শারদোৎসব উপলক্ষে প্রশাসনিক সমন্বয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: সুমন বল্লভ
অবশেষে দুর্গাপুজো নিয়ে নিজেদের অবস্থান কিছুটা জানাল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত বছর কোভিড প্রোটোকল মেনে যে-ভাবে পুজো হয়েছিল, এ বারেও সেই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, অতিমারির তৃতীয় ঢেউ তো রাজ্যের ঘাড়েও নিঃশ্বাস ফেলছে। এই অবস্থায় পুজোর সময় মণ্ডপের বাইরে থেকে প্রতিমা দর্শন এবং শুধু ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে কি সেই বিপদকে আটকানো সম্ভব? পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, “গত বছর যখন পুজো হয়েছিল, তখনও দ্বিতীয় ঢেউ আসেনি। তবু পুজোকে ঘিরে বিধিনিষেধের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। এ বারেও সেই নিয়মের কথা রাজ্য সরকার বলছে কি না, সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়।”
সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ পুজোয় জেলা ও শহরের লোকজনের সংমিশ্রণে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তাঁদের মতে, শহরের তুলনায় বিভিন্ন জেলায় টিকাকরণের হার কম। আশঙ্কা, পুজোয় সংলগ্ন জেলার লোকজন শহরে ঠাকুর দেখতে আসার সময় সংক্রমণকে সঙ্গে করে আনতে পারেন। গত পুজোয় লোকাল ট্রেন চললেও তাতে সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রচুর বিধিনিষেধ ছিল। এমনকি দিনের সাধারণ সময়ের পরে চলেনি মেট্রোও। ফলে জেলা থেকে লোকজন ততটা ভিড় করতে পারেননি শহরে।
এখন স্টাফ স্পেশাল ট্রেন চললেও বাস্তব ছবিটা অন্য রকম। টিকিট কেটে সেই সব ‘বিশেষ’ ট্রেনে যাতায়াত করছেন সাধারণ যাত্রীরাও। পুজোর সময় ওই ভাবেই জেলা থেকে দর্শকদের শহরের পুজো দেখতে আসার সম্ভাবনা প্রবল। রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “তৃতীয় ঢেউয়ের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। নাগপুরে তৃতীয় ঢেউ এসে গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুর প্রশাসন। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার না-করে পুজোর সময় যদি জেলা থেকে প্রচুর মানুষ শহরে ঠাকুর দেখতে আসেন, তা হলে বছর শেষে বিপদের বড় ধাক্কার আশঙ্কা প্রবল।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দোলুই বলেন, “দুর্গাপুজো শুধু উৎসব নয়, বাঙালির জীবন ও অর্থনীতির একটা স্তম্ভও। তাই উৎসব হোক, কিন্তু সবটাই হোক কোভিড বিধি মেনে। ভিড় বা জমায়েত থেকেই এই ধরণের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তাই দ্রুত টিকাকরণ সম্পূর্ণ করতে হবে এবং সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে মানুষ ও প্রশাসনকে।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতিদিনই সংক্রমণের রেখচিত্র ওঠানামা করছে। রাজ্যের কোথাও করোনা ঘাপটি মেরে রয়েছে কি না, তা জানতে সেন্টিনেল সার্ভেল্যান্স শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ১৬ থেকে ১৮ অগস্ট রাজ্যের ২০টি জেলায় চালানো সেই সমীক্ষার রিপোর্ট সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা, উত্তর দিনাজপুরে পজ়িটিভিটি রেট এক থেকে তিন শতাংশের মধ্যে। যার অর্থ, কোনও ধরনের উপসর্গ ছাড়াই কিছু মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। পজ়িটিভিটি রেট তিন শতাংশের বেশি বিষ্ণুপুর (৩.১), পূর্ব মেদিনীপুর (৩.৮), জলপাইগুড়ি (৩.৬), দার্জিলিং (৩.২) জেলায়।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার তিন শতাংশের বেশি হলেই তা উদ্বেগের। সে-ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার পরিস্থিতির উপরে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য শিবিরের এক চিকিৎসক বলেন, “দ্বিতীয় পর্বের সমীক্ষার তুলনায় ওই জেলাগুলির পজ়িটিভিটি রেট কমলেও তা তিনের নীচে যায়নি। ওই সব জেলায় পর্যটনস্থল প্রচুর। এক দিকে পুজোর সময়কার ভিড়, তার উপরে বেড়াতে যাওয়া— দুইয়ে মিলিয়ে বড় বিপদ না ধেয়ে আসে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy