ব্যস্ততা: পাশাপাশি মেশিনে ছাপা হচ্ছে নানা দলের ফ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র
শশব্যস্ত কারখানা মালিক। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘‘ওরে এ বার দেরি হয়ে যাচ্ছে, তৃণমূলটা চাপিয়ে দে।’’
কর্মীর উত্তর, ‘‘দাদা, পদ্মর অর্ডার শেষ না করে ঘাসফুল তুলব কী করে!’’
একই মেশিন থেকে হই হই করে বেরোচ্ছে ফ্লেক্সের প্রিন্ট। কখনও ঘাসফুল, কখনও কাস্তে-ধানের শিস, কখনও হাত আবার কখনও পদ্ম। সব দল মিলেমিশে একাকার ফ্লেক্স তৈরির ছাপাখানায়। দিনরাত এক করে ঘরঘর শব্দে মেশিন চলছে। রঙের গন্ধে আশেপাশের এলাকার বাতাস ভারী।
ভোটের আবহে ফ্লেক্সের কারবারে রমরমা। কিন্তু সামনে আবার বিয়ের মরসুম আসছে। ভোটের কাজ সামলে কী ভাবে বিয়ের কার্ড ছাপা হবে, তা ভেবে এখনই দুশ্চিন্তায় মালিকেরা। কম্পিউটারে যাঁরা ডিজাইন করেন তাঁদেরও ব্যস্ততা তুঙ্গে। কম্পিউটার মনিটরে তৃণমূল প্রার্থী নুসরতের ছবির পাশেই শোভা পাচ্ছে বিজেপির সায়ন্তনের ছবি। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে হয় তো তখন তাগাদা দিচ্ছেন দু’দলের কর্মীরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
একটি ছাপাখানার মালিকের কথায়, ‘‘দুই কেন, কখনও কখনও তো চার দলের কর্মীরাই এসে হাজির এক সঙ্গে। তবে সকলেই ব্যস্ত। কেউ কারও সঙ্গে কথায় জড়িয়ে পড়ে সময় নষ্ট করছেন না। আবার কখনও দেখছি, কংগ্রেস কর্মী বিড়ি ধরিয়ে নিচ্ছেন তৃণমূল সমর্থকের কাছ থেকে।’’ দার্শনিকের মতো গম্ভীর গলায় মালিক বললেন, ‘‘এটা ব্যবসার জায়গা দাদা। এখানে সবাই সমান।’’
বসিরহাটের রেজিস্ট্রি অফিস, জামরুলতলা, ঘড়িবাড়ি, স্টেশন রোড সহ পাঁচ-ছটির মতো জায়গায় মেশিনে ফ্লেক্স ছাপা হয়। মেশিনের দাম প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। এত খরচের ব্যবসায় প্রচু লোক নামেননি। ফলে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে আসতে হচ্ছে সব দলের লোকজনকেই।
প্রচারের কায়দায় এখন ফ্লেক্সের কদর সব থেকে বেশি। আগে আলতা, এবং কাপড় কাচার নীল দিয়ে সাদা কাগজে পোস্টার লেখা হত। কাপড়ের উপরে চক দিয়ে এঁকে তার উপরে হাতে লিখে রঙ লাগাতে বেশ সময় লেগে যেত। খরচও ছিল বেশি। সে সময়ে প্রার্থীদের ছবি এ ভাবে ছাপা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ফ্লেক্স ছাপানোর কারিগরি আসার পর থেকে প্রচারের ধরনধারণ অনেক বদলেছে। পুরোটাই বেশ ঝাঁ চকচকে। প্রার্থীদের বড় বড় ছবি, কাটআউট তৈরি হচ্ছে।
বসিরহাট স্টেশনের কাছে একটি ফ্লেক্স ছাপার কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, ব্যস্ত সকলেই। গ্রাফিক ডিজাইনার অমিয় ভারতী বললেন, ‘‘এখানে সব বড় দলের প্রার্থীদেরই কাজ চলছে। যত অর্ডার আসছে, কী ভাবে সব সামলে উঠব বুঝতে পারছি না। দিনরাত এক করে সকলে কাজ করছে।’’
আর এক কোম্পানির মালিক প্রণব মণ্ডলের কথায়, ‘‘পুজোর সময়েও কাজের চাপ থাকে। কিন্তু ভোটের মরসুমে ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। তার উপরে লোকসভা ভোট বলে কথা। প্রচুর টাকার কাজ আসছে। আমরা কাউকেই ফেরাতে চাইছি না। যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’’
বাদুড়িয়ায় ছাপাখানার মালিক নুরুল ইসলামের কথায়, ‘‘ফ্লেক্স প্রচুর ছাপা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ক্রমশ জনপ্রিয় হওয়ার পরে মনে হয় গতবার ভোটের থেকে কাজ তুলনায় কম।’’
তবে মার খাচ্ছে কাপড়ের পতাকা তৈরির ব্যবসা। বসিরহাট শহরের পুরনো বাজার এলাকার দোকানি পঙ্কজ নাথের কথায়, ‘‘ফ্লেক্স আসার পরে কাপড়ের ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন বিক্রি প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy