মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
তিনি যে রাজ্যপালকে সরাতে চান, তা আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম স্পষ্ট করলেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অপসারণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে কয়েকটি চিঠি ইতিমধ্যেই তিনি পাঠিয়েছেন। এই আবহেই দিল্লি সফরে গিয়ে রাজ্যপাল এ দিন সকালে সস্ত্রীক দেখা করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে। রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও তিনি গিয়েছিলেন। এ নিয়ে দু’রকম জল্পনা দানা বেঁধেছে— বাংলায় তাঁর কাজের মেয়াদ কি শেষ হচ্ছে! না কি তাঁর ‘ভিত’ আরও মজবুত হল। এ সব প্রশ্নের জবাব অবশ্য কোনও সূত্রেই মেলেনি।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নবান্নে বলেন, “আমার নতুন করে বলার আর কী আছে! একটা বাচ্চা হলে বকে চুপ করানো যায়। এখানে স্পিচ ইজ় সিলভার অ্যান্ড সাইলেন্স ইজ় গোল্ডেন। তুমি অধম হলে আমি উত্তম হইব না কেন? রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ করার নিয়ম থাকলেও, যখন রাজ্যপাল করা হয়েছে, তখনও আমায় জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তাই উনি চলে গেলেও কি আমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে? তাই আমি কি করে জানব! আসা-যাওয়ার গানটা ওরা একাই গায়। আমি তো প্রধানমন্ত্রীকে দু-তিন বার চিঠি লিখেছি ওনাকে উইথড্র করে নেওয়ার জন্য।”
রাজ্যপাল এ দিন দিল্লিতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। অনেক রাত পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। রাজ্যপালের এই বৈঠক কতটা শোভন, তা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে।
সূত্রের মতে, পশ্চিমবঙ্গের ভোট পরবর্তী হিংসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। পরে রাজ্যপাল ও অমিত শাহের বৈঠকের ছবি রিটুইট করে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রকাশের জন্য সাংবিধানিক মূল্যবোধকে তুলে ধরা প্রয়োজন। অন্ধকারের গ্রাসে চলে যাওয়া বাংলাকে আলোকিত করতে যা এখন প্রয়োজন।
যদিও এ দিনও ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে ওঠা অভিযোগ খারিজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বরং বিজেপির বিরুদ্ধে ছদ্ম-হিংসা বা ‘গিমিক ভায়োলেন্স’ ছড়ানোর পাল্টা অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, “এগুলো সব পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা। নির্বাচনের পরে কোনও ঘটনা ঘটেনি। যখন নির্বাচন কমিশন ছিল তখন কিছু হিংসার ঘটনা ঘটেছে। যদিও তার মধ্যে সব রাজনৈতিক নয়, কিছু ব্যক্তিগত শত্রুতাও রয়েছে। আমি সব সময় আমার পুলিশ, প্রশাসনকে বলেছি যেখানেই এমন ধরনের ঘটনা ঘটুক, কড়া ব্যবস্থা নিতে। একটা পরিবেশ তৈরি করছে, যে চারিদিকে যেন হিংসা রয়েছে। এটা বিজেপির গিমিক ভায়োলেন্স।”
ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজভবনের তৎপরতার পাশাপাশি, দিল্লি থেকে বিভিন্ন কমিশন রাজ্যে আসছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। সে সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা খোঁচা, “তাদের বেশি করে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে যাওয়া উচিত ছিল। যেখানে মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে কোভিড রোগীদের রেকর্ড রাখা হয় না, যেখানে ২২ জন বিনা অক্সিজেনের মারা যায়। হাথরসের ইতিহাস না ঘেঁটে বাংলায় এত হারার পরেও লaজ্জা নেই। সব এজেন্সিকে দিয়ে এই কাজগুলো করাটাই বিজেপির অভ্যাস। আমি একটা ভিডিও পেয়েছি, তাতে কেউ কেউ বলেছে আমরা সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ বাড়াব। সেটার ব্যাপারে সিআইডি এবং পুলিশ দেখতে বলা হয়েছে। দিল্লির পুলিশের থেকেও আমাদের পুলিশ অনেক ভালো কাজ করে।”
লোকসভার স্পিকারের সঙ্গে রাজ্যপালের কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে উভয় পক্ষ নীরব হলেও, উল্লেখ্য নারদ মামলায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার জন্য স্পিকার ওম বিড়লার কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি চাওয়া হয়েছে, বিজেপি থেকে সদ্য তৃণমূলে ফিরে যাওয়া মুকুল রায়ের জন্যও। তা যদি হয়, সে ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া না-দেওয়া দু’জনের ক্ষেত্রেই সম ভাবে প্রযোজ্য। সেই বিষয়টি ছাড়াও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া সাংসদ সুনীল মণ্ডল ও শিশির অধিকারীর সাংসদ পদ আগামী দিনে থাকবে কি না তাও নির্ভর করছে স্পিকারের উপরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy