Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগীর মৃত্যু সাগর দত্ত হাসপাতালে, ভাঙচুর, তাণ্ডব

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ডেও হামলা চালানোর চেষ্টা হয়েছিল।

তছনছ করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের অভ্যন্তরে। —নিজস্ব চিত্র

তছনছ করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের অভ্যন্তরে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ১৭:৪৬
Share: Save:

করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু রোগীর। তার জেরে প্রায় রণক্ষেত্র কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ ভেঙে তছনছ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল রোগীর পরিজন এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা লোকজনের বিরুদ্ধে। মার খেলেন কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মীও। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পুলিশ ডাকতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। যে পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, তা জেনেও এই ধরনের হামলা কেন? প্রশ্ন তুলছে গোটা হাসপাতাল।

যে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুক্রবার হামলা হয়েছে সাগর দত্ত হাসপাতালে, তিনি কামারহাটি এলাকারই বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৫৬ বছর বয়সী ওই রোগীর গুরুতর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল এবং পরিস্থিতি যথেষ্ট সঙ্কটজনকই ছিল। উপসর্গগুলি কোভিড-১৯ সংক্রমণের, ফলে আইসোলেশন ওয়ার্ডেই ভর্তি করে নেওয়া হয় ওই রোগীকে। রাতভর তাঁর উপরে যথাযথ নজরও রাখা হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। এ দিন সকাল থেকে তার শারীরিক অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হতে শুরু করে। রোগীর পরিজনদের সে কথা জানানো হয় এবং তাতেই তাঁরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বলে খবর। আরও বেশি লোকজন জোগাড় করে এনে হাসপাতালে তাঁরা ভাঙচুর শুরু করেন বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে রোগীও মারা যান।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ডেও হামলা চালানোর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ওই বিভাগ রক্ষা পায়। কিন্তু বেশ কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মী মার খান হামলাকারীদের হাতে।

হাসপাতালে তাণ্ডবের চিহ্ন তখনও স্পষ্ট। —নিজস্ব চিত্র

হাসপাতাল সুপার পলাশ দাস-সহ ১৭ জন চিকিৎসক এই মুহূর্তে কোয়রান্টিনে। করোনায় আক্রান্ত দুই কর্মীর সস্পর্শে আসায় তাঁদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে বৃহস্পতিবারই। ফলে এ দিন হামলার সময়ে সুপার ছিলেন না হাসপাতালে। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ভাবে হামলা হতে থাকলে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে বলে তিনি আক্ষেপ করেছেন। আনন্দবাজারকে হাসপাতাল সুপার ফোনে বলেছেন, ‘‘চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও যে মানুষ, সেটা ভুলে গেলে খুব মুশকিল। অন্য সবার মতো চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও কিন্তু আতঙ্কে রয়েছেন। সেই আতঙ্ক সরিয়ে রেখে তাঁরা কাজ করছেন। তার পরেও যদি এ ভাবে হামলা হয়, তা হলে কাজ করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।’’

আরও পড়ুন: কেন্দ্র বলল, বাংলায় ১০টি রেড জোন, প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্য বলল ৪

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে রোগী মারা গিয়েছেন, তাঁর ডায়াবিটিস ছিল। যখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তত ক্ষণে পরিস্থিতি বেশ গুরুতর হয়ে উঠেছিল বলেও খবর। হাসপাতাল সুপার পলাশ দাসের কথায়, ‘‘ওই রোগী প্রথম থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিলেন। হাসপাতাল সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাঁচানো যায়নি। কিন্তু পৃথিবীর কোনও চিকিৎসকই যে রোগীকে মারতে চান না, বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টাই যে প্রত্যেকে করেন, সেটা চিকিৎসকদের এখনকার ভূমিকা দেখেও যদি কেউ বুঝতে না পারেন, তা হলে আমরা অসহায়।’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড দেশে

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী সংগঠনের নেতা তথা ওই হাসপাতালেরই চিকিৎসক বাপ্পাদিত্য করও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ দিনের হামলার ঘটনায়। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণের কারণে দুটো বিভাগ এমনিতেই বন্ধ করতে হয়েছে, ৩৬ জন কোয়রান্টিনে। তার মধ্যে এসে ইমার্জেন্সি বিভাগটা ভেঙে দিয়ে গেল। এই ভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালে কাজ চালানো সম্ভব হবে কী ভাবে, জানি না।’’ পরিস্থিতি এ দিন এতই উত্তপ্ত হয়েছিল যে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চাইতে হয়েছে বলে তিনি জানান। হামলার খবর পেয়েই কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির আমন্ত্রিত সদস্য মদন মিত্র তৎপর হন এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানা গিয়েছে। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছে, তা এখনও বিশদে জানা যায়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE