(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পি চিদম্বরম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
‘অ্যালার্জি’ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে প্রয়োজন হয় 'অ্যান্টি অ্যালার্জিক' ওষুধের। জাতীয় রাজনীতির পরিসরে কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূলের দীর্ঘমেয়াদি 'অ্যালার্জি' কমাতে এমনই মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ করলেন রাহুল গান্ধী- মল্লিকার্জুন খড়্গে-সনিয়া গান্ধীরা। কংগ্রেস সূত্রের খবর, তাঁদের দূত হিসেবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ নবান্নে এসে কাঁটায় কাঁটায় পৌনে এক ঘণ্টা (বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে সওয়া চারটে) মুখোমুখি বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বিরোধী রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। চিদম্বরম এবং মমতার বৈঠকে সম্পর্কের শীতলতা কিছুটা গলেছে বলেও খবর।
আজ চিদম্বরমের আসা-যাওয়া, মমতার সঙ্গে বৈঠক, গোটাটাই গোপন রাখার চেষ্টা হয়েছে দু'দলের তরফে। সাংবাদিকদেরও চিদম্বরমের কাছাকাছি ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো না হলেও একটি সূত্রের দাবি, ওয়েনাড়ে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার হয়ে প্রচারে মমতার সময় হবে কি না, সে প্রশ্ন আজকের আলোচনায় ওঠে। মমতা প্রিয়ঙ্কাকে পছন্দ করেন এবং প্রিয়ঙ্কাকে প্রার্থী করার প্রস্তাবও তিনি আগে দিয়েছিলেন। বস্তুত মমতার মত ছিল, লোকসভা ভোটে প্রিয়ঙ্কা বারাণসীতে দাঁড়ান নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ার বৈঠকে মমতা প্রস্তাবও দিয়েছিলেন, প্রিয়ঙ্কা দাঁড়ালে তিনি নিজে প্রচারে যাবেন।
সামনেই সংসদীয় অধিবেশন। সপ্তদশ লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে ৯৫ জন বিরোধী সাংসদকে গোটা অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করে নতুন দণ্ডসংহিতা সংক্রান্ত তিনটি বিল পাশ করিয়েছিল সরকার। সেটি আইন হিসেবে বলবৎ হওয়ার কথা ১ জুলাই, যখন নতুন লোকসভার অধিবেশন চলবে পুরোদমে। সূত্রের খবর, মমতা-চিদম্বরমের বৈঠকে উঠে এসেছে সংসদে 'ইন্ডিয়া' মঞ্চের শরিক তথা কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কক্ষ সমন্বয়ের প্রসঙ্গ। এ-ও স্থির হয়েছে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল এই কেন্দ্রীয় সরকারকে এই তিন আইন নিয়ে ফের চেপে ধরা হবে। এ ব্যাপারে সমন্বয় করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির তিন সদস্য পি চিদম্বরম, তৃণমূলের ডেরেক ও'ব্রায়েন এবং ডিএমকে-র এলাঙ্গোভান।
বসে থেকে সুযোগের অপেক্ষা না করে এনডিএ সরকারকে টলোমলো করে দেওয়ার জন্য এখনই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তেও চিদম্বরমকে অনুরোধ করেছেন মমতা। চিদম্বরমের পক্ষ থেকেও মমতাকে জানানো হয়েছে, সিপিএমের কথাকেই শেষ কথা হিসেবে ধরে না নিয়ে, যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়া হবে মমতার পরামর্শ এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, মমতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে নিরসন করার চেষ্টাই করেছেন চিদম্বরম। প্রসঙ্গত দিগ্বিজয় সিংহ, শশী তারুর, কে সি বেণুগোপালের মতো নেতারা চিদম্বরমের মতোই মমতার প্রতি নরম মানসিকতা নিয়ে চলেছিলেন। কিন্তু অধীর চৌধুরীর প্রতি হাইকমান্ডের অগাধ ভরসার কারণে এবং রাজ্য কংগ্রেসের অনুযোগে, সেটা নিয়ে এগোতে পারেননি তাঁরা। এখন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, 'দুর্বল' মোদী তথা এনডিএ সরকারকে ধাক্কা দিতে হলে 'ইন্ডিয়া'র মধ্যে কোনও 'জিঞ্জার গোষ্ঠী' থাকা অভিপ্রেত নয়। লোহা গরম থাকতে থাকতে নিজেদের ঐক্য ঝালিয়ে নিতে হবে।
তৃণমূল শিবিরেরও দাবি, গত এক বছরে মমতা এবং কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্কের যে উত্তরোত্তর অবনতি হয়েছে, তার মূল কারণ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তৃণমূল নেতৃত্বের আরও অভিযোগ, গত ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া মঞ্চের শেষ পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে বহরমপুর এবং দক্ষিণ মালদহ- এই দুটি আসনে মমতা যখন জোটের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা উড়িয়ে দেন রাহুল গান্ধী। গান্ধী পরিবারের সঙ্গে এমনিতে মমতার সখ্য চার দশকের পুরনো। কিন্তু এই ঘটনার পর রাহুলের সঙ্গে মমতার যে তিক্ততা তৈরি হয়, তার উপশম হয়নি। অথচ চিদম্বরম-সহ অনেকেই মনে করেন, মমতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবং তাঁর কথা মেনে পশ্চিমবঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাস্তবতা তিনি যে কারও থেকে ভাল বোঝেন। লোকসভার ফলাফলের পর কংগ্রেসের এই অংশের মতামত আরও
মান্যতা পেয়েছে হাইকমান্ডের কাছে। অন্য দিকে কংগ্রেস-বিরোধিতাকে প্রকাশ্যে এনে তৃণমূল ঝাঁঝ বাড়িয়ে প্রকাশ্যেই জানিয়েছে, ইন্ডিয়া মঞ্চের মধ্যে থেকেই তারা 'জিঞ্জার গোষ্ঠী' গঠনে উদ্যোগী। কথা ও কাজে ভেদ না রাখতে চেয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব এবং আপ নেতা রাঘব চড্ডার সঙ্গে দেখা করে উড়ে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ে শিবসেনার উদ্ধবের সঙ্গে বৈঠক করতে। আবার সম্প্রতি সেবি-র সঙ্গে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগ জানাতে মহারাষ্ট্রে গিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল পৃথক ভাবে বৈঠক করেছে শরদ পওয়ার এবং উদ্ধবের সঙ্গে। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের ১৩টি আসন থাকলেও তাদের দৃশ্যতই তাচ্ছিল্য করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে। এর পর রাজ্য বিধানসভার চারটি আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেস এবং বামেদের প্রাথমিক ভাবে জোট তৈরি হওয়াতেও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিল তৃণমূল। বার্তা স্পষ্ট, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যদি সিপিএম (লোকসভায় যাদের আসন সংখ্যা চার) তথা সীতারাম ইয়েচুরির হাতে তামাক খান, সেটা মেনে নেবে না তৃণমূল।
আজকের বৈঠকের পর, পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয় এ বার সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy