ছবি: সংগৃহীত।
প্রথমে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সচিব চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা সচিবকে। তার পরে ইউজিসি-কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বাংলার উপাচার্যেরা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষ এবং চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ভাবে নেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের চূড়ান্ত বর্ষ ও চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। অতিমারির আবহে কী ভাবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব, সেই প্রশ্ন জোরদার হয়েছে সব স্তরে। শিক্ষা যে-হেতু যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়, তাই রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই দিল্লি কী ভাবে বাধ্যতামূলক ভাবে ওই সব পরীক্ষা নিতে বলল, কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা সচিব অমিত খারে-কে লেখা চিঠিতে সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সচিব মণীশ জৈন। তার পরে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যেরা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, রাজ্য সরকারের ‘অ্যাডভাইজ়রি’ বা পরামর্শ-নির্দেশিকা অনুযায়ী তাঁরা যে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করছেন, সেটা দিল্লিকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
যাঁরা দেশের ভবিষ্যৎ, করোনার সর্বগ্রাসী প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পরীক্ষার নামে সেই ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভাবেই বিপন্ন করা সমীচীন নয় বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত। তাদের বক্তব্য, করোনার দাপট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অফলাইন বা অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। অফলাইনে পরীক্ষা দেওয়া যাবে না, কারণ, পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে ছাত্রছাত্রীদের সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। অনলাইনে পরীক্ষা সম্ভব নয়, কারণ, প্রত্যন্ত এলাকার সর্বত্র ইন্টারনেটের সুবিধা নেই এবং স্মার্টফোন বা আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম নেই অনেক গরিব পড়ুয়ার।
শনিবার প্রধানমন্ত্রীকে দু’পাতার চিঠিতে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন: ২৯ এপ্রিল ইউজিসি-র পাঠানো গাইডলাইনে লেখা ছিল, অ্যাডভাইজ়রি বা পরামর্শ দেওয়ার জন্যই ওই নির্দেশিকা। কিন্তু ৬ জুলাই ইউজিসি-র নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চূড়ান্ত বর্ষ ও চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ভাবে নিতেই হবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, বাধ্যতামূলক পরীক্ষার নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করা হোক, বহাল রাখা হোক ইউজিসি-র প্রথম নির্দেশিকা।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন: করোনা আবহে উপাচার্য ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করেই রাজ্য মূল্যায়নের বিষয়ে ২৭ জুন বঙ্গের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ-নির্দেশিকা দিয়েছে। ওই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাতে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং আগের বর্ষ বা সিমেস্টারের সর্বোত্তম ফল থেকে মূল্যায়ন করা হবে। কোনও পড়ুয়া তাতে সন্তুষ্ট না-হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে পরীক্ষা দিতে পারবেন তিনি। রাজ্যের অ্যাডভাইজ়রি অনুযায়ী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই মূল্যায়নের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। এখন তা সম্পূর্ণ বাতিল করা অসম্ভব। পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরাও এই ধরনের মূল্যায়ন নিয়ে খুশি। ‘কিন্তু এখন ইউজিসি-র নতুন নির্দেশিকা নিয়ে শত শত পড়ুয়া ও শিক্ষক ই-মেলে আমার কাছে পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাই বাধ্য হয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করছি,’ প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক ভাবে পরীক্ষা নিতে বলে ইউজিসি নতুন যে-গাইডলাইন দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশের ছাত্রছাত্রীদের উপরে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই বিষয়টি নিয়ে অনেক রাজ্য সরকারই যে দিল্লির সঙ্গে একমত নয় এবং বাধ্যতামূলক পরীক্ষার নির্দেশ যে তাদের চিন্তায় ফেলেছে, ইতিমধ্যে তারা সেটা কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছে।
‘আমি তাই অনুরোধ করছি, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে ইউজিসি-র আগের (২৯ এপ্রিল পাঠানো) নির্দেশ বহাল রাখা হোক। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা রূপায়ণ করা সহজ হবে। এবং তাতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে,’ প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
চিঠির একেবারে শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন: ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকেরা দেশ এবং পৃথিবীর সম্পদ। তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য অবশ্যই যত্ন নিতে হবে আমাদের। তাঁদের বিপর্যস্ত করা উচিত নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy