সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগে দলের সর্ব স্তরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই কারণেই দলের ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ করতে তৎপর হলেন তিনি।
ছাত্র অন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাজনীতির মূল স্রোতে আসা মমতা তৃণমূলের মূল সংগঠনের পাশাপাশি দলের ছাত্র এবং যুব শাখাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। কিন্তু দলের ছাত্র সংগঠনের অন্দরে যে গোষ্ঠী রাজনীতির চোরাস্রোত আছে, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। যখন যিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি থাকেন, তখন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী দলীয় নেতৃত্বের একাংশের মদতে সক্রিয় থাকে। এর ফলে সামগ্রিক ভাবে সংগঠনের ক্ষতি হয়। সেই কারণে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ করতে গঠিত কমিটিতে এ বার পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বা শঙ্কুদেব পণ্ডাদের সঙ্গে নিজের ভাইপো তথা দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সামিল করেছেন মমতা।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সমাবেশ ছিল। সেখানে অবশ্যই উপস্থিত থাকার জন্যে অভিষেককে দলনেত্রী এ দিন সকালে নির্দেশ দেন বলে দলীয় এক সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিষেক সমাবেশে যোগ দেন এবং বক্তৃতাও করেন।
সমাবেশে দলনেত্রী কিন্তু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংগঠনের শীর্ষ নেতাকে নিয়ে কোনও রকম দলাদলিকে প্রশ্রয় দিতে তিনি নারাজ। দলের ছাত্র সংগঠনে কোনও ভাবে অন্তর্কলহ যাতে দানা বাঁধতে না পারে, সে জন্য কাউন্সেলিংয়ের নিদানও দিয়েছেন মমতা। প্রাক্তন এবং বর্তমানরা যাতে সংগঠনে সমন্বয় রেখে কাজ করেন, সে দিকে নজর দিতেই একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এ দিন সমাবেশ মঞ্চ থেকে মমতার নির্দেশ, ‘‘তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্রছাত্রীরা যাতে মানুষের মতো মানুষ যাতে হতে পারে এবং ভবিষ্যতে কোন দিকে গেলে চাকরির সুযোগ পাবে, তা কাউন্সেলিং করে এদের বোঝাবেন।’’ অর্থাৎ সংগঠনের অন্দরে ছাত্রনেতারা যাতে একে অপরের বিরুদ্ধে কোন্দলে জড়িয়ে না পড়েন এবং স্বচ্ছ দলীয় ভাবমূর্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে নামতে পারেন, তার হদিস দিতেই দলনেত্রী টিএমসিপি-কে ভাইপোর ছত্রচ্ছায়ায় রাখতে চান বলে তৃণমূল নেতাদের ধারণা। একই সঙ্গে দলের ছাত্রদের শৃঙ্খলাপরায়ণ হওয়ার কথা তৃণমূল নেত্রী এ দিনও বলেছেন। ছাত্র সংগঠনকে শৃঙ্খলার অনুশাসনে বাঁধতে এ দিনও মমতার পরামর্শ, ‘‘শৃঙ্খলা শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে। সুশৃঙ্খল কর্মী হিসেবে আচরণ করতে হবে। আন্দোলন মানে গুন্ডামি নয়।’’ ধর্মতলায় গত ২১ জুলাইয়ের সমাবেশেও তিনি ছাত্রদের সুশৃঙ্খল আচরণ করার এবং শিক্ষকদের প্রতি সম্মান দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পরামর্শ দেওয়ার দু’-এক দিনের মধ্যেই আসানসোল এবং রায়গঞ্জের শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের ছাত্রদের বিরুদ্ধে। তৃণমূল নেত্রী কোথাও কোথাও ঘটনার নিন্দা করলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেই ঘটনা ঘটেই চলেছে। একাধিক কলেজে ছাত্র সংঘর্ষে নাম জড়িয়েছে টিএমসিপির।
দলীয় ছাত্রদের বিশৃঙ্খল আচরণে অন্য নেতারাও বিব্রত। ছাত্র-সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকতে এ দিনের সমাবেশে ছাত্রদের পরামর্শ দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘শিক্ষায়তনকে পবিত্র জায়গায় পরিণত করুন।’’ টিএমসিপি সভাপতি অশোকও বলেন, ‘‘বিরোধী শক্তি যাতে শিক্ষাঙ্গনের শান্তি নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’’
এ দিনও মমতা নিজের দৃষ্টান্ত দিয়ে ছাত্রদের বলেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মান জানাতে হবে। এখনও পুরনো কোনও শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হলে মনে হয়, নিজের চেয়ারটা ছেড়ে দিই।’’ নেত্রীর নির্দেশ কতটা কার্যকর হয়, এখন সেটাই দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy