যে খাকি উর্দির নির্দেশে একদিন তাঁর হাতে হাতকড়া পড়েছিল, ক্ষমতাবলে এখন তিনিই নির্দেশ পাঠাচ্ছেন সেই খাকি উর্দির কাছে! মাঝে শুধু পেরিয়ে গিয়েছে তিনটি মাঘ।
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল ‘তৎকালীন’ তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে। তৎকালীন — কারণ, তার পরে দল তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। কিন্তু এখনও তিনি সাংসদ রয়ে গিয়েছেন।
কুণালের কথা মতো, সে দিন তিনি বিধাননগর দক্ষিণ থানায় এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। বিধাননগরের কমিশনার তখন আইপিএস অফিসার রাজীব কুমার। কার্যত তাঁরই নির্দেশে সে দিন বিধাননগর দক্ষিণ থানায় গ্রেফতার করা হয়েছিল কুণালকে। তার পরে তিন-তিনটে বছর কেটে গিয়েছে জেলের কুঠুরিতে। জামিন পেয়ে কুণাল এখন বাড়িতে।
সেই কুণালই বাড়ি থেকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজীব কুমারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘আপনাদের পুলিশ হাসপাতালের উন্নয়নের স্বার্থে যে টাকা পাঠিয়েছি, দেখে নেবেন সেই টাকা যেন তাড়াতাড়ি খরচ হয়।’ রাজীব কুমার এখন কলকাতা পুলিশের কমিশনার। আর কুণাল টাকা পাঠিয়েছেন কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য।
জেলে বসেই ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর উন্নয়নের যে তালিকা তৈরি করেছিলেন, সেখানেই ছিল কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের নাম। এ রকম বহু সুপারিশের পাহাড় জমে পড়েছিল তাঁর তহবিল খরচের নোডাল এজেন্সি কলকাতা পুরসভার কাছে। কুণালের অভিযোগ ছিল, ইচ্ছা করেই তাঁর সুপারিশ করা টাকা ছাড়া হচ্ছে না। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থও হন কুণাল। সম্প্রতি, প্রতিটি সুপারিশ কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
কুণাল বলেন, ‘‘যাঁদের কাছে সেই টাকা পৌঁছনোর কথা, তাঁদের প্রত্যেককে টাকা পাঠানো হচ্ছে বলে পুরসভার নোডাল অফিসার আমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। তার মধ্যে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালও রয়েছে। এ বার আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেই প্রতিটি সংস্থা, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে জানাচ্ছি।’’ ফলত, তার একটি চিঠি রাজীব কুমারের ঠিকানায় পৌঁছেছে। সাংসদের চিঠি কমিশনারকে। ১০ লক্ষ টাকা কোথায় কী ভাবে খরচ করবে হাসপাতাল, তা তাদের বিবেচ্য বলেও কুণাল জানিয়েছেন।
কুণালের চিঠি প্রসঙ্গে রাজীব কুমারকে সোমবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও উত্তর দেননি। প্রশ্ন উঠছে, কুণালের তহবিলের টাকা যদি কলকাতার পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিতে অস্বীকার করেন রাজীব? কুণাল জানিয়েছেন, ওই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের। তিনি মাধ্যম মাত্র। কলকাতার পুলিশ কমিশনার ওই টাকা নিতে অস্বীকার করলে তিনি আদালতকে জানাবেন।
গ্রেফতার হওয়ার তিন বছর পরে, ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর জামিন পেয়েছেন কুণাল। জেলে বসেই তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা কী করে, কোথায় খরচ করা যায় তার পরিকল্পনা করেছেন। সাধারণত, সাংসদদের কাছে বিভিন্ন সংস্থা থেকে অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়। সরকারি কোনও দফতর, রাস্তা বা অন্য পরিকাঠামো উন্নয়নেও সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ হয়। জেলে বসে এ রকম প্রচুর আবেদনও পেয়েছেন।
লোকসভার সাংসদরা শুধু নিজেদের এলাকাতেই তাঁদের তহবিলের টাকা খরচ করতে পারেন। রাজ্যসভা সাংসদ হওয়ার সুবাদে কুণালের কোনও নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করা নেই। তাই, কুণাল চাইলে রাজ্যের যে কোনও এলাকায় যে কোনও সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রের উন্নয়নের স্বার্থে নিজের সাংসদ তহবিলের টাকা দিতে পারেন। সেই মতো, কলকাতা পুলিশ হাসপাতালকেও দিয়েছেন।
কিন্তু এত সংস্থা-প্রতিষ্ঠান থাকতে কলকাতা পুলিশ হাসপাতাল কেন?
কুণালের কথায়, ‘‘আমি জেলে থাকাকালীন বহু বার আদালতে যাতায়াত করেছি। সেই সময়ে কোর্ট লকআপে বসে সাধারণ, নিচু তলার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে নানা রকম কথাবার্তা হতো। এক দিন কথার ফাঁকে এক পুলিশ কনস্টেবল দুঃখ করে পুলিশ হাসপাতালের করুণ অবস্থার কথা বলেছিলেন। তার পর আমি নিজেই অন্য পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসা করে জেনেছি, সত্যি খারাপ অবস্থা ওই হাসপাতালের। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy