পেট্রল, ডিজেলের সঙ্গে রান্নার গ্যাসের দাম কমানোর দাবিও তুলেছেন মমতা। ফাইল চিত্র
পেট্রল, ডিজেলের দাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যের ঘণ্টা চারেক কাটতে না কাটতেই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুর দেড়টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি থেকে ভ্যাট কমানোর আর্জি জানান। যদিও সেই আর্জিতে রাজ্যের প্রতি সমালোচনার সুর স্পষ্ট ছিল। তার চার ঘণ্টার মধ্যেই নবান্ন থেকে জবাব দিলেন মমতা। দাবি করলেন, তাঁর সরকার চেয়েছিল পেট্রল, ডিজেলের উপরে রাজস্বের আধাআধি ভাগ হোক কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে। সেটা না মেনে ৭৫ শতাংশ রাজস্বই কেন্দ্র নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মমতা বলেন, কেন্দ্র বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে উদারতা দেখালেও বিরোধীদের হাতে থাকা রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিমাতৃসূলভ আচরণ করছে।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মোদী। সেখানেই ওঠে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা। সেটা বলতে বলতেই কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘দেশবাসীকে সুবিধা দিতে গত নভেম্বর মাসে আন্তঃশুল্ক কমিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তখনই রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তারাও যেন কর কমায়। কিন্তু কিছু রাজ্য কেন্দ্রের সেই কথা শুনে ভ্যাট কমালেও অনেক রাজ্যই তা করেনি। কোনও না কোনও কারণ দেখানো হয়েছে। এখন সেই সব রাজ্যকে অনুরোধ করছি গত ছ’মাস আগেই যেটা করার ছিল সেটা এখন করে মানুষের সুবিধা করে দেওয়া হোক।’’ এই প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গানার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নামও উল্লেখ করেন মোদী। তার জবাব দিতে গিয়ে মমতা বললেন, ‘‘রাজ্যের উপরে বোঝা না চাপিয়ে নিজের দিকে দেখুন। আপনি পেট্রল, ডিজেল থেকে কত টাকা রাজস্ব আদায় করেছেন?’’ এর পরে হিসাব পেশ করে মমতা বলেন, ‘‘২০১৪ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেট্রল আর ডিজেল থেকে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে মোদী সরকার।’’ রাজ্যের উপরে দায় চাপানোর চেষ্টা করে কাজ হবে না বলে জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রকে অবিলম্বে পেট্রল, ডিজেল এবং রান্নার গ্যাসের দাম কমাতে হবে।’’ কেন্দ্রের তরফে জ্বালানির উপরে বিভিন্ন ধরনের সেস বসানোরও সমালোচনা করেন মমতা।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে বিকেলে রাজ্যের সব জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নবান্ন থেকে একটি বৈঠক করেন মমতা। তা শেষ হওয়ার পরেই সাংবাদিক বৈঠকে মমতা মোদীকে জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য ৯৭ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে।’’ এর পাশাপাশি জানান তাঁর সরকার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে লিটার প্রতি এক টাকা করে পেট্রল ও ডিজেলে ছাড় দেয়। এই বাবদ দেড় হাজার কোটি টাকা চলে যায় বলে দাবি করেন মমতা। সাধারণ মানুষের উপরে বোঝা কমাতে ৪০০ কোটি টাকার রোড ট্যাক্স মকুব করেছে।
বুধবার মোদী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের আর্জি মেনে কর কমানোর ফলে কর্নাটক সরকারের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কমেছে। গুজরাতের রাজস্ব আদায় কমেছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু দেখা গিয়েছে কর্নাটক বা গুজরাতের পাশের রাজ্যগুলি কর না কমিয়ে গত ছ’মাস ধরে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করেছে।’’ এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রাপ্য টাকার অর্ধেক দিয়ে দিন। পরের দিন তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেব।’’ এর পাশাপাশি কেন্দ্র বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে বেশি সহায়তা করে বলে অভিযোগ করেন মমতা। মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ স্লোগানকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্যেই শুধু বিকাশ, বাকি জায়গায় আঁধার।’’
করোনা নিয়ে বৈঠকে বসে কেন এই ধরনের বিষয়ে আলোচনা করা হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী একতরফা ভাবে বলে গিয়েছেন। বাকিদের কথা বলার কোনও সুযোগই ছিল না। আমি কিছুই বলতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy