—ফাইল চিত্র।
জনজাতি অধিকার আন্দোলনের অন্যতম মুখ স্ট্যান স্বামীর বন্দিদশায় মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে যাবজ্জীবন জেল খাটা ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের পরিস্থিতি যাচাই করে জেল থেকে তাঁদের মুক্তির দাবি তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দিয়েছিলেন বিরোধীরা। এ বার ৬৩ জন বন্দিকে মুক্তি দিল মমতার সরকার। সোমবার রাজ্য সরকার লিখিত ভাবে এ কথা জানিয়েছে। কিন্তু মুক্তির ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশে বন্দিদের জাতি-ধর্মের উল্লেখ থাকায় সরব হয়েছে বিরোধী শিবির।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৬০ পেরিয়েছে এবং যাঁরা ১৪ বছর জেল খেটে ফেলেছেন, এমন ৬১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। তাঁদের পাশাপাশি দু’জন মহিলা বন্দিকেও মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, যাঁদের বয়স ৫৫। তাঁদের অনেকে রাজনৈতিক, খুন-সহ নানা মামলার আসামি। সরকারের যুক্তি, কোভিড পরিস্থিতিতে মানবিকতার স্বার্থে এই পদক্ষেপ করা হল। প্রশাসনের অন্দরের খবর, বন্দি মুক্তি নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে ‘রাজ্য সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ড’ রয়েছে। তাদের সুপারিশক্রমেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সাধারণত, মুক্তির ক্ষেত্রে জেলে বন্দিদের আচরণ, বয়স, মানসিকতা বদল, শারীরিক পরিস্থিতি-সহ নানা বিষয় যাচাই করা হয়। ১৯৭৩ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর কোড’-এর ৪৩২ নম্বর ধারায় রাজ্যের হাতে এই ক্ষমতা রয়েছে।
স্ট্যান স্বামী জেলে নানা রোগে ভুগছিলেন। শেষে তিনি কোভিডেও আক্রান্ত হন। ৪ জুলাই তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিতে হয়েছিল। ৫ জুলাই মারা যান তিনি। ওই ঘটনায় দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তখনই মমতা বলেছিলেন, “আমরা সবাই মিলে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছি। নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক কারণে যাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া উচিত। যে-ভাবে স্বামী মারা গেলেন, তা দুর্ভাগ্যজনক। যথাযোগ্য চিকিৎসা পাননি। ৬০ বা ৬৫ বছরের বেশি যাঁরা জেলে রয়েছেন, এই অতিমারির সময়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া উচিত।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্যে যাঁদের মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের জাতি-ধর্মেরও উল্লেখ রয়েছে সরকারি নির্দেশে।
সেই লিখিত বিবৃতি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, মুক্তি পাওয়া বন্দিদের জাতি এবং ধর্মভিত্তিক তথ্য দেওয়া ঠিক উদাহরণ নয়। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চিরকাল জানা ছিল, অপরাধীর কোনও ধর্ম বা জাত হয় না। বর্তমান শাসক দলের রাজনীতি সেখান থেকে সরে এসেছে। যাঁরা মোমবাতি মিছিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন, তাঁরা এই বিষয়টাও একটু খেয়াল রাখুন।’’ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সাজা মকুব করার সময় বন্দিদের ধর্ম বা জাতিগত পরিচয় উল্লেখ করায় আমরা শুধু বিস্মিত নই, ক্ষুব্ধও। বিচারক যখন বিচার করেন, তখন অভিযুক্তের ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় দেখে করেন না। তা হলে এই সব পরিচয় টেনে আনা হবে কেন?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “পরীক্ষায় পাশের ঘোষণা থেকে জেলের বন্দি মুক্তি, সবেতেই ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করাটা এখন রাজ্য সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভাবে চললে যাঁরা ধর্ম এবং জাতপাত নিয়ে রাজনীতি করেন, তাঁদের সুবিধে হয়।”
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সরকারি অনেক ফর্মে এই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা থাকে। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা খোঁজার চেষ্টা করা ভুল। এখানে তো অন্য কারণে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। জাত বা ধর্মের ভিত্তিতে হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy