, বিডিও, শিক্ষক, সাফাইবন্ধু, একজন করে ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, সিভিক ভলান্টিয়ার—মোট ২৫ জন রেড রোডে সংবর্ধনা পাবেন। সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতিতে এই যোদ্ধাদের স্যালুট জানাবে সরকার। মানপত্র, পদক তুলে দেওয়া হবে প্রত্যেকের হাতে।
সরকারি সম্মান পাচ্ছেন তিন চিকিৎসক। এঁদের মধ্যে একজন হাওড়া হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। গত এপ্রিল মাস নাগাদ তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে ফের কোভিড যুদ্ধে যোগ দেওয়া নারায়ণবাবু বলছেন, “বিষয়টা একেবারেই নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল। ফলে প্রত্যেকের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল, কোভিড হলেই হয়তো মৃত্যু অনিবার্য। রোগীদের সেই ভয় দূর করার চেষ্টা চালাতে হয়েছে।” অপরজন মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক শবনম বানু। গত মে মাসের গোড়ায় করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। শবনম বলেন, “কোভিড নিয়ে একটা সামাজিক বাধা তো ছিলই। ফলে আমাদেরও তার মুখোমুখি হতে হয়।”
কোভিড আতঙ্কে বেসরকারি হাসপাতালগুলি থেকে একের পর এক র্নাস যখন ভিন রাজ্যে নিজেদের বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন, তখনও পিছিয়ে যাননি সত্যবালা আই ডি হাসপাতালের নার্স ঝুমা মুর্মু। কোভিড রোগীদের সেবা করার সময় তিনিও আক্রান্ত হন ১০ এপ্রিল। সুস্থ হয়ে ফের কোভিড হাসপাতালে কাজ করছেন ঝুমা। তিনিও কোভিড-যোদ্ধা হিসাবে রেড রোডে পুরষ্কৃত হবেন। ঝুমা বলেন, ‘‘আবার ফিরে আসব এবং মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেব, এটা আমি ভাবিনি। আমি ফের কাজে যোগ দেওয়ায় সহকর্মীদের আতঙ্কও কেটে গিয়েছে। এটাই আমার প্রাপ্তি।’’ ঝুমা ছাড়া আরও একজন নার্সকে সংবর্ধনা দেবে সরকার।
রাজ্য সরকার সংবর্ধনা দেবে করোনা-জয়ী কুলতলির বিডিও বিপ্রতীম বসাককে। জুলাইয়ের গোড়ায় করোনা-আক্রান্ত হন তিনি। হাসপাতাল থেকে ফিরে হোম আইসোলেশন কাটিয়ে এখন ফের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বিপ্রতীম। সংবর্ধনার খবরে বিডিও বলেন, “কাজের উৎসাহ বাড়ল।”
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)