মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে জয়ের দিনই দলকে ‘সমাজসেবা’র বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেউ অন্যথা করলে তৃণমূল কংগ্রেস তার দায়িত্ব নেবে না।
লোকসভা ভোটের থেকেও বিধানসভার চারটি আসনের উপনির্বাচনে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। হাতে থাকা মানিকতলা আসনে ব্যবধান বেড়েছে তা-ই নয়, হাতছাড়া বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ এবং রায়গঞ্জেও বিপুল ভোটে জিতেছে রাজ্যের শাসক দল। এই অবস্থায় দলের নেতা-কর্মীদের করণীয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মুম্বই থেকে ফিরে কলকাতা বিমানবন্দরে শনিবার তিনি বলেছেন, ‘‘চারটে আসনের তিনটে বিজেপির ছিল। এ বার চারটেই আমরা পেয়েছি। নতুন করে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়ল। যিনি তা থেকে বিচ্যুত হবেন, তিনি নিজেরটা বুঝে নেবেন!’’
আড়িয়াদহ, চোপড়ার মতো রাজ্যের একাধিক জায়গায় শাসক-ঘনিষ্ঠদের যে দৌরাত্ম্য সামনে এসেছে, সেই সময়ে এই জয় নিয়ে শাসকের আগ্রহ একটু বেশিই। পাশাপাশি, জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মদতে দখলদারি, বেআইনি নির্মাণ ইত্যাদি নিয়েও রাজ্য প্রশাসনে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় তৃণমূল নেত্রীর এই মনোভাব ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। দলের সেই ‘দায়বদ্ধতা’ নির্দিষ্ট করে মমতা আরও বলেন, ‘‘সমাজসংস্কার, সমাজের জাগরণ এবং বাংলার অস্তিত্ব রক্ষায় বাংলার মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় শান্তি সম্প্রীতি সংহতি সব কিছু নিয়েই আগামীতে আমরা কাজ করব।’’ লোকসভা ভোটের পরে বিধানসভা উপনির্বাচনে দলের বিপুল জয় আগামী ২১শে জুলাই উদযাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলের প্রতি সতর্ক-বার্তা দিলেও তার বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘নিজের দায়িত্বে করবে মানে তুমি যা খুশি করো, পুলিশ তোমায় ধরবে না! চার দিকে যা খুশি হচ্ছে, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকার নীরব! এটা সরকার চলছে?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সতর্ক-বার্তা তো মুখ্যমন্ত্রী আগেও দিয়েছেন। তার পরেও কখনও বুলেট, কখনও জেসিবি, কোথাও জায়ান্ট— একের পর এক বেরিয়েই চলেছে। নানা মাপের বোতলে বিভিন্ন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ভরা আছে! যে পুলিশ-প্রশাসন সরাসরি শাসক দলের হয়ে ভোটে কাজ করে, তারা নিরপেক্ষ ভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, এতটা আশা করা যায়?’’ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করছেন, ভাল কথা। কিন্তু তাতে কাজ হবে? ওঁর দলের সবাই সমঝে চলবে? অপকর্মের বহর দেখে সংশয় থাকেই!’’
শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বৃহস্পতিবার মুম্বই গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অবসরে মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। কলকাতায় ফিরে এ দিন বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পরে উপনির্বাচনের এই ফলের রাজনৈতিক গুরুত্বও আছে।’’ সেই প্রসঙ্গেই মমতা বিরোধীদেরও এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক চক্রান্ত হয়েছে। মানিকতলায় গত দু’বছর ভোট করতে দেওয়া হয়নি। সুপ্তির (তৃণমূল প্রার্থী) ভাল জয় হয়েছে। রায়গঞ্জে লোকসভা ভোটে বিজেপি টাকা দিয়ে কংগ্রেস আর সিপিএমকে রেখে (তৃণমূলকে) হারিয়ে দিয়েছিল। মানুষই জিতিয়েছে। বাগদায় তরুণ প্রার্থী মধুপর্ণা খুব ভাল লড়াই করেছে। রানাঘাটে মুকুটমণিও তা-ই।’’
এই সূত্রেই এ দিন দেশের অন্যান্য উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের উল্লেখ করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘লোকসভা ভোটের পরে ফের এজেন্সি-রাজ শুরু হয়েছে। মানুষ রুখে দিচ্ছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy