Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Mamata-Nayna-Sudip-Tapas

মমতার কাছাকাছিই সুদীপ, পাশে নতজানু নয়না, দূর থেকে ফের তৃণমূলের জ্বালা বাড়ালেন রায় তাপস

ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত চৌরঙ্গির বিধায়ক সুদীপ-জায়া নয়না। তৃণমূলের অনেকে বলছেন, এটা সুদীপ-বিক্ষুব্ধ বিধায়ক তাপস রায়কে ‘বার্তা’ নেত্রীর।

সুদীপ-নয়নাকে কাছে রেখে তাপসকে ‘বার্তা’ মমতার!

সুদীপ-নয়নাকে কাছে রেখে তাপসকে ‘বার্তা’ মমতার!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৯:০৪
Share: Save:

ভবানীপুর বিধানসভার বিজয়া সম্মিলনী। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের সেই অনুষ্ঠানে বক্তা উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনের একেবারে পাশেই নতজানু হয়ে বসে সুদীপ-জায়া তথা চৌরঙ্গির বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের প্রথম সারির বিধায়ক তাপস রায়ের সুদীপ-ক্ষোভের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ‘উত্তীর্ণ’-র সভায় এই দৃশ্য কি ‘প্রতীকী’ হয়ে রইল? না কি ‘বার্তা’ হয়ে?

রাজ্যপাল লা গণেশন অসুস্থ। তাঁকে দেখতে রাজভবনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণে বিজয়ী সম্মিলনীতে আসতে একটু দেরি হয়েছিল মমতার। তবে মঞ্চে এসেই যে ভাবে তিনি নয়নার সঙ্গে কথা বললেন, তাঁর গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহ দেখালেন বা তিনি আসার আগে সুদীপ বক্তৃতার সুযোগ পেলেন, তাতে তৃণমূলের অন্দরে অন্য আলোচনা। অনেকেই বলছেন, সুদীপ-নয়নাকে কাছে রেখে আসলে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, দল ওঁদের পাশে রয়েছে। অর্থাৎ, তিনি তাপসের পাশে নেই। বিজয়া সম্মিলনীতে ছিলেন না বরাহনগরের বিধায়ক তাপস। তবে মমতার আশেপাশে সুদীপ-নয়নার উপস্থিতিতেও ‘তাপস-তোপ’ থামেনি। বৃহস্পতিবার আবার মুখ খুলে তাপস জানান, তিনি যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন। ‘শব্দ ব্রহ্ম’ তিনি ফিরিয়ে নিতে পারবেন না!

ভবানীপুর কেন্দ্রের বিজয়া সম্মিলনী হলেও সেখানে দলের সাংসদ তথা গুরুত্বপূর্ণ নেতা সুদীপের উপস্থিতির মধ্যে নতুন কিছু দেখছেন না তৃণমূল নেতারা। তবে উত্তরের চৌরঙ্গির বিধায়ক নয়নার উপস্থিতি সকলের নজর কেড়েছে। বিশেষত, যে ভাবে সস্নেহে মমতা নয়নাকে কাছে টেনে নিয়েছেন। আরও এক জনের উপস্থিতিও ছিল নজরে পড়ার মতো। তিনি জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্ত। তিনিও দলের অন্দরে ‘সুদীপ-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত। তিনিও মঞ্চে জায়গা পেয়েছিলেন একেবার মমতার আশপাশেই।

দলের প্রথম সারির বিধায়ক তাপস রায়ের সুদীপ-ক্ষোভের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ‘উত্তীর্ণ’-র সভায় এই দৃশ্য কি ‘প্রতীকী’ হয়ে রইল? না কি ‘বার্তা’ হয়ে?

দলের প্রথম সারির বিধায়ক তাপস রায়ের সুদীপ-ক্ষোভের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ‘উত্তীর্ণ’-র সভায় এই দৃশ্য কি ‘প্রতীকী’ হয়ে রইল? না কি ‘বার্তা’ হয়ে?

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন তমোঘ্ন ঘোষ। তৃণমূলে থাকার সময় তমোঘ্ন সুদীপের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সেই তমোঘ্নর বাড়ির পুজোয় সুদীপের উপস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে প্রশ্ন তোলেন তাপস। তিনি ইঙ্গিত করেন, সুদীপের কথাতেই তমোঘ্নকে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি করা হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, ‘‘দলনেত্রীর (মমতা) ভাবমূর্তিকে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার পাশাপাশি বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন সুদীপ।’’

পাশাপাশিই তাপস বলেছিলেন, তমোঘ্ন ও তাঁর পিতা তপন— উভয়েই সুদীপের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’। প্রথমে চুপ ছিলেন সুদীপ। তবে বুধবার তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে লিখিত ভাবে এই প্রসঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে সুদীপ জানান, ‘হাতি চলে বাজার... কী একটা কথা আছে না? নো কমেন্টস।’ সঙ্গে একটি হাসির ‘ইমোজি’ও পাঠান উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি। এর পরেও নিজের বক্তব্যে অনড় থাকার কথা জানান তাপস। তাঁকে বোঝাতে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তাপসের বাড়িতে যান। কিন্তু তাপসকে আটকানো যায়নি। বৃহস্পতিবার তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই সখ্য, এই সম্পর্ক, যাওয়া-আসা, পুজো, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো শুরু হয়, দলের কর্মীরাও যদি ওঠাবসা শুরু করে, তবে দল কি সেটা ভাল চোখে দেখবে? সেই পরিস্থিতি কি আমরা সামাল দিতে পারব? দলীয় সহকর্মীদের যেন অসম্মান, অপমান করার চেষ্টা না হয়।’’ সুদীপের নাম না করলেও তাপস প্রশ্ন করেন, ‘‘অন্য কেউ এমনটা করলে তিনি কোন চোখে দেখতেন?’’ নিজের পুরনো বক্তব্যে অনড় থাকার কথা বুঝিয়ে তৃণমূলের প্রথম সারির বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘শব্দ ব্রহ্ম! সে কী করে ফেরত নেব? বলে দিয়েছি যা বলে দিয়েছি।’’

তৃণমূলের অনেকে মনে করছেন, সুদীপকে নিয়ে তাপস ব্যক্তিগত জ্বালা মেটাতেই এমন মন্তব্য করে চলেছেন। তবে তাতে যে তৃণমূলও জ্বালায়, তা-ও স্পষ্ট।

প্রসঙ্গত, সুদীপের বিরোধিতা করে তাপসের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় এবং বিধায়ক মদন মিত্র। তবে মমতা এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। ‘উত্তীর্ণ’য় উপস্থিত এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘দিদি মুখে কিছু বলেননি ঠিকই। কিন্তু তাঁর ভাবভঙ্গিতে সব স্পষ্ট। যে যা বোঝার, ঠিকই বুঝে নেবেন!।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Sudip Banerjee nayna bandyopadhyay Tapas Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy