গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে শুনানি শেষ। সকাল ১১টা নাগাদ শুরু হয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত চলল শুনানি। মাঝে ৫০ মিনিটের বিরতি ছিল। অর্থাৎ, প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধরে শুনানি হয়েছে প্রধান বিচারপতির এজলাসে। দু’দফা শুনানির প্রথম দফার পুরোটাই আদালতে উপস্থিত থেকে সরাসরি শুনানি শুনেছেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এবং জনস্বার্থ মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারী। দুপুর আড়াইটে নাগাদ তিনি আদালত চত্বর ছেড়ে বের হন। সেই সঙ্গে জানিয়ে যান, হাই কোর্ট তাঁর ভূমিকাকে যে ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাতে তিনি খুশি এবং সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আদালতের নির্দেশের ব্যাপারে আশাবাদী। প্রথম দফায় মনোননয়নের সময় বৃদ্ধি এবং পঞ্চায়েত ভোটের দিন পিছোনোর পক্ষে যুক্তি দেন প্রধান বিচারপতি। এ-ও বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করালেই ভাল। দ্বিতীয় দফায় মামলাকারীরা সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ভোট করানো নিয়ে বক্তব্য জানান প্রধান বিচারপতিকে। প্রধান বিচারপতিও কমিশনকে এ ব্যাপারে নিজের মতামত জানান। অবশেষে বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ শুনানি শেষ হলে বিচারপতি রায়দান স্থগিত রাখেন।
কমিশনের আইনজীবী বললেন, সুষ্ঠু ভোট করাতে নিরাপত্তার বিষয়টি কমিশন বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আদালত বলে দিতে পারে না। এর আগে পুরসভার ভোটের সময়ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে হাই কোর্ট কমিশনের উপরেই স্বাধীনতা দিয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি পাল্টা বললেন, হাই কোর্ট তো এটাও বলেছিল, কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটলে নির্বাচন কমিশন দায়ী থাকবে। কোনও অশান্তি কি তখন হয়নি?
বিজেপির আইনজীবী বললেন, প্রচুর জায়গায় অশান্তি হয়েছিল। রক্তপাতও হয়েছিল।
কমিশনের কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলেন, ‘‘ধরুন, এক জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বুথের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনারা এনসিসি-র ছেলেদের নিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু বুথের ভিতরে পোলিং অফিসার হিসাবে ওই কর্মীকে ব্যবহার করতে পারেন কি?’’ কমিশনকে প্রধান বিচারপতি বললেন, স্বচ্ছ ভোটের লক্ষ্য়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়মগুলি খতিয়ে দেখা দরকার।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ব্যবহার করা হবে না, আদালতকে জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে তাদের যুক্তি, ভোটকর্মীর অভাব হলে ঘাটতি মেটাতে চুক্তিভিত্তিক কর্মী, এনসিসি-র সদস্য, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করতে পারে কমিশন।
পঞ্চায়েত মামলার দ্বিতীয় দফার শুনানিতে নির্বাচনে সিভিক ভলান্টিয়ার বা চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের ভোটের কাজে ব্যাবহার করার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা চাই কোনও চুক্তিভিত্তিক কর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ার কোনও ভাবেই এই নির্বাচনে যেন অংশ না নেয়। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে তাঁদের বাদ রাখা হোক। কমিশন এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখুক।’’
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানিয়েছে বিরোধীরা। অন্য দিকে কমিশন বলেছিল, রাজ্যের পুলিশের উপরেই আস্থা রাখা উচিত। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে রাজ্যের নজরদারিতে ভোট নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের পাশাপাশি অন্যান্য জনস্বার্থ মামলাকারীরাও আপত্তি তুলেছেন ভোটে সিভিক ভলান্টিয়ার বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করা নিয়ে। তার পরেই এই মত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ভোট করানো নিয়ে প্রশ্ন তুলল সিপিএমও। সিপিএমের আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইন্সপেক্টর জেনারেল আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সিভিক ভলান্টিয়ার কাজ করবে না। কিন্তু গত দু'দিনে দেখা গিয়েছে, রানিনগর এবং ডোমকলে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েছে সিভিক ভলান্টিয়াররা। সম্ভবত পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী ছিল না। ভোট করাতে সম্ভবত পর্যাপ্ত পুলিশও নেই রাজ্যের কাছে।’’
পঞ্চায়েত ভোটে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার পক্ষে আর্জি জানাল কংগ্রেস। কংগ্রেসের আইনজীবী ঋজু ঘোষাল বলেন, ‘‘আমাদের অনেক আবেদনই বলা হয়েছে, আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার কথা। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরের পাশাপাশি বাইরেও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হোক। আমাদের মতে, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ১ কিলোমিটার পর্যন্ত সবটাই ভিডিয়োগ্রাফি করা হোক।’’
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, স্থানীয় স্তরে নির্বাচন পরিচালনা সরকারি কর্মীদের দ্বারাই হয়। প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হয়। ইতিমধ্যে এই সংগঠনের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই এঁরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে ভোটগ্রহণ করাতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।
পঞ্চায়েত ভোটের কাজে সিভিক ভলান্টিয়ার, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের কেন ব্যবহার করা হবে? কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে প্রশ্ন তুললেন তৃতীয় জনস্বার্থ মামলাকারী। মামলাকারীর আইনজীবী সুবীর সান্যালের প্রশ্ন, ‘‘উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কী ভাবে ওই কর্মীরা ভোটের কাজে অংশ নিতে পারেন? এটা জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের পরিপন্থী। এর আগেও তাঁদের ব্যবহার করা হয়েছে।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কর্মীদের ভোটের কাজে লাগিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সে কথা মেনে নিয়েই মামলাকারীর যুক্তি, ‘‘তার প্রেক্ষিত ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু সাধারণ ভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্থায়ী কর্মীদের ভোটের কাজ থেকে বিরত রাখার পক্ষেই মত জাতীয় কমিশনের। তাই পঞ্চায়েত ভোটের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকেও এই চুক্তিভিত্তিক কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বাদ দেওয়া হোক।’’
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের সময় কম— এই অভিযোগ এনেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধীরা। সেই মামলার শুনানিতে পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নের সময় বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এমনকি, প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা সময় মনোনয়ন পেশের জন্য অপর্যাপ্ত বলেও পর্যবেক্ষণ বিচারপতির। এ প্রসঙ্গে কমিশন অবশ্য বলেছে, মনোনয়নের সময় চাইলে এক দিন বাড়ানো যেতে পারে। অর্থাৎ, ৯ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত যে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল, তা ৯ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত করা যেতে পারে। এর প্রত্যুত্তরে বিচারপতি বলেন, সে ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোট ১৪ জুলাই করাতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy