—ফাইল চিত্র।
প্রকৃতপক্ষে এ যেন ‘দিদিকে বলো’র ফলিত রূপ। তবে ‘দিদি’র বদলে এ ক্ষেত্রে বলা চলে ‘আমাকে বলো’।
সোমবার হাওড়ার বস্তিতে এবং দিঘার কাছে একটি তফসিলি গ্রামে গিয়ে নজির গড়লেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। শুধু তা-ই নয়, হাওড়ার বস্তির ‘বেহাল পুর পরিষেবা’ নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বকলেন পুর কমিশনার এবং কলকাতার মেয়রকেও। অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরে তিনি গ্রামে নিয়ে যান জেলার দুই নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অখিল গিরিকে। জেলার রাজনীতিতে যাঁদের মধ্যে ‘মধুর সম্পর্ক’ সর্বজনবিদিত। সেখানে দুই নেতাকে একসঙ্গে এনে ‘সমন্বয়ে’র বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন মমতা।
এ দিন দুপুরে প্রথমে হাওড়ায় প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেখানে পৌঁছনোর আগেই ফোরশোর রোডের পাশে দু’নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের হরিজন বস্তিতে আচমকাই দাঁড়িয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। আড়াই ফুট চওড়া বস্তির গলিতে সটান ঢুকে যান মমতা। ঘরে ঢুকে ঢুকে কথা বলতে শুরু করেন সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে। জেনে নেন তাঁদের অভাব অভিযোগ। এবং সেখানেই তিনি জানতে পারেন, ওই বস্তির কারও কাছে রেশন কার্ড নেই।
শুধু তা-ই নয়, বস্তির নিকাশি ব্যবস্থা, আবর্জনার স্তূপ, শৌচাগারের অবস্থা দেখে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান কাউন্সিলর কেন কোনও ব্যবস্থা করেননি।
প্রশাসনিক সভায় গিয়ে হাওড়ার পুর কমিশনার তথা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন বিজিন কৃষ্ণের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘আপনার এখানে পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছে কেন?’’ একই সঙ্গে তিনি সরব হন পুর পরিষেবার ব্যর্থতা নিয়েও। নির্দেশ দেন, ‘‘কাউন্সিলর নেই তো কী হয়েছে? আপনি বস্তিতে ঘুরবেন। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন।’’ সরাসরি ওই বস্তির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘ববিকে (ফিরহাদ হাকিম) বলে বলে হতাশ হয়ে যাই। ওই বস্তিতে সাত-আটটি শৌচাগার থাকা দরকার। যখন সুযোগ আছে, কেন করে দেব না?’’ একই সঙ্গে বিধায়ক অরূপ রায়কে তাঁর নির্দেশ, ‘‘পরে আবার তোমার এলাকায় গিয়ে বলো না, কেন দিদিকে বলেছ? আমি সব জায়গাতেই যেতে পারি।’’
এ দিন বিকেলেই পূর্ব মেদিনীপুরে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও দিঘা সংলগ্ন তফসিলি জাতি অধ্যুষিত মৈত্রাপুরে পৌঁছে যায় তাঁর কনভয়। এলাকার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং অখিল গিরি ও সাংসদ শিশির অধিকারীকে নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মমতা। জেনে নেন, তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা। আগামী কাল, বুধবার দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে বসার কথা তাঁর।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘প্রয়োজনে গ্রামে গিয়ে খাটিয়ায় বসে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনুন।’’ এর পরেই শুরু হয় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। নেতাদের যে নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, এ দিন হাওড়া এবং মেদিনীপুরে সে কাজই করে দেখিয়ে উদাহরণ তৈরি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুই জেলায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিজের ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তিও তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে রাজ্য বিজেপির অভিযোগ, এ রাজ্যে প্রশাসন বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে আর কোনও লাভ হচ্ছে না। এখন উনি বস্তিতে যান, বাড়িতে যান— কিছুতেই কোনও লাভ হবে না। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘উত্তর ২৪ পরগনায় এর আগে উনি প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। অথচ সেখানে আমাদের সাংসদদের ডাকা হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy