Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
Sanjay Roy Punishment

শুধু সঞ্জয় নয়, পুলিশ এবং আরজি কর হাসপাতালের বিরুদ্ধেও লিখিত পর্যবেক্ষণ রয়েছে বিচারক অনির্বাণের

রায়ের নির্দেশনামায় বিচারক দাস জানিয়েছেন, ঘটনার এফআইআর রুজু করার সময়েই পুলিশের দিক থেকে বেশ কিছু খামতি থেকে গিয়েছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন টালা থানার এসআই সুব্রত চট্টোপাধ্যায়।

(বাঁ দিকে) সঞ্জয় রায় এবং বিচারক অনির্বাণ দাস (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সঞ্জয় রায় এবং বিচারক অনির্বাণ দাস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:০০
Share: Save:

আরজি করে মহিলা চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়কে আজীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। তবে শুধু সঞ্জয়ের শাস্তিঘোষণাই নয়, আরজি কর-কাণ্ডে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়েও বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ রায়ের নির্দেশনামায় লিপিবদ্ধ করেছেন বিচারক অনির্বাণ দাস। পুলিশি তদন্তে কোথায় কোথায় খামতি থেকে গিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় কোথায় গাফিলতি রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেছেন বিচারক।

রায়ের নির্দেশনামায় বিচারক দাস জানিয়েছেন, ঘটনার এফআইআর রুজু করার সময়েই পুলিশের দিক থেকে বেশ কিছু খামতি থেকে গিয়েছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন টালা থানার এসআই সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। লালবাজারের তৎকালীন উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের অতিরিক্ত ওসি রূপালী মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন বিচারক। সমালোচনা করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকারও। মহিলা চিকিৎসককে যৌন হেনস্থা এবং তাঁকে খুন করা হয়েছে, দেহ উদ্ধারের পর এমন মত উঠে আসা সত্ত্বেও কেন হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ দেহ মর্গে পাঠানোর কথা বলেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিষয়টি কেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক।

সময়ের ‘কারচুপি’

বিচারক জানিয়েছেন, তথ্যপ্রমাণ বলছে, ঘটনার দিন অর্থাৎ, গত বছর ৯ অগস্ট এসআই সুব্রত কাজে যোগ দিয়েছিলেন দুপুর ৩টেয়। এর পরেই এসআই চিন্ময় বিশ্বাসের ফোন আসে তাঁর কাছে। এসআই চিন্ময় তাঁকে আরজি করের ঘটনার কথা জানান। এর পরেই তিনি আরজি কর হাসপাতালে যান। পরে রাতে টালা থানায় ফিরে এসে তিনি জানতে পারেন, নির্যাতিতার বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার পরেই এফআইআর রুজু হয়। তখন রাত ১১টা ৪৫। কিন্তু সেই নথিতে সময় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল সকাল ১০টা ১০ মিনিট। যখন তিনি নিজে থানাতেই উপস্থিত ছিলেন না। এসআই নিজেই যে সে কথা জানিয়েছিলেন, তা-ও রায়ের নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছেন বিচারক। এসআই-এর এমন কাজকে ‘অবৈধ’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। নির্দেশনামায় লেখা হয়েছে, ‘‘কাঠগ়়ড়ায় দাঁড়িয়ে যে ভাবে নিজের অবৈধ কাজকর্মের কথা উল্লেখ করেছিলেন এসআই, তা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়।’’ অভিযোগ দায়েরের জন্য কেন নির্যাতিতার পরিবারকে ৯ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক।

সঞ্জয়ের ফোন

বিচারক জানিয়েছেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ৯ অগস্ট অভিযুক্তের ফোন নিয়ে টালা থানায় রেখে দেওয়া হয়েছিল। লালবাজারের তৎকালীন উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের অতিরিক্ত ওসি রূপালী সেই কাজটি করেছিলেন। কিন্তু তিনি কেন সেই কাজটি করেছিলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক। তিনি জানিয়েছেন, তথ্যপ্রমাণ থেকে এটা প্রমাণিত হয়নি যে, ফোনে কোনও কারসাজি করা হয়েছিল। তবে রূপালী যে যুক্তি দিয়েছিলেন, তা খুবই দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক। নির্দেশনামায় লেখা হয়েছে, রূপালী জানিয়েছিলেন, মোবাইল ফোনটি অভিযুক্তকে ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে গ্রেফতারির সময় বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল সেটি। কলকাতা পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করার পরেও কেন সেই কাজ করেছিলেন রূপালী, তা তাঁর বোধগম্য হয়নি বলেই জানিয়েছেন বিচারক।

সন্দীপদের ভূমিকায় প্রশ্ন

বিচারক জানিয়েছেন, দেহ উদ্ধারের পর সিনিয়র চিকিৎসক সুমিত রায় তপাদারই প্রথম ব্যক্তি, যিনি মনে করেছিলেন, মহিলা চিকিৎসককে যৌন হেনস্থা এবং তাঁকে খুন করা হয়েছে। তিনিই এক নার্সকে পুলিশে খবর দেওয়ার জন্য বলেছিলেন, যাতে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলা হয়। এর পরেই তিনি বিষয়টি হাসপাতালের বক্ষরোগ বিভাগের প্রধানকে জানান। বক্ষরোগ বিভাগের প্রধানই সুমিতকে বলেছিলেন হাসপাতালের তৎকালীন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ এবং অধ্যক্ষ সন্দীপকে বিষয়টি জানাতে। সেই মতো সুমিত তাঁদের ফোন করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা ফোন তোলেননি। পরে সন্দীপ তাঁকে ফোন করেন। সন্দীপই সেই সময় দেহ মর্গের পাঠানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু সন্দীপের সেই নির্দেশ তিনি পালন করেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন সেই সময় পুলিশকে বিষয়টি জানাননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক। নির্দেশনামায় লেখা হয়েছে, ‘‘এটা বাস্তব যে ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়। কিন্তু চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও ওই মৃত্যুকে কেন অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবে বিবেচনা করে পুলিশকে বিষয়টি জানালেন না তাঁরা?’’

‘আত্মহত্যার তত্ত্ব’

বিচারক জানিয়েছেন, সাক্ষীদের বয়ান অনুযায়ী, সেই দিন হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন সহকারী সুপার (নন মেডিক্যাল) সুচরিতা। তিনিই নির্যাতিতার পরিবারকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের মেয়ের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। নির্যাতিতার মা-বাবাকে শীঘ্রই আরজি কর হাসপাতালে আসার জন্য বলেছিলেন সুচরিতা। তথ্যপ্রমাণ থেকে দেখা গিয়েছে, ওই কথোপকথনের পর নির্যাতিতার বাবা ফের সুচরিতাকে ফোন করেছিলেন। সেই সময় সুচরিতা তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সুমিতের সামনেই সেই ঘটনা ঘটেছিল। সুমিত তার প্রতিবাদও করেছিলেন। এমনকি সুচরিতাকে প্রশ্নও করেছিলেন, কেন আত্মহত্যার কথা বললেন পরিবারকে?

সন্দীপের বৈঠক

বিচারক জানিয়েছেন, মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর একটি বৈঠক ডেকেছিলেন সন্দীপ। সেই বৈঠকে সুমিতকেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বৈঠকে ঢুকতে পারেননি। ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সুমিত জানিয়েছেন, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে মোট সাত জন ছিলেন বৈঠকে। সেখানে প্রত্যেকের বয়ান নথিবদ্ধ হয়েছিল। পুলিশ বা সিবিআই কেন সেই রিপোর্ট সংগ্রহ করল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারক। বিচারক জানিয়েছেন, বিচারপর্বের সময়েও তা আদালতে জমা করা হয়নি। সেই রিপোর্ট কি মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত? বিচারক অবশ্য মনে করেন, এতে মামলার বিচারে কোনও ক্ষতি হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Sanjay Roy RG Kar Case Verdict RG Kar Medical College and Hospital Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy