(বাঁ দিকে) সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
এ বারের উপনির্বাচনে ঘোষিত বা অঘোষিত কোনও প্রকার জোট হয়নি বাম-কংগ্রেসের। উভয় দলই আলাদা আলাদা ভাবে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু একক ভাবে লড়েও ভোটের ময়দানে ‘দৈন্য’ কাটল না। সর্বত্রই জামানত জব্দ হয়েছে বাম ও কংগ্রেসের।
বরং কোথাও কোথাও ‘নোটা’-র সঙ্গে লড়াই হয়েছে দু’দলের প্রার্থীদের। গণনা চলাকালীন রাউন্ড ধরে ধরে যখন নির্বাচন কমিশন তথ্য দিচ্ছে, তখন এক এক সময়ে মনে হয়েছে ‘নোটা’র ভোট বাম-কংগ্রেসের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলতে এগিয়ে আসছে। অতিক্রম করলেও করে যেতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই ‘অঘটন’ ঘটেনি।
উত্তরবঙ্গের মাদারিহাটে আবার বাম শরিকদল আরএসপি এবং কংগ্রেস উভয়েরই অবস্থা প্রায় এক। আরএসপি প্রথম চারটি রাউন্ড টানা ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে ছিল। কংগ্রেসও প্রথম চারটি রাউন্ডে ‘নোটা’য় পড়া ভোটের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছিল। পঞ্চম রাউন্ডে তারা ‘নোটা’র থেকে সামান্য এগিয়ে গেলেও ষষ্ঠ রাউন্ডে আবার পিছিয়ে পড়ে। এর পর এগিয়ে কংগ্রেস ‘নোটা’কে ছাপিয়ে গেলেও সর্ব ক্ষণই পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়ে গিয়েছিল। প্রাপ্ত ভোটের হিসাব তেমনই ইঙ্গিত করছে। মাদারিহাটে নোটায় পড়েছে ২,৮৫৬ ভোট। আরএসপি এবং কংগ্রেস যথাক্রমে পেয়েছে ৩,৪১২ এবং ৩,০২৩ ভোট। কোচবিহারের সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। দু’টি রাউন্ডে বাম শরিকদলের থেকে ‘নোটা’য় পড়া ভোটের ব্যবধান ছিল ১০০-রও কম। শেষ রাউন্ডে নোটা এবং ফরওয়ার্ড ব্লক উভয় দিকেই দু’টি করে ভোট গিয়েছে। যদিও সার্বিক ভাবে কোনও রাউন্ডেই নোটার থেকে পিছিয়ে পড়েনি এই বাম শরিকদল। সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছে ৩,৩১৯ ভোট। নোটায় পড়েছে ১,৩১৭ ভোট।
মেদিনীপুরে গণনার ষষ্ঠ ও সপ্তম রাউন্ডে ‘নোটা’র চেয়ে পিছিয়ে পড়ে কংগ্রেস। তার আগের রাউন্ডগুলিতে এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান ছিল ৫০-এর কম। পরের রাউন্ডগুলিতেও একপ্রকার ‘নোটা’র সঙ্গেই লড়াই হয়েছে তাদের। মেদিনীপুরে নোটায় পড়েছে ২,৬২৪ ভোট। কংগ্রেস পেয়েছে ৩,৯৫৯ ভোট।
উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় পিছিয়ে না পড়লেও দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ রাউন্ডে কংগ্রসকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল ‘নোটা’। দু’টি রাউন্ডে ব্যবধান ছিল ১০০-রও কম। ত্রয়োদশ রাউন্ডে তো ৫০-এরও কম ব্যবধান ছিল। শেষ পর্যন্ত নোটা থেকে হাজার দেড়েকের কিছু বেশি ভোটে থেমেছে কংগ্রেস। একই জেলার নৈহাটি আসনে ‘নোটা’য় মোট ভোট পড়েছে ১,৭২৮টি। সেখানে কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ৩,৮৮৩টি। ভোটের মাঠে বামেদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ করা লিবারেশন এখানে প্রার্থী দিয়েছিল। কংগ্রেসের তুলনায় ভাল ফল করেছে লিবারেশন। তারা পেয়েছে সাড়ে সাত হাজারের বেশি ভোট।
বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় কংগ্রেসপ্রার্থী দৃশ্যত রাউন্ডের পর রাউন্ড নোটার সঙ্গে লড়েছেন। কখনও ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। কখনও ‘নোটা’কে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম রাউন্ড শেষে টানা ‘নোটা’র থেকে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ‘নোটা’ থেকে কয়েকশো ভোট বেশি পেয়ে তালড্যাংরায় এ বারের মতো লড়াই থেমেছে কংগ্রেসের।
ভোটের যা ফলাফল, তাতে রাজ্যে কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানছেন প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরী। তবে ভোট ময়দানে দলের ‘দৈন্যে’র জন্য তৃণমূল এবং বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কংগ্রেসের সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই দুর্বল। এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তার উপর বিজেপি এবং তৃণমূল মিলে পশ্চিমবঙ্গে মেরুকরণের রাজনীতি কায়েম করেছে। এই মেরুকরণের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত আমাদের জন্য লড়াই কঠিন! এতে কোনও সন্দেহ নেই।” পক্ষান্তরে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, নির্বাচনী রাজনীতিতে ভোট, সংখ্যা, শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলেও এগুলিই সব নয়। সংগঠনে দুর্বলতার কথাও মানছেন তিনি। তবে সেলিমের কথায়, “আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের পুনর্জাগরণ ঘটাতে গেলে বামপন্থার পুনর্জাগরণ অবশ্যম্ভাবী।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy