অমিত শাহের সফর ঘিরে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কলকাতা সফরের দিনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করেছিল বাম ও কংগ্রেস। রবিবার শহিদ মিনারে অমিত শাহের সভাস্থল থেকে কিছুটা দূরে বিভিন্ন এলাকায় চলল সেই কর্মসূচি। পথে নামে কিছু ছাত্র সংগঠনও। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন কিছু মুসলিম সংগঠনের সদস্যরাও। কিন্তু সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বিরোধিতার সুর সপ্তমে তুললেও, এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর রাস্তাতেই হাঁটল না তৃণমূল। যদিও দিনের শেষে, দিল্লির হিংসা নিয়ে টুইটারে অমিত শাহকে বিঁধেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিমান বন্দর থেকে সভাস্থল। অমিত শাহের যাত্রা পথে এ দিন বিভিন্ন জায়গাতেই বিক্ষোভ দেখাতে পথে নেমেছিল একাধিক রাজনৈতিক দল। বিমান বন্দর এলাকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কালো পতাকা ও কালো বেলুন নিয়ে প্রথমে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন। রামলীলা ময়দান থেকেও একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিল বাম ও কংগ্রেস। সঙ্গে যোগ দিয়েছিল কয়েকটি মুসলিম সংগঠনও। কিন্তু মিছিল শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ তা আটকে দেয়।
এ দিন শহিদ মিনারে অমিতের সভা যখন চলছে, তখন সেখান থেকে কয়েকশো মিটার দূরে একাধিক জায়গাতেই চলছিল বিক্ষোভ কর্মসূচি। উঠছিল ‘অমিত শাহ গো ব্যাক’ স্লোগান। গ্র্যান্ড হোটেলের পাশের গলিতেই জড়ো হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। মোতায়েন ছিল পুলিশও। তাঁদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন ছাত্রছাত্রীরা। শুরু হয় ধস্তাধস্তিও। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে উত্তেজনার পারদ চড়ে গ্র্যান্ড হোটেলেরই আর এক দিকে। সেখানে ব্যারিকেডের মধ্যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন একটি মুসলিম সংগঠনের কয়েকশো সদস্য। আচমকাই তাঁদের দেখে ‘গোলি মারো’ স্লোগান দেন কয়েক জন বিজেপি কর্মী-সমর্থক। তাতে মুহূর্তে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। সিএএ ও এনআরসি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অবস্থান চলছে পার্ক সার্কাসে। সেখানেও এ দিন বিক্ষোভ দেখানো হয়।
গ্র্যান্ড হোটেলের পাশে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: ‘গোলি মারো…’! অমিতের সভার পথে স্লোগান উঠল কলকাতাতেও
কলেজ স্কোয়ারে অমিত শাহের ব্যঙ্গমূর্তি নিয়ে অভিনব কায়দায় বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ। এসএন ব্যানার্জি রোডে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামে ডিএসও। ট্রাম লাইনে আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ দেখান সংগঠনটির সদস্যরা। মধ্য কলকাতা ও উত্তর কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণে, সন্তোষপুরেও এ দিন পথে নামে বামেরা। প্রতিটি বিক্ষোভের ইস্যু হিসাবে সিএএ এবং এনআরসি তো ছিলই। তাতে ওজন বাড়িয়েছে সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সংঘর্ষে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা। পরিস্থিতি আঁচ করে পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল শহিদ মিনার চত্বর। গত ১১ জানুয়ারি কলকাতায় পা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই দিন প্রবল বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল গোটা কলকাতা জুড়ে। এ দিন অমিত শাহকে ঘিরে সেই পরিস্থিতি অবশ্য তৈরি হয়নি।
আরও পড়ুন: তৃণমূল সংখ্যালঘুদের ভয় দেখাচ্ছে, অভিযোগ অমিত শাহের
এ দিন কলকাতার নানা অংশে বাম, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ দেখালেও, সন্তর্পণে অবশ্য সেই রাস্তা এড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কলকাতা সফরের দিনেও। সে দিনও বিক্ষোভ প্রদর্শনের রাস্তায় হাঁটেনি তৃণমূল। সিএএ ও এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতার সুর চড়ালেও, প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্য সফরের দিনে কার্যত ‘নীরব’ই থেকেছে জোড়াফুল শিবির। তবে দিল্লির সংঘর্ষ নিয়ে টুইটারে অমিত শাহকে বিঁধেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন, ‘‘বাংলায় এসে এবং প্রচার করার চেয়ে অমিত শাহ আপনার উচিত ছিল, দিল্লিতে আপনার নাকের ডগায় নিহত হওয়া নিরপরাধ ৫০ জনের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করা। তা নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। মিস্টার শাহ, বিজেপি যে ধর্মান্ধতা এবং ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করছে তার চেয়ে বাংলা ভাল রয়েছে।’’
Rather than coming and preaching #Bengal @AmitShah you should have explained and apologised for failing to save more than 50 innocent lives in #DelhiViolence right under your nose.
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) March 1, 2020
Mr Shah, Bengal is better off without bigotry and hatred that BJP is trying to spread.
আরও পড়ুন: ‘লাজের’ সেই তাজমহলই কিনা ট্রাম্পের হাতে তুলে দিতে হল যোগীকে
অমিত শাহকে নিশানা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট করলেও তাতে বাঁধ মানছে না বাম ও কংগ্রেসের ক্ষোভ। অমিত শাহের কলকাতা সফরের দিনে বিরোধিতায় পথে নামেনি তৃণমূল। বরং পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভা নির্বিঘ্নে মিটতে সাহায্য করেছে তারা। এই সমীকরণকে সামনে রেখেই তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর কথায়, ‘‘আজ সারাদিন কলকাতা পুলিশ, অমিত শাহের সভাকে সফল করার জন্য যেভাবে অতি সক্রিয়তা দেখাল সেটা এককথায় অভূতপূর্ব। মুখ্যমন্ত্রী -অমিত শাহের দিল্লির সেটিং কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন বড়কর্তা রাজীব কুমারকে বাঁচিয়েছিল। ভুবনেশ্বরের সেটিং-এর পরে আজ দিদি গৃহমন্ত্রীকে রিটার্ন গিফট দিলেন। এমনকি ধর্মতলা চত্বরে যারা ‘গোলি মারো’ স্লোগান দিল তাদেরও পুলিশ জামাই আদর করে শহিদ মিনারে পৌঁছে দিল।’’
সিএএ ও এনআরসি নিয়ে যে তৃণমূল শুরু থেকেই সুর চড়াচ্ছে, তারা এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরাসরি বিক্ষোভ দেখানোর রাস্তায় হাঁটল না কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সিএএ ও এনআরসি-এর বিরোধিতা করলেও, অমিত শাহের সফরের দিনেই বিরোধিতার আসরে যোগ দিয়ে বিজেপিকে মেরুকরণের সুবিধা করে দিতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই কৌশলে এ দিন অমিত শাহকে সরাসরি বিক্ষোভ দেখানোর রাস্তায় হাঁটেনি তাঁর দল। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল মোদীর কলকাতা সফরের ক্ষেত্রেও। এ ক্ষেত্রে কেজরীবালের প্রসঙ্গও তুলে আনছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মমতা ও কেজরীবাল, এই দু’জনেরই পরামর্শদাতা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। যাঁর পরামর্শে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের সময় থেকে এখনও পর্যন্ত বিজেপির তোলা ইস্যু নিয়ে মুখ খোলেননি কেজরী। ভোটের আগে শাহিন বাগের বিক্ষোভ নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। কেজরীকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে বিঁধেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এমনকি দিল্লির ভোট ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধ বলেও বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেছেন কেউ কেউ। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে শুধুমাত্র উন্নয়নের রাজনীতির কথাই তুলে ধরেছেন কেজরীবাল। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সেই রাস্তাই বেছে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy