২১ জুলাইয়ের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুকের ভিডিয়ো থেকে।
অভিষেক তাঁর বক্তৃতা শেষ করলেন ২৪ মিনিটের মাথায়। তবে বক্তৃতা শেষের আগে দলে নবীন এবং প্রবীণদের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করার বার্তাও দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
অভিষেক বললেন, ‘‘যাঁরা নতুন, তাঁদের ২১ জুলাইয়ের ইতিহাস, তৃণমূলের লড়াই এবং নেত্রীর লড়াই সম্পর্কে জানতে হবে। আর যাঁরা পুরনো রয়েছেন, তাঁদেরকেও নতুনদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার জন্য মাঠে নেমে লড়াই করতে হবে। সামঞ্জস্য রেখে করতে হবে। পুরনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের উৎসাহ-উদ্দীপনা তৃণমূলের একই বৃন্তে দু’টি কুসুম।’’
শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে— দলের কর্মীদের বার্তা অভিষেকের। বললেন, ‘‘তৃণমূলের কর্মীরাই তৃণমূলের শক্তি। আমাদের কর্মীদের সংযত হতে হবে। কোনও রকম বাগ্বিতণ্ডায় জড়াবেন না। বিজেপিকে ভোট দিয়ে মানুষ জেতাননি, মানুষ আপনাদের ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন। তার কারণ, আপনার পাড়া আপনার এলাকায় আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে সেই মানুষগুলো বিশ্বাস করেছেন। বিজেপির কর্মীদের বিশ্বাস করেননি। আমাদের সংযত থাকতে হবে।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘যা কথা দিয়েছি, সব পালন করব, আপনারা কথা দিচ্ছেন তো? আগামী দিনে আমরা জিতব, কিন্তু সেই জয় যেন ২০২১ এর থেকেও বড় হয়, ২০২৪ সালের থেকেও বড় হয়। এই শপথ নিয়ে আমাদের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ ছাড়তে হবে। তাই আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।’’
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করার বার্তা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, যাঁরা পুরসভা বা পঞ্চায়েতের দায়িত্বে আছেন, তাঁদের শুধু নিজের কথা ভাবলে চলবে না। কর্মীদের কথা ভাবতে হবে। ভোটের আগে আমি জেলায় জেলায় গিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছিলাম। সেই সঙ্গে বলেছিলাম, ‘‘ভোটে কে, কী রকম ভূমিকা পালন করেছে, তা পর্যালোচনা করে দেখব ভোটের পরে। বলেছিলাম, পুরসভা আর পঞ্চায়েতের ভোটের সময় আপনারা নিজেদের টিকিটের জন্য লড়বেন আর যখন লোকসভা বা বিধানসভা ভোট আসবে তখন দল আশানুরূপ ফল করবে না, তবে দল আপনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে।’’ পঞ্চায়েতে আপনি নিজের ভোটে খেটে জিতবেন আর লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের সময় ভাববেন পার্টি দেখে নেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক একটা সভা করে যাবেন, তা হলেই জিতে যাবেন! সেটা চলবে না। নিজের ভোটে যেমন পরিশ্রম করেন, তা-ই করতে হবে। যাঁরা করেননি, সেই সব পর্যালোচনার কাজ শেষ। তিন মাসের মধ্যেই পদক্ষেপ করা হবে।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কথা দিচ্ছি, নির্বাচনে যাঁরা পঞ্চায়েত বা পুরসভার পদে থেকেও মানুষকে বোঝাতে অক্ষম হয়েছেন বা তাঁদের এলাকা থেকে প্রত্যাশিত ফল হয়নি, একই ভাবে আমরা টাউন সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব, মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।’’
এক-দেড় মাসের বিরতিতে কী করেছেন, জানিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, এই এক-দেড় মাস আপনারা আমাকে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে দেখেননি। তার কারণ, আমি পর্যালোচনা করছিলাম। সেই পর্যালোচনার ফল আপনারা তিন মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন। দলীয় কর্মীদের অভিষেক বললেন, কে কী কাজ করেছেন, তা আমি পর্যালোচনা করেছি। ভোটে কার ভূমিকা কেমন ছিল, তার পর্যালোচনা শেষ। এ বার পদক্ষেপ করা হবে।
অভিষেক বললেন, রাজ্যে এসএসসি এবং টেট কেলেঙ্কারির সময় অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। কিন্তু স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি নিট কেলেঙ্কারি। সে ক্ষেত্রে কী হচ্ছে? সেখানে ইডি, সিবিআই কিছু করছে না কেন?
ডায়মন্ড হারবারে তাঁকে জেতানোর জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানালেন অভিষেক। তবে একই সঙ্গে লোকসভা ভোটের জয় নিয়ে দলীয় কর্মীদের বার্তা দিলেন, ‘‘আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই।’’ এ-ও বললেন, যে সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে বিজেপি গোটা দেশের সামনে বাংলার বদনাম করেছিল, সেই সন্দেশখালির লোকসভা কেন্দ্র বসিরহাটে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে জিতেছে তৃণমূল।
লোকসভা ভোটে জয়ের মূল কারিগর কারা? জানালেন অভিষেক। বললেন, ‘‘এই জয়ের মূল কারিগর তৃণমূল সমর্থকদের পাশাপাশি সমস্ত দেশ জুড়ে এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই, অখিলেশ যাদব। কিছু ক্ষণের মধ্যেই এঁরা দু’জনেই সভামঞ্চে সশরীরে উপস্থিত হবেন।’’
অভিষেক বললেন, লোকসভা ভোটের জয় জনতা এবং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে অর্পণ করছি।
মঞ্চে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির পাশে বসে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ২১ জুলাইয়ের সভার প্রস্তুতি পর্বের সময় চোখের চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলেন অভিষেক। সুব্রতই ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির প্রস্ততির দায়িত্বে ছিলেন।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চে উঠে তৃণমূল শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেন। জড়িয়ে ধরলেন ইউসুফ পাঠানকে, তার পরে মিনিটখানেক কথা হল তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পরে মঞ্চে উপবিষ্ট অভিষেকের সঙ্গে কথা বলে গেলেন ইন্দ্রনীল সেনও।
তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে পৌঁছলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুর ১২ টা থেকে সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল। অভিষেক সভাস্থলে পৌঁছলেন নির্দিষ্ট সময়ের ১০ মিনিট আগেই। শহিদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন। বেদির সামনে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে মাটিতে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম জানালেন। তার পরে উঠলেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy