তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লসিত বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা। শুক্রবার কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের পিছু হঠার ঘটনাকে হাতিয়ার করে পথে নেমে পড়ল বাম ও কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে ‘বিলম্বে বোধোদয়’ বলে মনে করলেও এতে কৃষকদের নাছোড় আন্দোলনের জয়ই দেখছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। আরও বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন, প্রতিবাদী ও সাংস্কৃতিক মঞ্চের তরফেও কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে।
কৃষি আইন ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা হওয়ার পরেই শুক্রবার রাজ্য জুড়ে পথে নেমে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে সিপিএম এবং তাদের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, ষুব মহিলা সংগঠন। কলকাতায় মিছিল হয়েছে ডিওয়াইএফআই, এসএফআইয়ের উদ্যোগে। ঝাড়গ্রামে মশাল মিছিলে সামনে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। শুধু প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় ভরসা না রেখে সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে ‘ফ্যাসিস্ত আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’র মতো মঞ্চ ও কিছু সংগঠন আগামী ২৫ নভেম্বর শহরে মানব বন্ধন কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছে। সিপিএমের বিবৃতিতে এ দিন বলা হয়েছে, সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা এবং সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতৃত্বে কৃষকদের আন্দোলনকে ভাঙার জন্য নানা রকমের ‘নোংরা চেষ্টা’ কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে করা হয়েছে। কিন্তু কৃষকেরা মোদী সরকারকে শিক্ষা দিলেন, ‘স্বৈরাচার’ শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় না। আন্দোলনের কাছে স্বৈরাচারকে হার মানতে হয়েছে। আন্দোলনরত কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং আইন করে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার দাবি করেছেন সীতারাম ইয়েচুরি, হান্নান মোল্লারা।
কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকলকে অভিনন্দন জানিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র টুইটে মন্তব্য করেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি করছি, তিনি এ রাজ্যে সংশোধিত কৃষিপণ্য আইনের কৃষক-বিরোধী ধারা বাতিলের ঘোষণা করুন’। গণ-আন্দোলনের জয়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, এসইউসি-র প্রভাস ঘোষ, পিডিএসের অনুরাধা পূততুণ্ড প্রমুখও।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বিলম্বিত বোধোদয়’কে কটাক্ষ করেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস আগেই এই আইন প্রত্যাহারের দাবি করেছিল। তখন না শুনে ভোটোদয় হওয়ায় এই সরকার এখন গুলিয়ে জল খেলো!’’ মৃত কৃষকদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন তিনি। কলকাতায় এ দিন কংগ্রেসের ‘জনজাগরণ পদযাত্রা’র কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল আগেই। মোদীর ঘোষণার পরে এ দিন বিধান ভবন থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিল বদলে যায় কৃষকদের প্রতি অভিনন্দন-যাত্রায়। মিছিলে ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, শুভঙ্কর সরকার, মায়া ঘোষ, কৃষ্ণা দেবনাথেরা। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘সংবিধান সংশোধনীমূলক বিল লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাশ করাতে হয়। আমরা চাই, সংসদের দুই কক্ষে দ্রুত প্রক্রিয়া সেরে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করিয়ে কৃষি আইন বাতিলের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হোক।’’
দক্ষিণ কলকাতায় শরৎ বসু রোডেও এ দিন সন্ধ্যায় ছিল উৎসবের মেজাজ। জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার পরে এই এলাকার এক ধাবা থেকেই পঞ্জাবের ট্রাকচালকেরা মুলুকমুখী হয়েছিলেন। এখন দিল্লি সীমানায় কৃষক আন্দোলনে বাংলার সংহতির প্রাণকেন্দ্রও ছিল সেই এক জায়গায়। প্রতিবাদী কৃষকদের উপরে অত্যাচার, সন্ত্রাসবাদী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমার অপমান দিল্লির সিংঘু সীমানায় টেনে নিয়ে গিয়েছিল কলকাতায় পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত মনপ্রীত সিংহকে। গত ৩৫৫ দিন ধরে #বেঙ্গলআগেনস্টফার্মবিলস ডাক দিয়ে নাগাড়ে আন্দোলনের পথে ছিলেন বাংলার প্রতিবাদীরাও। নেতাজি ভগৎ সিংহ ইউনাইটেড ফোরামের ছায়ায় কখনও কলকাতায় পদযাত্রা, সভা বা মশাল মিছিল হয়েছে। কিংবা দফায় দফায় প্রতিনিধিরা গিয়েছেন দিল্লিতে। এই কর্মকাণ্ডের হোতা দক্ষিণ কলকাতার ধাবা মালিক মনজিৎ সিংহ জিট্টা বলছেন, ‘‘দিল্লির পথ ধরে আমাদের আন্দোলনও থামবে না।” প্রতিবাদীদের হাতে খুশির লাড্ডু তুলে দিয়েছেন নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে কলকাতার অন্যতম মুখ নওশিন বাবা খানও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy