কৃষ্ণনগর শহরের একটি বারোয়ারি পুজোর জগদ্ধাত্রী প্রতিমা।
আড়াইশো বছরেরও আগে বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন করেন কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। জৌলুস কমলেও সেই কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে আজও পুজো হয় নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে। বছরের আর পাঁচটা দিন যে রাজবাড়ির উঁচু পাচিলের অন্দরে সাধারণের প্রবেশাধিকার থাকে না, পুজোর ক’টা দিন সেই রাজবাড়িতেই ভিড় জমান বহু মানুষ। এ বছর করোনার বিধিনিষেধ থাকলেও ছেদ পড়েনি কৃষ্ণনগরবাসীর উৎসাহ-উদ্দীপনায়। দুর্গাপুজোর পর আরও এক বার উৎসবে মেতেছে ইতিহাস আর ঐতিহ্যে মাখা শহর কৃষ্ণনগর।
পুজোর সূচনা অবশ্য কিছুটা বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। কৃষ্ণনগরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজবাড়িতে প্রতি বছর রাজরাজেশ্বরীর পুজো হত মহা ধুমধামের সঙ্গে। ১৭৫৪ সালে বিপুল অঙ্কের কর জমা দিতে না পারায় পুজোর মুখেই কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দি করেন তৎকালীন বাংলা-বিহার-ওড়িশার নবাব আলিবর্দী থান। বন্ধু-বান্ধব ও ইংরেজ সরকারের সহায়তায় সেই সময়কার মুদ্রায় ৯ লক্ষ টাকা দিয়ে অবশেষে দুর্গাপুজোর দশমীর দিন ছাড়া পান তিনি।
ভাগীরথী নদী দিয়ে নৌবহরে ফিরছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। মুর্শিদাবাদে বন্দি থাকায় সে বছর রাজরাজেশ্বরীর পায়ে অঞ্জলি দিতে না পারায় মন ভার ছিল রাজার। সেই ফেরার পথেই সিংহবাহনা চতুর্ভুজা দেবীর পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান। কুমারীর বেশে দেখা দেন দেবী। আদেশ দেন, কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীর দিন পুজো করলেই মিলবে মা দুর্গার আশীর্বাদ।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে রাজ্যপালের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠকে বিরোধী দলনেতা মান্নান
বাড়িতে ফিরেই ডেকে পাঠালেন বিখ্যাত সব পুরোহিতদের। তাঁরাই জানালেন, এই দেবী মা জগদ্ধাত্রী। দুর্গার বিশেষ রূপ। ২০০০ বছর আগে পুরাণে এই দেবীর উল্লেখ আছে। তৈরি হল মূর্তি। ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, ওই ১৭৫৪ সাল থেকেই জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়। অন্য অংশের মতে ১৭৬২ সালে শুরু হয় এই পুজো।
সূচনার পর থেকে সেই ঐতিহ্য শুধু ধরে রাখাই নয়, প্রচার ও প্রসারেও উদ্যোগ নেন কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁর মৃত্যুর পরে রানি ভূবনেশ্বরী দেবী মালোপাড়ায় এই পুজো শুরু করেন। তারও পরে রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী পুজোয় পুরস্কারের প্রথা চালু করেন। এই ভাবেই কৃষ্ণনগরের প্রায় সব পাড়ায় শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। আর এখন সেই পুজোই সর্বজনীন। তবে সূচনার ইতিহাসের জন্য আজও শহরের সব বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে রাজবাড়ি প্রদক্ষিণ করে। সূচনার পর্ব থেকে আজও সেই রীতির ব্যতিক্রম হয়নি।
আরও পড়ুন: একবালপুরে তরুণী খুনে ধৃত দম্পতি, প্রেম না মাদকযোগ, তদন্ত করছে পুলিশ
এক সময় কৃষ্ণচন্দ্রের হাতে করে পুজো করা পাথরের জগদ্ধাত্রী, দুর্গা, পাঁচ মাথা বিশিষ্ট তথা পঞ্চানন শিবের মূর্তি ও শিবলিঙ্গ ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হলেও কৃষ্ণনগর পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায়। এই সব বিগ্রহও চলে যায় পাকিস্তানে। এই সময় রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী পদক্ষেপ নেন। কৃষ্ণনগরকে ফের দেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ভাঙা মূর্তিটিও ফেরত পায় নদিয়ার রাজপরিবার। তার পর থেকে নাট মন্দিরে সেই মূর্তিই পুজো হয়। সামনের মন্দিরে হয় মূর্তি পুজো। আগের মতো নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে তিন বার পুজো হয়। ভোগ দেওয়া হয় খিচুড়ি, পোলাও, তিন অথবা পাঁচ রকমের মাছ, তরকারি, মিষ্টি, পায়েস দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy