সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে মদন মিত্র। — নিজস্ব চিত্র
একটা জট কাটল। একটা কাটল না। একটি গণ্ডি পেরোলেন। অন্যটি থেকেই গেল। শুক্রবার, জামিনের অষ্টম দিনেও বাড়ি ফেরা হল না প্রাক্তন মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতা মদন মিত্রের। তবে আদালতের নির্দেশে সিবিআইয়ের অফিসে এ দিন হাজিরা দিলেন তিনি।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদনবাবু দ্বিতীয় দফায় জামিন পেয়েছেন ৯ সেপ্টেম্বর। আলিপুর আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করার পরে ১০ তারিখে জেল থেকে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারেননি আদালতের নির্দেশে আরোপিত একটি গণ্ডির জন্য। এ বারের জামিনের অন্যতম শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, মদনবাবু ভবানীপুর থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। অথচ তাঁর বাড়ি কালীঘাট থানা এলাকায়। সেখানে ফিরলে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করা হয়। তাই জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে মদনবাবু ভবানীপুর এলাকার একটি হোটেলে আছেন।
এই অবস্থায় আদালতের শর্ত সংশোধন ছাড়া মদনবাবুর বাড়ি ফেরার উপায় নেই। তাঁর বাড়ি ভবানীপুরে। সম্ভবত সেটা মাথায় রেখেই আদালত প্রাথমিক ভাবে এমন শর্ত আরোপ করেছিল বলে আইনজীবী শিবিরের ধারণা। কিন্তু এলাকার প্রশাসনিক বিন্যাসে তাঁর বাড়ি পড়ে কালীঘাট থানার এক্তিয়ারে। তিনি যাতে বাড়ি যেতে পারেন, সেই জন্য বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে জামিনের এই শর্ত সংশোধনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী পার্থ মুখোপাধ্যায় ও শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তাঁদের যুক্তি ছিল, সল্টলেকে সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দিতে হলেও তো তাঁকে শহরের একাধিক থানা এলাকা পেরিয়ে যেতে হবে। ওই সব থানা এলাকা পেরিয়ে মদনবাবু যাতে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হতে পারেন, সেই জন্যও শর্ত বদলের আবেদন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার এক কর্মীর মৃত্যুতে আদালতে ছুটি হয়ে যায়। তাই ওই দিন মদনবাবুর আবেদনের শুনানি হয়নি।
প্রাক্তন মন্ত্রীর স্বজন ও সঙ্গীদের আশা ছিল, আদালত শুক্রবার ওই আবেদন শুনবে। কিন্তু এ দিনও শর্তের সংশোধনী সংক্রান্ত আর্জির শুনানি হয়নি। ২০ সেপ্টেম্বর তিনি ওই আবেদন শুনবেন বলে জানান বিচারক। মদনবাবুর আইনজীবী পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সল্টলেকে সিবিআইয়ের অফিসে যাওয়ার জন্য কোনও বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন নেই বলে এ দিন জানিয়ে দিয়েছে আদালত। বলা হয়েছে, ভবানীপুর থানা এলাকা থেকেই সপ্তাহে এক দিন সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের অফিসে যেতে পারবেন মদনবাবু।’’
আদালতের শুনানির পরেই এ দিন মদনবাবু হোটেল থেকে কালো গেঞ্জি, কালো প্যান্ট পরে সিজিও কমপ্লেক্সে রওনা হয়ে যান। বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ সিবিআই দফতরে হাজির হন তিনি। সেখানে ঢোকার আগে বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ভবানীপুর থানা এলাকার বাইরে যেতে পারব না। কিন্তু সিবিআই অফিস তো ভবানীপুরের বাইরে। তাই আদালতের অনুমতি চেয়েছিলাম। আদালত যে-ভাবে বলবে, তেমন ভাবেই চলব। সিবিআইয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব।’’
প্রায় এক ঘণ্টা সিবিআই দফতরে কাটিয়ে বাইরে এসে মদনবাবু বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্তারা অফিসের কাজে দিল্লিতে রয়েছেন। কিছু কাগজপত্রের কাজ ছিল। আমি যে এসেছিলাম, তা সিবিআইকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’’
সিঙ্গুর-প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন করা হয় মদনবাবুকে। তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গুর এখন পাঠ্যক্রমে আসছে। আমি মনে করি, মে দিবসের চেয়ে কম নয় সিঙ্গুর। তবে এটা আমি এক জন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বললাম। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে নয়।’’ মদনবাবুর জন্য এ দিন জোরদার পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল সিজিও কমপ্লেক্সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy