হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে পরোয়া না করে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন ফের তারস্বরে বক্স বাজল। এবং সব কিছু জেনেও স্রেফ জনতার সচেতনতার দিকে আঙুল তুলেই দায় সারল নির্বিকার পুলিশ।
মাধ্যমিক শুরুর আগের দিন, রবিবার পার্ক সার্কাসের গোরাচাঁদ রোডে স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে তারস্বরে মাইক বেজেছিল তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়ক ও কাউন্সিলরের উপস্থিতিতেই। একই ঘটনা ঘটল শুক্রবার, আহিরীটোলার কাছে বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে একটি ক্লাবের রক্তদান শিবিরে। এখানেও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজা, স্থানীয় কাউন্সিলর শিখা সাহা-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনে বক্স বাজিয়ে এমন অনুষ্ঠান বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়া দূরে থাক, উল্টে কাউন্সিলর শিখাদেবী বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তখন তো সমস্ত পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে চলে গিয়েছেন। এতে আপত্তির কী আছে?” অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “অনুষ্ঠানে বক্স বাজানো হলেও শব্দসীমা অতিক্রম করা হয়নি। এতে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” অথচ, এখন শুধু মাধ্যমিক পরীক্ষা নয়, চলছে আইসিএসই এবং সামনেই উচ্চ মাধ্যমিক। অর্থাত্, পরীক্ষার ভরা মরসুম।
এ দিন রামধন খান লেন ও বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের মোড়ে একটি ক্লাবের আয়োজনে রীতিমতো রাস্তা আটকে উচ্চস্বরে বক্স বাজিয়ে ওই রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠান চলছিল। এলাকাটি জোড়াবাগান থানার আওতায়। পুলিশের দাবি, রাস্তায় অনুষ্ঠানের অনুমতি জোড়াবাগান থানা দিলেও বক্স বাজানোর অনুমতি দেয়নি।
ক্লাবের সভাপতি সমরেশ দাস বলেন, “অনুষ্ঠানের জন্য থানায় অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ বলেছিল, মাইক বাজানো যাবে না। কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট মাত্রায় বক্স বাজিয়েছি। এতে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হয়নি।” অনুষ্ঠানের সঞ্চালক গৌতম সুন্দর জানান, “সকাল থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সকালেই আমরা জানিয়েছিলাম, বক্স বাজানো নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে জানাবেন। কিন্তু কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি।”
যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা তারস্বরে বক্স বাজানোর প্রতিবাদই করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “এলাকায় অনেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সকাল থেকেই বক্সের আওয়াজে পড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।” ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত মেডিক্যাল ব্যাঙ্কের কর্ণধার ডি আশিসের কথায়, “মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন এ ভাবে বক্স বাজানো অনৈতিক।”
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “ওই ক্লাব অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের কাছে আগেই অনুমতি নিয়েছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমাকে না জানিয়েই আমন্ত্রণপত্রে আমার নাম ছাপিয়েছে। অনুষ্ঠান চলাকালীন ওরা বক্স বাজানোয় আইন ভেঙেছে।”
তা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিল না কেন? থানা থেকে মিলেছে দায়সারা উত্তর। জোড়াবাগান থানার এক আধিকারিকের কথায়, “মাইক বা বক্স বাজাতে আমরা নিষেধ করেছিলাম। তা সত্ত্বেও বক্স বাজার খবর পেয়ে যতক্ষণে পৌঁছই, তখন অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছে। মানুষ সচেতন না হলে আমরা আর কী করব!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy