অলচিকিতেই তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। লালগড়ের পূর্ণাপানিতে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের ময়দানে যত বেশি বিরুদ্ধ প্রার্থী তত লাভ শাসকের। চেনা এই অঙ্কের বিপরীত কি কিছু ঘটতে চলেছে জঙ্গলমহলে! ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রার্থীর নাম জানার পরে শাসক শিবিরের অন্দরে শঙ্কায় অন্তত তেমনই ইঙ্গিত।
তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ডী জোট— মূলত এই পাঁচ প্রার্থীর লড়াই এ বার ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে। আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এসে ভূমিজ ও মুন্ডারাও পৃথক প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তাঁদের প্রার্থী হচ্ছেন মিত্তন সিংহ। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতারা মুখে বলছেন, দলীয় প্রার্থী বিরবাহা সরেনের জয় নিশ্চিত।
তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা আহ্বায়ক উজ্জ্বল দত্তের কথায়, ‘‘ঝাড়খণ্ডীরা বিধানসভায় প্রার্থী দিয়ে গো-হারা হেরেছিল। এ বারও ওরা বেশির ভাগ বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পারবে কি-না সন্দেহ। নরেন হাঁসদার প্রয়াণের পরে তাঁর দলের লোকজন দলে দলে আমাদের দলে এসেছেন। তাঁরা আমাদের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।’’ কিন্তু তৃণমূলের অন্দরেই শঙ্কা, ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) ও ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি জোট বেঁধে প্রার্থী দিলে ঝাড়গ্রাম আসনে লাভের কড়ি তুলতে পারে বিজেপি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পাশাপাশি, বিজেপি শিবিরেরও দাবি, ঝাড়খণ্ডী দু’টি দল জোট করে প্রার্থী দিলে তৃণমূলের ভোটেই ভাগ বসাবে তারা। তাতে বিজেপি প্রার্থীরই লাভ হবে। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলে একসময় আঞ্চলিক দলগুলির লোকজনকে ভাঙিয়ে তৃণমূল দলভারী করেছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন সেই সব আঞ্চলিক দল জোট করায় তৃণমূলের চিন্তা বাড়াটা স্বাভাবিক। ঝাড়খণ্ডী জোট প্রার্থী দিলে আমাদের তো লাভ। চিন্তা তো তৃণমূলেরই।’’
জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডী আবেগ যথেষ্ট। প্রয়াণের বহু দিন পরেও ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি নরেন হাঁসদাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন আদিবাসীরা। সেই ঝাড়খণ্ড পার্টি এ বার ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির সঙ্গে জোট করে ঝাড়গ্রামে প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা করেছে। ১ এপ্রিল প্রার্থী ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডী জোটের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন নরেনের মেয়ে সাঁওতালি অভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদা। তবে গত বিধানসভায় বিনপুরে নামমাত্র ভোট পেয়েছিলেন বিরবাহা।
যদিও তৃণমূল কর্মীদের একাংশ বলছেন, এ বার পরিস্থিতি অন্যরকম। ২০১১ সালের পরে চুনিবালার দল ভেঙে ঝাড়খণ্ডী নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডী জোট প্রার্থী লড়লে তিনি তৃণমূলের ভোটেই ভাগ বসাবেন। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় বিজেপি-র ভোটের হার বেড়ে হয়েছে ৩৭ শতাংশ। আর তৃণমূলের ভোট কিছুটা কমে হয়েছে ৪৩ শতাংশ। এ বার তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেনকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আদিবাসী সমাজ। সিপিএমের নিজস্ব কিছু ভোট থাকলেও গ্রামাঞ্চলে তলে তলে সিপিএমের নিচু তলার কর্মীরা তৃণমূলকে ‘শিক্ষা’ দিতে কী ভূমিকা নেন তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে শাসক-শিবিরে। এত দিন নির্বাচনে কুড়মি-রা (মাহাতো) তৃণমূলকেই সমর্থন করেছেন। তবে কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তির দাবিতে সহমত নয় সাঁওতাল সম্প্রদায়।
তা ছাড়া, ঝাড়গ্রামের বিদায়ী সাংসদ উমা সরেন জেনিভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কুড়মিদের দাবিকে সমর্থন করায় সাঁওতালদের সামাজিক সংগঠন মাঝি পারগানা মহল ক্ষুব্ধ হয়। উমার বিরুদ্ধে পথে নেমে বিক্ষোভও দেখান পারগানা মহলের একাংশ। পারগানা মহলের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী বিরবাহাকে যে তাঁরা সমর্থন করবেন না, তা স্পষ্ট করেছেন কুড়মি সংগঠনের নেতা সঞ্জয় মাহাতো।
এই সব ছোট ছোট হিসেবেই কাঁটা বিঁধছে ঘাসফুলে। ভোট ভাগাভাগি নিশ্চিত জেনেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না শাসক শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy