রেড রোডের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: ফেসবুক।
দেশের নেতা কেমন হবেন, নেতাজির জন্মদিনে তারই সংজ্ঞা বাতলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই মমতা জানালেন, কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন দেশের নেতার মধ্যে।
মঙ্গলবার নেতাজি সুভাষচন্দ্রের ১২৮তম জন্মদিবস। সেই উপলক্ষে রেড রোডে নেতাজি মূর্তিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে এসেছিলেন মমতা। পরে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘নেতাজি দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যা বলে গিয়েছিলেন, তা মানলে ভারতবর্ষ আরও বড় দেশ, উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্ববিশ্রুত হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের আফসোস, আজও নেতাজির মতো এক জন নেতা জন্মাল না দেশে।’’
মমতার মতে দেশের নেতা তিনিই হবেন, যিনি সব ধর্মের মানুষকে পাশে নিয়ে চলবেন। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের নেতা তিনিই, যাঁর এক পাশে থাকে হিন্দু, এক পাশে মুসলমান, এক পাশে থাকে খ্রিস্টান, অন্য পাশে শিখ, জৈন, বৌদ্ধ।’’
ঘটনাচক্রে, সোমবারই মমতা সকল ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংহতি মিছিল করেছেন কলকাতায়। হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস— দলীয় কর্মী, সমর্থক, নেতানেত্রীদের নিয়ে সেই সংহতি মিছিলের পুরোভাগে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই দেখা গিয়েছে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান— নানান ধর্মের প্রতিনিধিদের। অন্য দিকে, সোমবার অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি রামলালার মূর্তিতে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র পুজো করেন।
সেই প্রেক্ষিতে মমতার পরের মন্তব্য, ‘‘ওরা বিভাজনের পরিকল্পনা করে। হিংসার রাজনীতির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা করে ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদের আর পরিকল্পনা করে ভেদাভেদের মাধ্যমে শাসনের!’’ আসলে মমতা বুঝিয়েছেন, দেশের শাসকদল এবং তাঁদের নেতারা সব ধর্মকে সঙ্গে নিয়ে চলেন না। যা মমতার মতে, একজন আদর্শ দেশনেতার গুণ হওয়া উচিত।
সম্প্রতিই ধর্মাচরণ নিয়ে মোদীকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। রামমন্দিরে মোদীর পুজো প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা আমাদের (নেতা বা রাজনীতিকদের) কাজ নয়। তার জন্য আলাদা লোক আছে।’’ মমতা এ-ও বলেছিলেন, ‘‘নিজের ধর্ম আমি বাড়িতে পালন করি। বাড়িতেই রেখে আসি।’’
তবে সোমবার দেশের নেতার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মমতা যেমন ধর্মকে টেনেছেন, তেমনই নেতাজিকে নিয়ে দেওয়া মোদীর প্রতিশ্রুতিরও সমালোচনা করেছেন। মমতা বলেছেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার আগে ওরা বলেছিল, নেতাজির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করবে। ক্ষমতায় তারা এসে গিয়েছে বহু দিন। কিন্তু কারণ আজও জানা যায়নি। উল্টে নেতাজির তৈরি প্ল্যানিং কমিশনটাকেই ওরা তুলে দিয়েছে। প্ল্যানিং (পরিকল্পনা) এখন কিলিং (হত্যা)-এর দিকে চলে গিয়েছে..’’। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার আগে মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি নেতাজির দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনবেন। নেতাজির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি যে পূরণ হয়নি, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। মঞ্চে বলেছেন, ‘‘দেশের কী দুর্ভাগ্য! যে মানুষটা দেশের জন্য লড়াই করল, দেশকে দিশা দেখাল, তার জন্মদিন জানলেও মৃত্যুর দিন জানতে পারব না। সেই ইতিহাস চির অমাবস্যার অন্ধকারে লজ্জায় লুকিয়ে আছে।’’
এর পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘নেতাজি আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলেন। সবাইকে নিয়ে চলতে শিখিয়েছিলেন তাই তাঁকে দেশনায়ক বলেছিলেন গান্ধীজি। কিন্তু আজ আর তেমন নেতা কোথায়? আর তো নেতাজির মতো নেতা জন্মাল না। আজ আর তোমার দেখা নাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy