Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪
‘গ্রিভান্স সেলে’ কি মুছবে ক্ষত
Mamata Banerjee

কর্মসংস্থানে ঘাটতি কবুল

সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে যে নিয়োগপত্র বিতরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়ে এর মধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একে তো কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপ্রেনটিসশিপের চুক্তিকে নিয়োগপত্র বলা হচ্ছে।

খড়্গপুরে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

খড়্গপুরে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৪:৫৩
Share: Save:

অনুষ্ঠান ছিল শিল্পতালুকের সভামঞ্চ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র প্রদানের। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত স্বীকার করে নিলেন, রাজ্যে কর্মসংস্থানে ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি, সম্প্রতি নিয়োগপত্র দেওয়া নিয়ে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে একটি ‘গ্রিভান্স সেল’ খোলারও নির্দেশ দিলেন তিনি। তাঁর ঘোষণা, “এখন কর্মসংস্থানই আমাদের লক্ষ্য। আগামী চার-পাঁচ বছরে কর্মসংস্থানে বাংলাকে আমি এক নম্বরে নিয়ে যাব।’’

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন, পুজোয় কেটলি আর ভাঁড় জোগাড় করে চা বিক্রি করতে। বেচতে বলেন ঘুগনি-তেলেভাজাও। পাশাপাশি কচুরিপানার ব্যাগ, শালপাতার থালা, কাশফুলের বালিশের কথাও বলেন তিনি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং এই অনুষ্ঠানে হাজির সুব্রত রানা, অপর্ণা চৌধুরীরা বলেন, ‘‘চা-মুড়ি-তেলেভাজার ব্যবসা করা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব!”

সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে যে নিয়োগপত্র বিতরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়ে এর মধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একে তো কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপ্রেনটিসশিপের চুক্তিকে নিয়োগপত্র বলা হচ্ছে। অন্য দিকে, কয়েকটি ক্ষেত্রে গোটা নিয়োগপত্রটিই ভুয়ো বলে অভিযোগ উঠেছে। নেতাজি ইন্ডোরের সেই মঞ্চ থেকে যখন মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত লোকজন নিয়োগপত্র পেয়েছেন কি না, তখন অনেকেই না বলেছেন। এ দিনও একই ভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হল তাঁকে। অনুষ্ঠানের পরে অনেক যুবক-যুবতীই জানান, তাঁরা নিয়োগপত্র পাননি।

‘উৎকর্ষ বাংলা’য় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেওয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের সুব্রত, অপর্ণা, ঝাড়গ্রামের শ্রেয়া ভট্টাচার্যরা বলেন, “আমাদের তো বলা হয়েছিল, এই কর্মসূচি থেকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। কিছুই দেওয়া হল না।’’ সূত্রের খবর, পুরুলিয়া থেকে যাওয়া ৪৩৮ জন আইটিআই শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের। তাঁদের নিয়োগপত্র পাওয়ারই কথা নয় বলে সূত্রের দাবি। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘কলেজ থেকে যেতে হবে বলে জানিয়েছিল।’’ বাঁকুড়া থেকে গিয়েছিলেন প্রায় ১,১০০ জন কারিগরি শিক্ষার্থী। তাঁদের একাংশও জানালেন, নিয়োগপত্র তো দেওয়া হয়নি। প্যাকেটেও খাবার কম ছিল। ডেকে এনেও কেন নিয়োগপত্র দেওয়া হল না, তার জবাব মেলেনি কোনও মহলেই। কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গেও চেষ্টা করে যোগাযোগ করা যায়নি।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, গত কয়েক দিনে এই নিয়ে যে উষ্মা তৈরি হয়েছে, সে কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত এ দিন উৎকর্ষ বাংলায় ‘গ্রিভান্স সেল’ তৈরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার খড়্গপুর শহরের উপকণ্ঠে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের নির্মীয়মাণ স্টেডিয়ামের মাঠে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক কর্মসূচি। মূলত কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগপত্র প্রদান করা হয় সেখানে। দর্শকাসনে ছিলেন প্রায় ১০ হাজার প্রশিক্ষিত। মঞ্চে কয়েকটি সংস্থার তরফে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয় ১০ জনকে। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তা দেন সংস্থার প্রতিনিধিরাই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সারা ভারতে স্কিল ট্রেনিংয়ের পরীক্ষায় ২১ জন ‘টপার’ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শুধু বাংলা থেকেই ৯ জন। স্কিল ট্রেনিংয়ে আমরা এক নম্বরে।” যদিও এর পাশাপাশি আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে রাজ্যকে কর্ম সংস্থানে এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত এই বিভাগে ঘাটতির কথা মেনে নিয়েছেন— মনে করছেন বিরোধীরা।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘কর্মসংস্থানের নামে যা ইচ্ছা বলছেন! বেসরকারি সংস্থার প্রশিক্ষণ বা অস্থায়ী কাজের জন্য যা চিঠি দেওয়া হচ্ছে, তা-ও জাল বেরোচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গ্রিভান্স সেলের কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই মেনে নিলেন, মানুষের অভিযোগ বাড়ছে।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘প্রতিদিন রাজ্য সরকার এবং শাসকদলের এক একটা করে জালিয়াতি সামনে আসছে। কথাটা অপ্রিয় হলেও বলতে হচ্ছে, আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া এখানে আর কিছুই ঠিক করে হওয়ার নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখন গ্রিভান্স সেল করে আর কী হবে?’’

রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘এটা সরকারি বিষয়। আমার এই সম্পর্কে কিছু জানা নেই। এই বিষয়ে সরকারি আধিকারিকেরাই বলতে পারবেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে যে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে সিপিএম বা বিজেপি এ সব প্রশ্ন তুলবে, সেটা আমরা জানি!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee West Bengal Employment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE