Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বেহুলার পাড়ে চোলাইয়ের ‘কুটির শিল্প’

মাঝ বরাবর গ্রাম চিরে বয়ে চলেছে বেহুলা নদী। পাড় ঘেঁষে এগোতেই পরপর কয়েকটি চোলাইয়ের ভাটি। বড় বড় উনুন। ড্রামভর্তি গুড়-সহ নানা উপকরণ। কয়েকটি উনুন থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। একটি ড্রামের কাছে যেতেই গন্ধটা তীব্র হল। 

সুশান্ত সরকার ও প্রকাশ পাল
বলাগড় শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
Share: Save:

গ্রামে পা দিতেই নাকে এল কটু গন্ধটা!

মাঝ বরাবর গ্রাম চিরে বয়ে চলেছে বেহুলা নদী। পাড় ঘেঁষে এগোতেই পরপর কয়েকটি চোলাইয়ের ভাটি। বড় বড় উনুন। ড্রামভর্তি গুড়-সহ নানা উপকরণ। কয়েকটি উনুন থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। একটি ড্রামের কাছে যেতেই গন্ধটা তীব্র হল।

চোলাই তৈরি করা যেন এখানকার ‘কুটির শিল্প’! হুগলির বলাগড়ের বাকুলিয়া-ধোবাপাড়া পঞ্চায়েতের এই গোপালবাটি গ্রাম অনেকটা সমরেশ বসুর ‘বাঘিনী’র সেই বাগদিপাড়ার মতো। যেখানে অনেক পরিবার চোলাই কারবারে যুক্ত। যেখান থেকে প্রতিদিন বাইকে চোলাইয়ের জ্যারিকেন যাচ্ছে হুগলিরই পাণ্ডুয়া, পূর্ব বর্ধমানের কালনা-সহ নানা জায়গায়। গঙ্গা পেরিয়ে নদিয়াতেও। সেই নদিয়ার শান্তিপুরে বিষমদ-কাণ্ডে তদন্তকারীদের আলোচনায় উঠে এসেছে গোপালবাটির নাম।

তাতে অবশ্য গ্রামে চোলাই তৈরির রোজনামচায় ছেদ পড়েনি। বৃহস্পতিবার সকালেও তৈরি হয়েছে। গীতা মণ্ডল নামে গ্রামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ভোরে এবং সন্ধ্যায় সবাই চোলাই কিনে নিয়ে যান। রাস্তার মোড়ে বিক্রি হয়। কোনও ক্ষতি হয় বলে তো জানি না। অন্তত ৩০ বছর ধরে এখানে চোলাই তৈরি হয়।’’ এক কারবারি তো ঝাঁঝিয়ে বলেই দিলেন, ‘‘এখানে মদে কিছু মেশানো হয় না। কখনও কোনও অভিযোগ ওঠেনি।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামটিতে অন্তত ১০০ পরিবারের বাস। ছ’-সাত জন ভাটি-মালিক রয়েছে। ভাটিতে জনা পঞ্চাশ গ্রামবাসী দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে কাজ করে। এলাকায় চাষাবাদ হয়। ১০০ দিনের কাজও রয়েছে বলে ব্লক প্রশাসনের দাবি। তবু কিছু মানুষ কিসের টানে চোলাই ব্যবসা ছাড়েন না? ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘হয়তো কম খাটনির জন্যই!’’

গ্রামবাসীদের অনেকে জানান, কারবার চলুক, তাঁরা চান না। কিন্তু কারবারিদের দাপটে টুঁ শব্দ করার উপায় নেই। এক মহিলা বলেন, ‘‘ওই গন্ধে টেঁকা দায়। কিন্তু কিছু বললেই ওরা শাসায়।’’

সমরেশের গল্পে ‘জাঁদরেল কোটাল’ ছিলেন। এখানে নেই? গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করেই ব্যবসা চলছে। পুলিশ অভিযোগ মানেনি। এ দিন দুপুরে পুলিশ এবং আবগারি দফতরের আধিকারিকেরা গ্রামে ঢুকে কিছু ভাটি ভাঙেন। মণীন্দ্র মণ্ডল নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কারবারের মূল মাথারা অধরাই রয়ে গিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। হুগলির (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের আশ্বাস, ‘‘কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরও ধরা হবে।’’

এ ভাবে যে ওই গ্রাম থেকে চোলাই কারবার নির্মূল করা যাবে না, তা মেনে নিয়েছেন বিডিও (বলাগড়) সমিত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মিত অভিযান সত্ত্বেও কিছু লোককে নিবৃত্ত করা যায় না। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট পরিক‌ল্পনা করার চেষ্টা করা হবে।’’ পঞ্চায়েত প্রধান মধুমিতা সমাদ্দারেরও প্রায় একই বক্তব্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch Cottage Industry Village Berhampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE