Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

শাসক শিবিরে উত্থান প্রবীণ-নবীনের, ভোটের আগের রাজনীতিতে ‘শস্ত্র’ সৌগত-ব্রাত্য

সৌগত দমদমের সাংসদ। সেই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ব্রাত্যর বিধানসভা কেন্দ্র দমদম। দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কও চমৎকার।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৪২
Share: Save:

তৃণমূলের এক হিতৈষী অধুনা চমৎকৃত! কারণ, তিনি মনে করছেন, সৌগত রায়ের মতো রাজনীতিকের পুনরুত্থান হয়েছে। যেমন তিনি মনে করছেন, ব্রাত্য বসুও জেগে উঠেছেন। তাঁরা নিয়ত সাংবাদিক বৈঠক করে এবং বিবৃতি দিয়ে প্রমাণ করছেন, বিরোধীদের মোকাবিলায় রাজনীতিক হিসাবে তাঁরা সামনের সারিতেই রয়েছেন। তাঁদের শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’। তাঁদের কথা মানতে গেলে বলতে হয়, বিধানসভা ভোটের আগে চোখে পড়ার মতো উত্থান হয়েছে সৌগত-ব্রাত্যের।

এটা একেবারেই কাকতালীয় যে, সৌগত দমদমের সাংসদ। সেই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ব্রাত্যর বিধানসভা কেন্দ্র দমদম। দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কও চমৎকার। ইতিহাসভিত্তিক মতামত, বাংলা এবং বাঙালি নিয়ে বক্তব্য প্রকাশে যেমন ব্রাত্যর উত্থান ঘটেছে, তেমনই বিবিধ বিষয়ে দলের ‘মুখপাত্র’ হিসাবে পুনরুত্থান হয়েছে সৌগতর। এবং সৌগতর পারফরম্যান্স নিয়ে তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশ যারপরনাই সন্তুষ্ট। ঘটনাচক্রে, সৌগত তৃণমূলের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্রের তালিকাভুক্ত নন। কিন্তু তিনিই এখন গণমাধ্যমের কাছে অন্যতম কাম্য। বিশেষত, নিউজ চ্যানেলে।

তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘সৌগত’দা যে বিষয়েই বলুন, চমৎকার বলছেন। আমরা অনেকেই এতটা গুছিয়ে বিষয়গুলো বলতে পারতাম না।’’ উদাহরণ হিসাবে তিনি টেনে আনছেন শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগ অধ্যায়ের কথা। ওই নেতার বক্তব্য, ‘‘যে ভাবে সৌগত’দা শুভেন্দু-অধ্যায় সামলেছেন, এক কথায় চমৎকার! প্রথমে শুভেন্দুকে আলোচনায় বসতে রাজি করানো। তার পর সেই আলোচনায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোরকে ডেকে আনা এবং সর্বোপরি, আলোচনার সারাৎসার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে দিয়ে শুভেন্দুর পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া— সবটাই খুব উচ্চ স্তরের রাজনৈতিক কৌশলের পরিচয়। যার ফলে জনমানসে এই বার্তাটা গিয়েছে যে, দল শুভেন্দুকে ধরে রাখতে সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছে। শুভেন্দু এটা কখনও বলতে পারবে না যে, ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে!’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, সৌগতই প্রথম মমতাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন শুভেন্দুর সঙ্গে দলের তরফে আলোচনার। মমতা সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেছিলেন। তার পরের ঘটনাপ্রবাহকে তৃণমূলের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ বলেই মনে করছে তৃণমূল। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দু থেকে কে ডি সিংহ— সমস্ত বিষয়ই সৌগত’দা যে দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।’’ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, যে কোনও সময়ে, যে কোনও বিষয়ে সৌগতকে ফোনে ধরলেই পাওয়া যাচ্ছে। একাধারে প্রাক্তন অধ্যাপক, প্রবীণ রাজনীতিক এবং সাংসদ হওয়ায় রাজ্যের পাশাপাশিই জাতীয় স্তরের বিষয়গুলি নিয়েও তিনি যথেষ্ট সাবলীল। এক রসিক সাংসদের কথায়, ‘‘সৌগত’দা যে ভাবে কাজ করছেন, সেটা কিন্তু সকলে পারবে না! অত স্মার্ট সকলে নয়।’’

সৌগত যেমন নিকষ্যি রাজনৈতিক বিষয়ে সাবলীল, ব্রাত্য তেমনই সাবলীল ঐতিহাসিক এবং বাংলা ও বাঙালি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে। সেই কারণে বাঙালি-অবাঙালি এবং বহিরাগত বিতর্কে তাঁকেই সামনে এগিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। ইতিহাস উদ্ধৃত করে ব্রাত্য এক দিকে যেমন রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়ার নাম ভুল উচ্চারণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধেছেন, তেমনই বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামের উচ্চারণ এবং সেলুলার জেলে বন্দি সাভারকরের ব্রিটিশদের কাছে মুচলেকা দেওয়ার কাহিনি বলে তথ্যনিষ্ঠ ভাবে বিজেপি এবং আরএসএস-কেও আক্রমণ করেছেন। ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ব্রাত্যকে সাহায্য করেছে মঞ্চে তাঁর অভিনয় এবং নির্দেশনার অভিজ্ঞতা। যে সমস্ত বিষয়ে বলার জন্য তাঁকে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি তাঁর মতো করে আর বিশেষ কেউ বলতেও পারবেন না। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, নিয়মিত তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের এই যুবা মন্ত্রী পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছেন। রবিবার টলিউডের লোকজন দলে যোগ দিতে গেলেও তাঁদের পাশে থাকছেন ব্রাত্যই। কয়েক মাস আগেও তাঁকে রাজনীতিক বা মুখপাত্র হিসাবে এমন ‘অগ্রণী এবং আগ্রাসী’ ভূমিকায় দেখা যায়নি। ঘটনাচক্রে, অধুনা ব্রাত্য নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে নাট্যব্যক্তিত্বের চেয়ে ‘রাজনীতিক’ শব্দটিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এমনিতে শাসক শিবিরে মুখপাত্রদের একটি নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। তা ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই তৃণমূলের তরফে গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রতিক্রিয়া বা বিবৃতি দেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার অধুনা প্রধান প্রশাসক ফিরহাদ (ববি) হাকিম। ঠান্ডা মাথা এবং শান্ত প্রকৃতির ফিরহাদ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে দলের বক্তব্য জানিয়ে থাকেন। বাছাই শব্দে প্রায়শই প্রতিক্রিয়া জানান রাজ্যের অপর মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। যখন-তখন ফোনে পাওয়া যায় প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষকে। গুছিয়ে কথা বলেন তিনিও। কিন্তু সৌগত এবং ব্রাত্য, যাকে বলে, টার্নিং উইকেটে ধ্রুপদী ব্যাটিং করছেন। পুরনো চাল ভোটের তপ্ত আঁচে ভাতে বাড়ছে দিনরাত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy