হোয়াটসঅ্যাপে মোমোর মেসেজ খুলে দেখাচ্ছেন ধূপগুড়ির কলেজ ছাত্রী মুন আহমেদ। —নিজস্ব চিত্র।
সবাই যখন আতঙ্কে কাঁটা তখন ‘মোমো’কে ‘চাউমিন’ উত্তর দিয়ে পাল্টা চমকে দিলেন এক মহিলা পুলিশকর্মী।
ওই মহিলা জলপাইগুড়ি পুলিশ লাইনে কর্মরত। রবিবার রাত ১২টা নাগাদ হঠাৎই তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। ওই তরুণী মেসেজ খুলে দেখেন, সেখানে লেখা আছে—“হাই আই অ্যাম মোমো। আই ওয়ান্ট টু প্লে উইথ ইউ।”
সেই পুলিশকর্মী ভাল করে দেখেন, নম্বরটি অচেনা এবং বিদেশের। একটুও না ঘাবড়িয়ে পাল্টা তিনি উত্তর দেন—‘আই অ্যাম চাউমিন।” এ ভাবে কয়েক মিনিট ইংরেজিতে কথা বলার পরেই সেই ‘মোমো’ রোমান হরফে বাংলায় চ্যাট করতে শুরু করে।
ঠিক সেই সময়েই ওই মহিলা পুলিশকর্মীর এক সহকর্মীর শেফালি রায়ের কাছেও হোয়াটসঅ্যাপে মোমোর মেসেজ আসে। শেফালি ধূপগুড়ির বাসিন্দা। জলপাইগুড়ি আদালতে কর্মরত তিনি। রবিবার রাতে শেফালির কাছে মোমোর মেসেজ আসে। তিনি কিছু ক্ষণ কথাও বলেন কৌতূহলের বশে। শেফালি পুলিশকে জানিয়েছেন, মোমো পরিচয়ে তাঁর সঙ্গে যে চ্যাট করছিল, সে শেফালির নাম পরিচয় এবং তিনি কী কাজ করেন— সবই জানে। মোমো তাঁকে প্রথমে বলে, আয়নার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে। তার পর বলে নিজের মূত্র পান করতে। এ রকম ভাবে খানিক ক্ষণ চ্যাট করার পর শেফালি আর কথা বলতে চাননি। তার পরেই শেফালিকে রীতিমতো শাসাতে থাকে মোমো। তাঁকে বলা হয় পৃথিবীর সর্বত্র মোমোর লোক আছে। মোমো বার বার তাঁকে শাসিয়ে বলে, তাঁর সঙ্গে না খেললে খুন করা হবে। তার পর শেফালি ওই নম্বরটি ব্লক করে দেন।
ঠিক একই ভাবে মোমোর কাছ থেকে খুনের হুমকি পেয়েছেন ধূপগুড়ির শালবাড়ির বাসিন্দা বাদশা আহমেদ। তার সঙ্গে আবার মোমো রীতিমতো বাংলায় চ্যাট করেছে। মোমোর কথা মতো না চলায় বাদশাকেও খুনের হুমকি দেওয়া হয়। বাদশা বলেন, ‘‘রাতেই আমি মোবাইল বন্ধ করে দিই। তার পরেই আমার বোন মুন আহমেদেকে মোমো হোয়াটস অ্যাপ করে। মুন ধূপগুড়ি সুকান্ত মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মুন কোনও উত্তর না দেওয়ায় ওই নম্বর থেকে ভিডিয়ো কল করা হয়। বোন তখন ভয় পেয়ে ওই নম্বরটি ব্লক করে দেয়।”
আরও পড়ুন: জেল থেকেই তোলাবাজি! না দেওয়ায় লেকটাউনে তাণ্ডব চালাল শাগরেদরা
মোমোর এ রকম আমন্ত্রণ এ রাজ্যের অনেকেই পাচ্ছেন বলে অভিযোগ আসছে পুলিশের কাছে। উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে এক আইটি কর্মী মোমোর বার্তা পেয়েছেন। স্বভাবতই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মোমোকে ঘিরে। তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। আর সেই তদন্ত করতে গিয়েই কয়েকটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে তদন্তকারীদের মনে। সিআইডির এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমেরিকা এবং কানাডার কিছু এমন নম্বর ব্যাবহার করা হচ্ছে যেগুলি অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়।” তার পাশাপাশি, মোমো প্রয়োজন মতো বাংলায় কথা বলছে। সবটাই কোথাও একটা কারসাজির ইঙ্গিত। অন্য এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘প্রতিটা ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এক জন যখন মোমোর মেসেজ পাচ্ছেন, তার পরেই তাঁর কোনও বন্ধু বা পরিচিতও পাচ্ছেন। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কে চলছে গোটা বিষয়টি।’’ সব মিলিয়ে তাঁদের অনুমান, কোনও সাইবার গ্যাং এর পেছনে রয়েছে। সেই গ্যাং-এর হদিশ পাওয়ার পাশাপাশি সিআইডি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy