ফাইল চিত্র।
নন্দীগ্রাম ভোট মামলার শুনানি বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে অন্য কোনও বিচারপতির এজলাসে স্থানান্তরের জন্য কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু। এ বিষয়ে তিনি লিখিত আবেদনপত্রও জমা দিয়েছেন। ওই আবেদনপত্রে জানানো হয়েছে, মামলাকারী তৃণমূলনেত্রী আদালতের উপরে শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণে তিনি বিচারপতি চন্দের এজলাসে নিরপেক্ষ বিচার পাবেন না বলে মনে করছেন। সেই কারণগুলিও সবিস্তার জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। তবে এ ব্যাপারে হাই কোর্টের তরফে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই বিচারপতি চন্দের এজলাসে ওই মামলার শুনানি ছিল। এ দিন তেমন কোনও শুনানি হয়নি। দু’পক্ষকে হলফনামা আদানপ্রদান করতে বলা হয়েছে। ২৪ জুন মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করেছেন বিচারপতি চন্দ। এ দিনই আরও চারটি কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে তৃণমূল। সেগুলি হল— বনগাঁ (দক্ষিণ), হুগলির গোঘাট, পুরুলিয়ার বলরামপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না। এর মধ্যে বলরামপুরে তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো ৪২৩ ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
সঞ্জয়বাবু মামলা স্থানান্তরের আর্জির ওই চিঠিতে তাঁর মক্কেলের হয়ে জানিয়েছেন, মামলাটি নন্দীগ্রামের বিজয়ী প্রার্থী তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এবং বিচারপতি হওয়ার আগে আইনজীবী হিসেবে কৌশিক চন্দের সঙ্গে বিজেপির সক্রিয় যোগাযোগ ছিল। চিঠিতে এ-ও লেখা হয়েছে, যেহেতু এই মামলাটির সঙ্গে দু’টি রাজনৈতিক দলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তাই বিচারপতির ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে মামলাকারীর প্রশ্ন রয়েছে এবং তাঁর ধারণা, মামলার রায় বিবাদী পক্ষের দিকে যেতে পারে।
রাজনৈতিক ‘নিরপেক্ষতার’ প্রশ্নের পাশাপাশি চিঠিতে বলা হয়েছে, বিচারপতি চন্দ এখনও স্থায়ী হননি। এপ্রিলে মাসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে একটি চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিল। তাতে বিচারপতি চন্দকে স্থায়ীকরণের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতি চন্দের স্থায়ী পদলাভের বিরুদ্ধে মতামত দেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, সেই আপত্তির বিষয়টি হয়তো বিচারপতির চন্দের কাছে পৌঁছেছে এবং সেই কারণেই মামলাকারীর আশঙ্কা, বিচারপতির কাছ থেকে ‘নিরপেক্ষ’ বিচার না-ও পাওয়া যেতে পারে। এই কারণ দেখিয়ে মমতার তরফে দাবি, জনমানসে বিচার ব্যবস্থার উপরে আস্থা অটুট রাখতে নন্দীগ্রাম ভোট মামলা অন্য বিচারপতির এজলাসে স্থানান্তর করা হোক।
নন্দীগ্রাম মামলা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা ছিলই। তার উপরে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে বিচারপতি বদলের আর্জি তাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তৃণমূলের একাধিক নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ দিন বিচারপতি হওয়ার আগে কৌশিক চন্দের সঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক যোগসূত্রের নানা প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ‘নিরপেক্ষতার’ প্রশ্ন তুলেছেন। বিচারপতির বিজেপি ‘ঘনিষ্ঠতার’ প্রমাণ হিসেবে দু-একটি ছবিও তৃণমূল নেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন (যদিও সেই ছবির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি)।
তবে আইনজীবী মহলের বক্তব্য, আইনজীবী হিসেবে কেউ কোনও দলের হয়ে মামলা লড়তেই পারেন। কৌশিক চন্দ বিচারপতি হওয়ার আগে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলও ছিলেন। সরকারি কৌঁসুলি পদ থেকে উচ্চ আদালতে বিচারপতি হওয়ার উদাহরণ আগেও রয়েছে। তাই কোনও আইনজীবী রাজনৈতিক দলের মামলা লড়লে পরবর্তী কালে বিচারপতি পদে বসে নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করবেন না, এমন নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তবে এটাও ঠিক যে, মামলাকারী কোনও নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে এজলাস বদলের আর্জিও জানাতে পারেন। সেটা তাঁর আইনি অধিকার। অনেক ক্ষেত্রে কোনও বিচারপতি নিজে মনে করলেও মামলার শুনানি থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন।
বস্তুত, এ দিনই সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গের ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলার শুনানি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনে সিবিআই তদন্ত বা সিট তৈরি করে তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন নিহতের দাদা। এ দিন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য আসতেই তিনি বলেন, “এই মামলা শুনতে আমার একটু অসুবিধা রয়েছে।” বিচারপতি মামলা না-শোনার কোনও নির্দিষ্ট কারণ না-জানালেও আইনজীবীদের অনেকের ধারণা, বিচারপতি পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক। সেই কারণেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তিনি মামলা শুনতে চাননি। আত্মীয় বা পরিজনের কেউ আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ালে সংশ্লিষ্ট মামলাটি ভিন্ন এজলাসে স্থানান্তর করার উদাহরণও হাই কোর্টে বা সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে বলে আইনজীবীদের অনেকে জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy