খেলা চলছে: শনিবার ব্রিগেডে প্রস্তুতির ফাঁকে। ছবি: সুমন বল্লভ
রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপির দ্বৈরথের বাইরে তৃতীয় পক্ষের দিকে নজর টানতে ব্রিগেড সমাবেশকেই কাজে লাগাতে চাইছে বাম ও কংগ্রেস। বিধানসভা ভোটের আগে এ বারের ব্রিগেডকেই ভিড়ের বহরে ‘ঐতিহাসিক’ করে তুলতে চান সিপিএম নেতৃত্ব। বাংলায় সাম্প্রতিক কালে সিপিএম ও কংগ্রেসের হাত ধরাধরি করে ব্রিগেড সমাবেশও এই প্রথম। সে দিক থেকেও এ বারের সমাবেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রবীণ সিপিএম নেতা ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর দাবি, প্রস্তুতি যে দিকে এগিয়েছে, সেই অনুযায়ীই সব কিছু চললে আজ, রবিবারের সমাবেশ ক্রুশ্চেভ-বুলগানিন-নেহরুর ব্রিগেড সভাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। বহু দশক ধরে বহু বিপুল সমাবেশের সাক্ষী ব্রিগেড ময়দান। তার মধ্যে ১৯৫৫ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী নিকোলায় বুলগানিন ও সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিকিতা ক্রুশ্চেভকে ব্রিগেডের যে সভায় তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় গণ-সংবর্ধনা দিয়েছিলেন, সেই সমাবেশকেই সর্বকালের বৃহত্তম বলে মনে করেন অনেকে। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক অজয় ঘোষও সে দিন উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেস-বাম জোটের প্রশ্ন তখন অবশ্য ছিল না। আবার অন্য একাংশের মতে, ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে নিয়ে ব্রিগেডই সব চেয়ে অতিকায় সমাবেশ।
বিমানবাবুর কথায়, ‘‘ক্রুশ্চেভ-বুলগানিনের সমাবেশই সব চেয়ে বড় হয়েছিল, বলা হয়। আমরা তখন ইস্কুলে পড়ি। মনে আছে, আমাদের নিয়ে এসে চেয়ারে বসানো হয়েছিল। ব্রিগেডে সে দিন কত লক্ষ চেয়ার পাতা হয়েছিল, জানি না। তবে এ বারের সমাবেশ সেই ক্রুশ্চেভের সভাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।’’ বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী বিমানবাবুর দাবি, সংগঠিত ভাবে আসবেন প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ। কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) তাদের সমর্থকদের আনবে। তার বাইরেও ব্রিগেডের ডাকে অসংগঠিত ভাবে আরও মানুষ আসবেন। সব মিলিয়ে সমাবেশ ‘ঐতিহাসিক’ হবে বলেই বিমানবাবুদের দাবি।
বড় লড়াই এবং জোটের বাতাবরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্রিগেডের মঞ্চও এ বার বড় হয়েছে। অন্য বার ৩২ ফুট বাই ২৪ ফুটের মঞ্চ থাকে বাম সমাবেশে, এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৫০ ফুট বাই ২৪ ফুট। ছড়িয়ে থাকা জনতার কাছে আওয়াজ পৌঁছে দিতে লাগানো হয়েছে ৬২০টি মাইক। সভা শুরুর অনেক আগে থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠানের আয়োজনও আছে।
এমন সমাবেশে আগত জনতার জন্য অবশ্য ডিম-ভাত বা কোনও খাবারের ব্যবস্থা সাংগঠনিক উদ্যোগে থাকছে না। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ দল বেঁধে অনেক সময় খাওয়ার ব্যবস্থা করেন, তা তাঁদের নিজস্ব উদ্যোগে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘দল ক্ষমতায় থাকার সময়ে বা তার আগে-পরেও আমাদের ব্রিগেডে পার্টিগত উদ্যোগে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে না। সমাবেশের জন্য পাড়ায় বাড়ি বাড়ি থেকে রুটি নেওয়া পুরনো দস্তুর। আর দূরের জেলা থেকে যাঁরা আগের দু’দিনে শহরে চলে আসেন, ময়দান চত্বরেই তাঁরা তাঁবু করে থাকেন। সেখানে রুটি-ভাত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। কিন্তু সেটা আগের দিন পর্যন্ত। ব্রিগেডে সভার দিনে সে সব কিছুই নেই।’’
বক্তা-তালিকাতেও বিরাট কোনও চমক থাকার সম্ভাবনা কম। স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে এই প্রথম ব্রিগেডের সভায় দেখা যাবে না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। মাঠে যেতে না পারার আক্ষেপ ব্যক্ত করে শনিবার বুদ্ধবাবু বলেছেন, ‘ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দি, যা কোনও দিন কল্পনাও করতে পারিনি’! সমাবেশের ‘সাফল্য কামনা’ করে তাঁর বক্তব্য, ‘ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বিভিন্ন ভাবে খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। শুনে বুঝতে পারছি, বহু মানুষ সমাবেশে আসবেন এবং অনেকে এসে গিয়েছেন। এ রকম একটা বৃহৎ সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে-ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন আর আমি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মেনে চলছি’! বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফের নেতৃত্বের বাইরে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে আজ ব্রিগেডে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জোট সূত্রের ইঙ্গিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy