নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট মেনে সব চললে, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আগামী বছর। তার আগে তৃণমূল কংগ্রেসের করণীয় কী, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে সেই সম্পর্কে উপর থেকে নীচের স্তর পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীদের স্পষ্ট বার্তা দিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভা শুরুর আগে প্রায় সর্বাংশেই পুরনো মতপার্থক্যের ছাপ স্পষ্ট। সভার প্রস্তুতি-পর্বে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনুপস্থিতি’ও চোখে পড়ার মতো।
নেতাজি ইন্ডোরে আজ, বৃহস্পতিবার এই ‘রাজনৈতিক অধিবেশনে’ ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে সম্প্রতি তৃণমূল যে অভিযোগ তুলেছে, আপাতত তা নিয়েই বড় রকমের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সঙ্গেই নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক স্তরে রদবদল নিয়ে দলের অন্দরে যে টানাপড়েন চলছে, তিনি তারও ভবিষ্যৎ ঘোষণা করে দিতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে। দলের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, এই মঞ্চ থেকেই রদবদলের নীতিগত সিদ্ধান্তে ‘সিলমোহর’ দিয়ে দিতে পারেন তৃণমূলের চেয়ারপার্সন।
আগামী ২০২৬ সালের এই সময়ে কার্যত বিধানসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়বে এ রাজ্য। তার আগে তৃণমূলের এই আকারের সাংগঠনিক সভা সম্ভবত এটাই একমাত্র। ফলে, সাংগঠনিক প্রস্তুতির দিক থেকে এই সভা রাজ্যের শাসক দলের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দলের একাংশ মনে করছে, এখান থেকেই নির্বাচনী প্রচারের সাধারণ অভিমুখ স্থির করে দিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্য সরকারের যে জনপ্রিয় প্রকল্পগুলিকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন বিরোধীদের আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে তৃণমূল, ১০০ দিনের কাজ ও আবাস প্রকল্পে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের সে সব উদ্যোগের কথাই জনসংযোগের মূল বিষয় করতে চান মমতা। সেই সঙ্গেই ভোটার তালিকা নিয়ে যে চর্চা শুরু হয়েছে, তাকে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দলকে নির্দিষ্ট নির্দেশ দিতে পারেন তিনি।
এই সভায় প্রধান বক্তা মমতা হলেও উপস্থিত থাকার কথা অভিষেকের। নিরাপত্তা-সহ অন্যান্য সব প্রস্তুতি সেই রকমই আছে বুধবার পর্যন্ত। তবে মূল মঞ্চে বা নেতাজি ইন্ডোরের সভাস্থলে কোথাও দলের ‘সেনাপতি’র নাম বা ছবি নেই। প্রস্তুতি বৈঠকেও তাঁর অনুগামী অংশকে খুব সক্রিয় দেখা যায়নি। প্রসঙ্গত, এই নেতাজি ইন্ডোরেই দলের শেষ বড় সভায় অভিষেকের ছবি না-থাকা নিয়ে দলের অন্দরে তুমুল বিতণ্ডা শুরু হয়েছিল। গত ২০২৩ সালে সেই বিতর্ক রাস্তায় চলে এসেছিল। তবে এ বার এ নিয়ে অবশ্য দলের নেতারা কেউ মুখ খুলতে চাননি।
বিরোধীরা অবশ্য শাসক দলের এই সভা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সবই তো তৃণমূলের হাতে আছে। তা হলে এখন আবার ঘর গোছাতে হচ্ছে কেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রী জানেন ভিতরে ঘর অগোছালো আছে। কে কখন অন্য ঘরে চলে যায় বা কখন সিঁদ কাটে, সে সব চিন্তাও আছে!’’ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর দাবি, “তৃণমূলের হাতে ৩৫-৪০ লক্ষ ভুয়ো ভোট আছে। মেরে-ধরে, মিথ্যা ভোটের মাধ্যমে বাংলা দখল করতে হবে, এই বার্তা দিতে দিদি ডেকেছেন। আর দলের মধ্যে খোকাবাবু-দিদির যে দূরত্ব, তা মেটানোর চেষ্টা করবেন।’’ বিরোধীদের এই বক্তব্যকে ‘প্রলাপ’ বলে পাল্টা নস্যাৎ করেছেন তৃণমূলের নেতৃত্ব।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)