Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

নিজেদের বিয়োগ রেখেই যোগদিবসে কুলরক্ষা দিদির

নিজে থাকার প্রশ্নই নেই। তাঁর সরকারের মন্ত্রীরাও কেউ ছিলেন না। অথচ তাঁর প্রশাসন জেলায় জেলায় যোগশিবির আয়োজনে সহায়তার মনোভাব বজায় রাখল। এবং এই কৌশলেই নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্কপ্রসূত যোগ দিবসে যোগ দিয়েও দিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! বিধানসভা ভোট যখন দুয়ারে কড়া নাড়তে এগিয়ে আসছে, সেই সময়ে এমন কৌশলী অবস্থান না নিয়ে উপায়ই বা কী? বলছেন শাসক শিবিরের নেতারা।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:৫৩
Share: Save:

নিজে থাকার প্রশ্নই নেই। তাঁর সরকারের মন্ত্রীরাও কেউ ছিলেন না। অথচ তাঁর প্রশাসন জেলায় জেলায় যোগশিবির আয়োজনে সহায়তার মনোভাব বজায় রাখল। এবং এই কৌশলেই নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্কপ্রসূত যোগ দিবসে যোগ দিয়েও দিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! বিধানসভা ভোট যখন দুয়ারে কড়া নাড়তে এগিয়ে আসছে, সেই সময়ে এমন কৌশলী অবস্থান না নিয়ে উপায়ই বা কী? বলছেন শাসক শিবিরের নেতারা।

গোড়ার দিকে ছবিটা যদিও এমন ছিল না। কিন্তু সেখান থেকে রীতিমতো অঙ্ক কষেই পিছিয়ে আসা হয়েছে বলে তৃণমূল শিবিরের খবর। এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকারকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য না করার তাগিদ এবং অন্য দিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সংখ্যালঘু মহলে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা ঠেকানো— এই দুই লক্ষ্যের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে রবিবার খুব সাদামাঠা ভাবে দিনভর যা হয়েছে, তাতে কিছু বিভাগীয় আমলারা নিজেদের মতো করে যোগশিবিরে অংশ নিয়েছেন। আর সেই রাজ্যেরই মন্ত্রীরা ঘুরে বেড়িয়েছেন এমন ভাব করে যে, কই কিছু হওয়ার কথা ছিল না তো!

যোগ দিবস পালন করতে বলে প্রতিটি রাজ্যকেই চিঠি পাঠিয়েছিল মোদী সরকার। রাজ্য সরকারের তরফেও জেলাশাসকদের বার্তা পাঠিয়ে বলে দেওয়া হয়েছিল, জেলায় জেলায় যোগ দিবস পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু দ্রুত পট পরিবর্তন হয় দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা পাহা়ড় থেকে নেমে আসার পরে। তৃণমূল সূত্রের খবর, সাড়ম্বরে যোগ দিবস পালনের কর্মসূচিতে যোগ দিলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ওই সম্প্রদায়েরই কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে বার্তা এসেছিল শাসক দলের নেতৃত্বের কাছে। গত জুম্মার নমাজে বেশ কিছু জায়গায় যোগ দিবস নিয়ে মাতামাতির বিরুদ্ধে সতর্ক-বার্তা জারি করা হয়েছিল বলেও খবর পান তাঁরা। সেই শুক্রবারই যোগ দিবস নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল রাজ্যের যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও আয়ুষ দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু পত্রপাঠ সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়! আর তার পর থেকেই দুই মন্ত্রী যোগ-সূত্র নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে ফেলেছেন! মুখ খুলছেন না তৃণমূলের অন্য কোনও নেতাও। দলের তরফে বর্ধমানের ভারপ্রাপ্ত নেতা হিসাবে এ দিনই আসানসোল গিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ। যোগদিবসের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতেই তিনি রাজি হননি। আর এক মন্ত্রী আশিসবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হয়েছে, তাঁর শরীরটা ভাল নেই। তাই যোগ নিয়ে তাঁরও কোনও বক্তব্য নেই। প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাও বলেছেন, ‘‘এটা নিয়ে কিছু বলারই নেই তো বলব কী!’’

তৃণমূল শিবির থেকেই ব্যাখ্যা মিলছে, প্রথমে যোগ দিবস নিয়ে বিশেষ আপত্তির কিছু দেখেননি মমতা। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যা করলে শরীর ও মন ভাল থাকে, এই ভাবেই দেখা হচ্ছিল গোটা পরিকল্পনাকে। কিন্তু মোদী সরকারের সঙ্গে সু-‘যোগে’র দৌলতেই মমতার সরকারও সাড়ম্বর ওই কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে, এই প্রচার শুরু হতেই ভিন্ন ভাবনা শুরু হয়। যোগ দিবসের সঙ্গে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নিয়ে তখন চিন্তিত হয়ে পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার সঙ্গেই যোগ হয় রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু সংখ্যালঘু ব্যক্তিত্বের হুঁশিয়ারি। এবং সে সবের জেরে দার্জিলিং থেকে শহরে ফিরেই সপারিষদ নিজেকে যোগ দিবসের কর্মসূচি থেকে বিয়োগ করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে শাসক দলের এক প্রথম সারির নেতা বলছেন, ‘‘সুষমা স্বরাজ প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে নীরব থেকে যে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, যোগদিবসকে একেবারে নস্যাৎ করে দিলে তাতে আবার জল ঢালা হয়ে যেত! তাই যোগ দিবসের বিরোধিতা করে আমাদের তরফে একটা কথাও বলা হয়নি।’’ যাতে শ্যাম ও কুল, দুই-ই রাখা যায়! প্রশাসনের তরফেও তাই যোগ শিবিরে সহযোগিতাই করা হয়েছে। আমলারা নিজেদের উদ্যোগে কোথাও তেমন কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে তাঁদের বাধাও দেওয়া হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে শাসক দল এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সুকৌশলে দূরত্ব বজায় রেখে গিয়েছে। রাজনৈতিক তাগিদ এতটাই প্রখর যে, ব্যক্তিগত যোগাযোগকেও আপাতত দূরে সরাতে হয়েছে তৃণমূলের কোনও কোনও নেতাকে। এক শীর্ষ নেতার সহধর্মিণী যেমন এক জগদ্বিখ্যাত গুরুর অধীনে জীবনচর্যা সংক্রান্ত স্কুলের সঙ্গে যুক্ত। সেই গুরু বিদেশ থেকে ওই নেতাকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন যোগ দিবস সফল করার জন্য। সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি বার্তাপ্রাপকের পক্ষে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘যোগদিবস তো এক দিন! রাজনীতিটা ১২ মাসের!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE