প্রতীকী ছবি
বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, পুজোর পর এক দিন অন্তর স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন সেই সাংবাদিক বৈঠকে। মমতার ঘোষণাকে সদর্থকভাবেই দেখছে শিক্ষামহল। সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুল, হিন্দু স্কুলের শিক্ষকরা যেমন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন, তেমনই নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, পবিত্র সরকার, সুরঞ্জন দাস কিংবা শিউলি সরকারের মতো শিক্ষাবিদও মমতার পাশেই দাঁড়াচ্ছেন।
স্কুল শিক্ষক থেকে শিক্ষাবিদ— প্রত্যেকেই মনে করছেন করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে পড়ুয়াদের। গত দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ। মুছে যাচ্ছে স্কুল জীবনের এক একটা দিন। চার দেওয়ালে বন্দি ছোট-ছোট মনগুলো তাই খারাপ থাকছে বেশির ভাগ সময়ই। শিক্ষাবিদ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস মুখ্যমন্ত্রীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে পড়ুয়াদের উপকারই হবে। একা একা নয়, একসঙ্গে বেড়ে ওঠে শিশুরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানসিক বিকাশের সেই পরিবেশ এবং সুযোগ দেয়। কোভিড-বিধি মেনে স্কুলে গেলে পড়ুয়াদের মানসিক চাপও কমবে।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপাতত আগামী কয়েক বছর হয়তো কোভিড নিয়েই চলতে হবে আমাদের। দ্রুত কোভিড-বিধিকে রপ্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে বলে মনে করেন একাধিক চিকিৎসকও। অগস্টে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, আমজনতার অসাবধানতা এবং ভাইরাসের চরিত্র বদলে যাওয়ায় ঢেউ এর পর ঢেউ তো আসতেই পারে, তা বলে কি পড়ুয়াদের শৈশব নষ্ট হয়ে যাবে?
শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলছেন, ‘‘একটা সময় তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতেই হবে। দেরি করতে করতে আর কবে খোলা হবে! স্কুল খোলা এবার খুব জরুরি।’’ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের গলাতেও স্কুল খোলার কাতর আবেদনই ধরা পড়ল। স্কুল খেলার জন্য চিন্তা-ভাবনাকে স্বাগত জানালেন তিনি। স্কুল বন্ধ থাকার জন্য যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। এবার কোভিড-বিধি মেনে কী ভাবে স্কুল চালু করা যায়, তার পরিকল্পনা শুরু করার পক্ষে মত তাঁর। বলছেন, ‘‘স্কুলশিক্ষার কোনও বিকল্প নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুঁথিগত শিক্ষার বাইরেও সামাজিকতা, মানসিকতা গড়ার ক্লাস হয়। অনলাইন শিক্ষা কখওনই স্কুলের বিকল্প হতে পারে না।’’
লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষ শিউলি সরকারও মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা খোলার পক্ষে। ক্লাসরুমের দরজা খুলে দেওয়া হোক। গতবার যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের মুখগুলো দেখতেই পেলাম না। অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়ারা কতটা মনোযোগ দেয়, বা তারা আমাদের পড়ানো কতটা ধরতে পারে, তা বোঝা যায় না। অনলাইন ক্লাস কখনও প্রকৃত ক্লাসের বিকল্প হতে পারে না।’’
স্কুল খোলার ভাবনাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে স্কুলগুলি অবশ্য প্রশাসনের পরবর্তী ঘোষণা কী হয়, তার অপেক্ষায় রয়েছে। হিন্দু স্কুলের শিক্ষক গৌতম সিংহ অবশ্য মনে করছেন, পুজোর আগে স্কুল চালু হয়ে গেলেও অসুবিধা নেই। এতে পড়ুয়ারা যেমন পুজোর আনন্দে গল্প করতে পারবে, তেমনই স্কুল কর্তৃপক্ষও কোভিড পরিস্থিতির সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা সেরে নিতে পারবেন। যদি কোনও নিয়মের বদল করতে হয়, তাহলে তা পুজোর ছুটিতেই করে নেওয়া যাবে।
শিক্ষক থেকে শিক্ষাবিদ— প্রত্যেকেই মনে করছেন অনলাইন ক্লাস থেকে এবার পড়ুয়াদের মুক্তি দেওয়া উচিত। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি কিংবা পবিত্র সরকার, সুরঞ্জন দাস কিংবা শিউলি সরকারের মতে অনলাইন ক্লাস স্কুলের বিকল্প হতে পারে না। তাঁরা চান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার করে দ্রুত পড়ুয়াদের স্কুল জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy