হামলার পর জগদ্দলে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
সপ্তম তথা শেষ দফার ভোট মিটে গেলেও, রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা এখনও থামছে না। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গা থেকে গোলমালের খবর আসতে শুরু করেছে।
সোমবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বোমাবাজিরও অভিযোগ উঠেছে। নতুন করে গোলমালের পর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। রবিবার থেকে এখনও পর্যন্ত ৭০ জনের বেশি গ্রেফতার হয়েছে। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভাটপাড়ায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধার। ৫ জনের বেশি কোথায় জমায়েত হলেই এবার গ্রেফতার করা হবে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর। এছাড়া রবিবার রাত থেকে দফায় দফায় বিজেপি-তৃণমূলের কর্মীরা সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছেন দমদম, কলকাতা, হাবড়া, মথুরাপুর, জয়নগরেও। ভাটপাড়ায় হিংসার ঘটনায় প্রতিবাদে এ দিন কাঁকিনাড়া স্টেশনের কাছে প্রায় দু’ঘণ্টা রেল অবরোধের জেরে নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা।
বাংলায় হিংসার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পীযূস গোয়েল ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে হিংসার বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভোট পরবর্তী হিংসায় রক্তাক্ত হচ্ছে বাংলা। হিংসার ঘটনা বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে ইভিএমের স্ট্রং রুম নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে অনুরোধ করেছি। নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি যতদিন থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিও যেন থাকে।’’ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে খবর, ভোটের ফল ঘোষণা পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ২০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকছে।
আরও পড়ুন: ‘মধ্যপ্রদেশে সরকার সংখ্যালঘু’, বিশেষ অধিবেশন চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি বিজেপির
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে হিংসার ঘটনায় বিজেপিকে দুষে চিঠি দেন ভাটপাড়া উপনির্বাচনের প্রার্থী মদন মিত্র। নির্বাচনের দিন গোলমালের ঘটনায় তাঁর অভিযোগের আঙুল বিজেপির দিকে।
রবিবার ভোটের দিন উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুর ২ পঞ্চায়েতের সালকিয়া বুথে যাওয়ার সময় তৃণমূল সমর্থক দুই মহিলার উদ্দেশে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় তৃণমূলের সঙ্গে বচসা শুরু হয় বিজেপি কর্মীদের। ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। সেই ঘটনার রেশ ছিল সোমবারও। এ দিন সালকিয়ায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা রঞ্জিত পাল বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে হাজির হন তৃণমূল সমর্থকেরা। ওই বৈঠক থেকে ফেরার পথে বিজেপি নেতা দিলীপ বালার নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীদের উপর হমলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি বাইক। খবর পেয়ে হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অজিত সাহা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হন। ফুলতলা মোড়ে তাঁর গাড়ি আটকে তাণ্ডব চালায় বিজেপি সমর্থকেরা। গাড়ি ভাঙচুর করে হেনস্থা করা হয় সভাপতিকে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্রেফতারির আশঙ্কা, আইনি রক্ষাকবচের সময়সীমা বাড়াতে শীর্ষ আদালতে রাজীব কুমার
রবিবার রাতে দমদমে এক বিজেপি কর্মীর বৃদ্ধ বাবাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভোট মিটতেই, তৃণমূল সমর্থকেরা চড়াও হন ওই কর্মীর বাড়িতে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়ায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত বাপ্পা দাস। অভিযোগ, ভোট মিটটেই রাতে তাঁদের বাপ্পার বাড়িতে চড়াও হন কয়েক জন যুবক। বাপ্পাকে না পেয়ে তাঁর বাবা বিমল দাসকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিমলবাবুকে।
মানিকতলা থানা এলাকার বেঙ্গল কেমিক্যাল এলাকায় একটি ক্লাবে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, রবিবার ভোটারদের আটকায় তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। অন্য গোষ্ঠী তাঁদের বুথে নিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার জেরে এ দিন দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। স্থানীয় একটি ক্লাব ভাঙচুর করেন তৃণমূল কর্মীরা। এই ঘটনায় মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের হুঁশিয়ারি, ‘‘কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী পুলিশ পদক্ষেপ করবে।’’
রবিবার উপ নির্বাচনে রাজনৈতিক হিংসায় রক্তাক্ত হয়েছে ভাটপাড়া। তার রেশ এখনও রয়েছে এলাকায়। এ দিন সকালে রেল অবরোধের পর আর্য সমাজ রোডে দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এই ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
শুরুটা হয়েছিল কাঁকিনাড়া স্টেশনে রেল অবরোধ দিয়ে। সোমবার সকালেই অফিস টাইমে ভুগতে হয় শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর মেন লাইনের যাত্রীদের। অবরোধে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছিলেন বিজেপি কর্মীরাও। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন বিজেপি সমর্থকেরা। জগদ্দলেও চলে বিক্ষোভ।
মথুরাপুর বিধানসভা এলাকায় দুই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত হয়েছেন চন্দন মণ্ডল, নান্টু বেরা। জয়নগরের গোসাবাতে আক্রান্ত হয়েছেন তিন বিজেপি কর্মী। এ ছাড়া বারুইপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় অশান্তি তৈরি হয়। দুই দলের বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে, চলে মারধরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy