Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

চাকরি যাওয়া উচিত নার্সের: মুখ্যমন্ত্রী

বালুরঘাট হাসপাতালে স্যালাইনের চ্যানেল কাটতে গিয়ে সদ্যোজাতের আস্ত বুড়ো আঙুলটাই কেটে ফেলেছিলেন নার্স। স্বাস্থ্য দফতরের মুখ পোড়ানোর পক্ষে ঘটনাটি যে যথেষ্ট, ঘনিষ্ট মহলে তা কবুল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অভিযুক্ত নার্সকে নিতান্তই সাসপেন্ড করা খুব ‘কম শাস্তি’। তিনি মনে করেন, ওই নার্সের চাকরি যাওয়া উচিত।

কলকাতা যাওয়ার আগে মায়ের কোলে শিশুকন্যাটি। মঙ্গলবার বালুরঘাট হাসপাতালে। ছবি:অমিত মোহান্ত

কলকাতা যাওয়ার আগে মায়ের কোলে শিশুকন্যাটি। মঙ্গলবার বালুরঘাট হাসপাতালে। ছবি:অমিত মোহান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

বালুরঘাট হাসপাতালে স্যালাইনের চ্যানেল কাটতে গিয়ে সদ্যোজাতের আস্ত বুড়ো আঙুলটাই কেটে ফেলেছিলেন নার্স। স্বাস্থ্য দফতরের মুখ পোড়ানোর পক্ষে ঘটনাটি যে যথেষ্ট, ঘনিষ্ট মহলে তা কবুল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অভিযুক্ত নার্সকে নিতান্তই সাসপেন্ড করা খুব ‘কম শাস্তি’। তিনি মনে করেন, ওই নার্সের চাকরি যাওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ব্যান্ডেজ কাটার সময়ে মোবাইল ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে গিয়েই ওই নার্স এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এই গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।’’ এ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আইন বদলে আরও ‘কড়া শাস্তি’ দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই নার্সকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু ওঁর চাকরি যাওয়া উচিত। উনি যা করেছেন, তা অবহেলা নয়, অপরাধ।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তাই যথেষ্ট ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর নির্দেশে অভিযুক্ত ওই সিনিয়র নার্স রাখী সরকারকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। দুপুরে হাসপাতালে এসে শিশুটির বাবার হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি। বলেন, ‘‘তদন্ত রিপোর্টে ওই নার্সের কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। তাঁকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ ওই হাসপাতালের নার্সিং সুপারকেও শো-কজ করে পাঁচ দিনের মধ্যে উত্তর চাওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, বালুরঘাট থানার আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অভিযুক্ত নার্সের বিরুদ্ধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে শরীরের কোনও অংশ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে (৩২৬ ধারা) মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ধারা জামিন অযোগ্য।’’ মামলা করেই বসে না থেকে এ দিন চকভৃগু এলাকায় তাঁর বাড়িতে হানাও দেয় পুলিশ। তবে, রাখিদেবীর দেখা মেলেনি। পুলিশ ওই নার্সের মোবাইল ফোনটিরও খোঁজ করছে বলে জানা গিয়েছে।

তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা ওই শিশুর পরিবারের কেউই, স্যালাইনের চ্যানেল কাটার সময়ে নার্সকে মোবাইলে কথা বলতে দেখেছেন বলে জানাননি। রবিবার রাতের ওই ঘটনার পরে, শিশুটির মা ও বাবা, মামণি ও বাবলা মণ্ডল সদ্যোজাতকে নিয়ে ছুটেছিলেন শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তবে ঘণ্টা দশেকের পথ পাড়ি দিয়েও সে হাসপাতালে তার কাটা আঙুল জোড়া লাগানোর কার্যত কোনও চেষ্টাই হয়নি। বালুরঘাট হাসপাতালে ফিরে মণ্ডল পরিবার তাই স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিল, আর কোথাও নয়। জেলা সদরের ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা করাবেন তাঁরা।

খবরটা পেয়ে সোমবার রাতে কলকাতা থেকে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় শিশুটির বাড়িতে টেলিফোন করেন। তিনি শিশুটির দিদা দীপালিদেবীকে জানান, কলকাতায় নিজের বাড়িতে রেখে শিশুটির চিকিৎসার দায়ভার নিতে তিনি রাজি। রূপা জানান, শিশুটিকে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসএসকেএম পাঠানোর দরকার ছিল, প্রয়োজন ছিল ছিন্ন আঙুলটির সংরক্ষণও। তাঁর দাবি, হাসপাতালের তরফে তা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে শিশুটিকে এসএসকেএম নিয়ে এসে চিকিৎসা করানোর সব দায়িত্ব আমি নেব বলে জানিয়েছিলাম। আমার বাড়িতে থাকার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে দল থেকেও প্রশ্ন তোলেননি কেউ। কিন্তু পরিবারটি রাজি হয়নি।’’

ছবিটা বদলে যায় এর পরেই। দুপুর একটা নাগাদ মুখ্যসচিবের দফতর থেকে জেলাশাসককে ফোন করে ওই ‘যে কোনও উপায়ে’ রাজি করিয়ে শিশুটিকে কলকাতা পাঠানোর নির্দেশ আসে। তৎপরতা শুরু হয় এর পরে। মঙ্গলবার বিকেলে বালুরঘাট হাসপাতাল থেকে শিশুটি-সহ রওনা করিয়ে দেওয়া হয় পরিবারটিকে। আজ, বুধবার ভোরে তাঁরা কলকাতায় পৌঁছবেন। সরকারি সূত্রের খবর, এসএসকেএম হাসপাতালে শিশুটির রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারির চেষ্টা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy