এখান থেকেই বিলি করা হচ্ছে খাবার। অশোকনগরে। নিজস্ব চিত্র
সিপিএম তথা বামেদের একদা খাসতালুক বলে পরিচিত ছিল অশোকনগর। রাজ্যে ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালা বদলের পরে থেকে এখানে সিপিএম সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হতে শুরু করে। বহু কর্মী-সমর্থক তৃণমূল শিবিরে নাম লেখান। একের পর নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবি হতে থাকে। গত বছর লোকসভা ভোটে অশোকনগর -কল্যাণগড় পুরসভার ২৩ ওয়ার্ডের একটিতেও ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হরিপদ বিশ্বাস লিড পাননি। ৬টি ওয়ার্ডে লিড পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। বাকি ওয়ার্ডগুলিতে লিড পান বিজেপি প্রার্থী।
এ বার লকডাউন পরিস্থিতিতে এবং আমপান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে রান্না করা খাবার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন সিপিএম তথা বাম নেতৃত্ব। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি কর্মসূচির মাধ্যমে বামপন্থীরা অসহায় মানুষের হাতে রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছেন। পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে শেরপুরমোড় এলাকায় সিপিএমের তরফে ‘জনগণের রান্নাঘর’ নামে কর্মসূচি চলছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়া ফার্মেসি মোড় এলাকায় বিভিন্ন বামপন্থী গণ সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘সংহতি কিচেন’ কর্মসূচি চলছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে রামকৃষ্ণপল্লি এলাকায় বামপন্থী মানুষেরা ‘রন্ধনশালা’ কর্মসূচির মাধ্যমে রোজ রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছেন।
অশোকনগরের সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, ওই কাজে পুরনো, বসে যাওয়া কর্মী ও তরুণ প্রজন্ম যোগদান করছেন। বামপন্থী মানুষ ছাড়াও সাধারণ মানুষ, এমনকী তৃণমূলের সমর্থকেরাও এই কাজে অর্থ সাহায্য করছেন বলে দাবি বামেদের। রোজ গড়ে ৯০০ মানুষকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে জনসংযোগের কাজটাও বেড়ে গিয়েছে। গোটা ঘটনায় আত্মবিশ্বাসী সিপিএম নেতৃত্ব। এই উদ্যোগ আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে তাঁদের বাড়তি অক্সিজেন দিল বলেই জেলা সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন। আগামী দিনে দলীয় সংগঠনকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে বলেও তাঁদের মত। পুরনো এবং কিছুটা নিষ্ক্রিয় কর্মীরাও ইদানীং খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানালেন দলের অন্দরের খবর।
যদিও খাবার দেওয়ার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা দলের অশোকনগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘অভাবে থাকা মানুষকে এই দূর্বিষহ পরিস্থিতিতে রান্না করা খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। গরিব মানুষকে আমরা খাবার দিয়ে রাজনীতি করি না। তবে সরকারের যে যে পদক্ষেপের ফলে আজ মানুষের এই দুর্ভোগ, তার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।"
তবে তৃণমূল বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘সরাসরি দলের ব্যানারে না হলেও আমরা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ক্লাব সংগঠনের মাধমে গরিব মানুষকে খাওয়াচ্ছি। সিপিএমের এ সবের প্রভাব ভোট বাক্সে পড়বে না। কারণ, ওদের কর্মী-সমর্থকেরা সব বিজেপিতে মিশে গিয়েছে।’’
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ভাস্বতী সোম বলেন, ‘‘লকডাউন এবং আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের বামেরা খাওয়াচ্ছে এটা ভাল কাজ। কিন্তু তারমানে এই নয় যে ৩৪ বছরের ঘা মানুষের মধ্যে শুকিয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা গরিব মানুষকে ত্রিপল, শুকনো খাবার দিচ্ছি। রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের ক্যানিং জোনাল কমিটির উদ্যোগেও চলছে কমিউনিটি কিচেন। রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুর্গত পরিবারগুলির কাছে।
প্রায় পঁচিশ দিন ধরে ক্যানিং শহরের বুকে চলছে এই ব্যবস্থা। প্রতিদিন ক্যানিং ১ ব্লকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারেরও বেশি মানুষ ভাত-তরকারির আশায় এই কমিউনিটি কিচেনে আসছেন। এরই মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে বামেরা। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতোই ক্যানিংয়েও কার্যত কোণঠাসা হতে থাকে বামেরা। একের পর এক বাম নেতার বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। বামফ্রন্ট ছেড়ে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরেন অনেকেই।
বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্য সৌরভ ঘোষ বলেন, ‘‘আমপানের পর থেকেই আমা এই এলাকার দুর্গত মানুষের জন্য রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছি। এই কাজের জন্য বহু মানুষ আমাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।” কমিউনিটি কিচেনে খাবার নিতে আসা টগরী বৈদ্য, নীলিমা দাসরা বলেন, ‘‘সামান্য কিছু চাল ও আলু দিয়েছিল পঞ্চায়েত থেকে। ওই দিয়ে ক’দিন সংসার চলবে? লকডাউনে কাজ নেই। ঘরে থাকার উপায় নেই। এরা প্রতিদিন খাবার দিচ্ছে বলে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy