গত বছর ৮ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাংগঠনিক ব্যর্থতা। দলের অন্দরেই অভিযোগ উঠেছিল, তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা চিকিৎসক নেতারা সঠিক ভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করলে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হত না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারকে। ওই ঘটনার জেরে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ভৎর্সনার মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের প্রথম সারির চিকিৎসক নেতারা।
সেই ঘটনার জেরেই শাসকদলের তথাকথিত পরিচিত চিকিৎসক নেতাদের সরিয়ে রাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী তথা পেশায় চিকিৎসক শশী পাঁজাকে নেতৃত্বে রেখে চিকিৎসকদের নতুন সংগঠন শুরু করেছিল তৃণমূল। ‘প্রোগ্রেসিভ হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন’ (পিএইচএ) নামের ওই সংগঠনে তৃণমূলের নতুন চিকিৎসক নেতাদের তুলে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বালির বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায়, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো চিকিৎসকদের সামনের সারিতে আনা হয়েছিল। এ বার তার চেয়ে আরও একধাপ এগিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করতে নতুন পদক্ষেপ নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন:
‘প্রোগ্রেসিভ হেল্থ অ্যাসোসিয়েশন’ গঠনের সঙ্গেই তৈরি করা হয়েছে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ (ডব্লিউবিজেডিএ)। মূল সংগঠনের অধীনে কাজ করবে এই সংগঠনটি। সেই সংগঠন মারফত শাসকদল নতুন প্রজন্মের চিকিৎসক নেতৃত্ব তুলে আনতে চাইছে বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর। সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি মৌখিক বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনের সভানেত্রী শশী। যেখানে তিনি জানিয়েছেন, ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ, জুনিয়র চিকিৎসক (প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের), জুনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক এবং সিনিয়র রেসিডেন্ট (চুক্তিবদ্ধ) যেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করান। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, মূল সংগঠনে এই চার ধরনের চিকিৎসকেরা সাধারণ সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন। কিন্তু আগামী দিনে রাজ্য, জেলা তথা মেডিক্যাল কলেজভিত্তিক পদাধিকারী নিয়োগ করতে হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে থেকে। তাই এ ক্ষেত্রে জুনিয়র চিকিৎসকরা ওই সংগঠনে নথিভুক্ত থাকলে ভবিষ্যতে দায়িত্ব বণ্টনে সুবিধা হবে।
তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের এক নেতা জানিয়েছেন, আরজি কর আন্দোলনের সময় বামপন্থী সংগঠন ‘জয়েন্ট ডক্টর্স ফোরাম’ এবং তাদের জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন যে ভাবে দাপট দেখিয়েছিল, তার মোকাবিলা করতে পারেননি তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের তৎকালীন নেতারা। তাই এ বার পিএইচএ তৈরির সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনকেও জোরদার করতে চাইছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই ভাবনা থেকেই বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের পাশাপাশি জুনিয়র চিকিৎসকদের এখন থেকেই সংগঠনে যুক্ত করতে চাইছেন শীর্ষ স্তরের নেতারা।