মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের রাজনীতির তরজায় সামনে চলে এল ‘বহিরাগত’ বিতর্ক।
আলিপুরদুয়ারে বৃহস্পতিবার এক জনসভার মঞ্চ থেকে জনতার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে, ‘আউটসাইডার’দের (বহিরাগত) নিয়ে এসে আপনাদের মাথাটা খাচ্ছে। মানুষের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাইছে।’’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে, বিশেষ করে যে দিন নদিয়ার বেথুয়াডহরিতে জনসভা করতে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা, সে দিন এমন মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
নড্ডার সভামঞ্চ থেকেই এ দিন অবশ্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, কে বহিরাগত? তিনি বলেন, ‘‘উনি (নড্ডা) বাংলার জামাইবাবু। দু’দিন আগেও তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হল, বাংলায় কথা বলে এলাম। উনি আপনার (মুখ্যমন্ত্রী) ভাইপোর বউয়ের চেয়ে অনেক বেশি বাঙালি!’’
নড্ডাও এ দিন বাংলা দু’-চারটি কথা বলেন। বক্তৃতার গোড়ায় তিনি মমতার প্রতি বার্তা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘এত রাগ করবেন না দিদি, স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়।’’ একে বারে শেষে গিয়ে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে, ‘জয় ভারত, জয় বাংলা’ ধ্বনি।
আলিপুরদুয়ারে সভা থেকে মমতা এ দিন যথারীতি কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য থেকে কর নিয়ে যায়, কিন্তু রাজ্যকে প্রকল্পের জন্য টাকা দেয় না। তাঁর অভিযোগ, উল্টে কেন্দ্রীয় দল বিভিন্ন কারণে এসে তদন্ত চালায়। এ সবের মধ্যেই তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ‘বহিরাগত’ তত্ত্বও। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ভোটের এক বছর আগে থেকে এলাকায় এলাকায় পাঠাবে। দু’টো বই দান করে বলবে, ‘দিল কে?’, আমি আবার কে।’’ তার পরেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তুমি? কোন তুমি? আমি তো চিনি ভূমি।’’ তাঁর কথায়, বাইরে থেকে লোকেরা এসে এখানকার মানুষের মাথা খাচ্ছে, ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও মনে করি, মানুষের কাজ নিয়ে, ক্ষুধা নিয়ে, মানুষের দুঃখ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিতে গিয়ে বেথুয়াডহরির সভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘‘আপনি যদি আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতিকে বহিরাগত বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহিরাগত বলেন, তা হলে আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই— আপনার প্রাণের প্রিয় ভাইপোর বউ কোথা থেকে এসেছেন? তিনি বাঙালি, আর ভারতবর্ষের অন্য জায়গা থেকে আসা আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতি বহিরাগত!’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আগের নির্বাচনের সময় যাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দল হইচই করেছিল, তিনি তো পরে আবার মুখ্যমন্ত্রীর ‘অন্তর্গত’ হয়ে গিয়েছেন! অর্জুন সিংহ, নামটা মনে আছে?’’ তাঁর কথায়, ‘‘দেশের মধ্যে যে কেউ, যেখানে গিয়ে সভা করতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো মেঘালয়ে সভা করে এলেন! আসল প্রশ্নটা নীতিগত অবস্থানের।’’
কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘১০০ দিনে তুমি যাদের দিয়ে কাজ করিয়েছ, টাকা দেবে না? রাজ্যের টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছো। আমার ঘরের মাছের তেলে মাছ ভাজা! রাজ্য সরকার কর সংগ্রহ করে না। কর সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তার থেকে আমরা ৬০% টাকা পাই। সেই টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।’’ এই প্রসঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘‘আমি দেখতে চাই, ক’দিন এটা চলে। আমি ভিক্ষে চাইব না। আমি ভিক্ষে করার লোক নই। ভিক্ষে করলে মানুষের কাছে চাইব। কিন্তু ওদের কাছে নয়।’’ তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, ‘‘দিয়ো না তুমি, সব বন্ধ করে দাও, কিন্তু নিও না। আগামী দিন যাতে না নিতে পারো, তার ব্যবস্থার জন্যও আমরা তৈরি থাকব!’’
কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবীদের একাংশের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট করা নিয়ে দিল্লির বার কাউন্সিল থেকে প্রতিনিধিদল এসেছে। সেই প্রসঙ্গ তুলেও মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘কলকাতায় হাই কোর্টে কোনও সমস্যা হলে প্রধান বিচারপতি দেখবেন। আমরা আছি, আমাদের বার কাউন্সিল দেখবে। দিল্লি থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy