Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

লক্ষ্য কাজল-ঘনিষ্ঠ ভাই, খুন হলেন দাদা

বোলপুরের বাহিরি-পাঁচশোয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানপুর গ্রামের এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলেই দাবি নিহতের পরিবারের।

শোকার্ত: ভেঙে পড়েছেন নিহত শেখ গোলেমান এর পরিজনেরা। বোলপুরে। শুক্রবার।

শোকার্ত: ভেঙে পড়েছেন নিহত শেখ গোলেমান এর পরিজনেরা। বোলপুরে। শুক্রবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৭
Share: Save:

পনেরো-কুড়ি জন সশস্ত্র আততায়ী ভাইয়ের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ এই দৃশ্য দেখে ‘ভাইকে মেরে দিল, ওকে বাঁচান’ বলে প্রতিবেশীদের সজাগ করেছিলেন দাদা শেখ গোলেমান (৫২)। তাতে ভাই বাঁচলেও, নীচ থেকে ছোড়া গুলি প্রাণ কাড়ল গোলেমানের।

বোলপুরের বাহিরি-পাঁচশোয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানপুর গ্রামের এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলেই দাবি নিহতের পরিবারের। গোলেমানের ভাই, ওই পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্য শেখ ইরফানের অভিযোগ, তাঁকে মারতেই দুষ্কৃতীরা রাতের বেলায় চড়াও হয়। নানুরের প্রাক্তন যুবনেতা কাজল শেখের এই অনুগামী শুক্রবার বোলপুর থানায় এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরার গোষ্ঠীর সাত জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘এ সবের সঙ্গে দলের যোগ নেই। পারিবারিক বিবাদ থেকেই ওই ঘটনা।’’ একই দাবি গদাধরের।

স্থানীয় সূত্রের খবর, কাজল-গদাধরের দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় দু’বছর ঘরছাড়া ছিলেন ইরফান। দিন সতেরো হল ফিরেছিলেন। বাইরে বিশেষ বেরোতেনও না। প্রাণের ঝুঁকি যে রয়েছে, ঘরোয়া আলোচনায় সে কথাও বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। ইরফানের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে বিভু কাজির নেতৃত্বে বোমা, বন্ধুক নিয়ে তাঁর বাড়ির সামনে চড়াও হয় আততায়ীরা। বাড়ির দরজায় ধাক্কায় দেওয়া হয়। দরজা না খোলা হলে পরপর কয়েক’টি বোমা ফাটানো হয়। সেই শব্দেই উঠে পড়েছিলেন পেশায় চাষি গোলেমান। ছাদে উঠতেই আচমকা নীচ থেকে গুলি এসে সরাসরি বেঁধে প্রৌঢ়ের পাঁজরে। বোলপুর হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে জানানো হয়।

শেখ গোলেমান।

যদিও, এমন ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও কাজল-গদাধরের দ্বন্দ্বে বোমাবাজি থেকে খুন, এমনকি পাল্টা খুনও হয়েছে। অনেকের মতে, সেই দ্বন্দ্বের জেরেই বিধানসভা ভোটে হাতছা়ড়া হয়েছে নানুর আসনটিও। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব তো বটেই, রাজ্যনেতাদের হুমকি-হুঁশিয়ারিতেও দ্বন্দ্ব যে মেটেনি এ দিনের ঘটনা তা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে দলের মধ্যের এই লড়াই

থামানো না গেলে কী ফল হবে কে বলতে পারে?’’ প্রতিক্রিয়া মেলেনি নানুরের প্রাক্তন যুব নেতা কাজল শেখেরও। কাজলের এক অনুগামী অবশ্য বলেন, ‘‘এখন দাদার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। তাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব ভিত্তিহীন।’’

তবে নানুর সংলগ্ন বোলপুরের সুলতানপুরে ফের রক্ত ঝরায় ফিরেছে চেনা আতঙ্ক। খবর পেয়ে রাতেই এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী, কমব্যাট ফোর্স গ্রামে যায়। শুক্রবারও চলেছে টহল। এলাকা ছিল সুনসান। এ দিন গোলেমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ছাদে পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। দেওয়ালে গুলির চিহ্ন। পড়ে রয়েছে স্‌প্লিনটারও। ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা।

—নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE