এই লাইনেই হুড়মুড় করে নেমে এসেছিল টয় ট্রেন। কার্শিয়াঙের চুনাভাটিতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বাড়ির উঠোন ঘেঁষে চলা যে ট্রেনে দৌড়ে ওঠানামা করা দস্তুর, তা-ই যে বাড়ির বড় বৌয়ের মৃত্যুর কারণ হবে, ভাবতে পারছে না বেলেঘাটার পাল পরিবার।
সোমবার দুপুরে কার্শিয়াঙের তিনধারিয়া থেকে আত্মীয়দের সঙ্গে টয় ট্রেনে সওয়ার হয়েছিলেন কলকাতার বেলেঘাটা থেকে মলি পাল (৫১)। সঙ্গে ছিলেন বাড়ির আরও পাঁচ জন। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে ঠিকঠাকই শিলিগুড়ির দিকে নামছিল ট্রেনটি। কিন্তু চুনাভাটির কাছে পৌঁছে হঠাৎই গতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় বলে যাত্রীদের দাবি। হুড়মুড় করে নামতে থাকে ট্রেন। ঝাঁকুনিতে থরথর করে কাঁপতে থাকে জানলা-দরজা। ব্রেক কাজ করছে না বলে যাত্রীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেন কয়েক জন।
মৃতার ভাই অরুণাভ পাল বলেন, “আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সকলকে নিয়ে ট্রেন খাদে গিয়ে পড়বে। দিদি দরজার কাছে ছিলেন। তিনি ট্রেন থেকে লাফ দেন।” আর তার পরেই পাশের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে লুটিয়ে পড়েন মলিদেবী। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। অরুণাভবাবু পরে পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনটি কামরায় অন্তত ৮০ জন যাত্রী ছিলেন। মলিদেবীর মতোই লাফ দিয়ে জখম হন তিন যাত্রী। তিনধারিয়া রেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পরে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল অবশ্য বলেন, “ব্রেক ফেল বা চাকা লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সম্ভবত ঢালু পথে ট্রেনটির গতি বেড়ে যাওয়ায় মহিলা আতঙ্কিত হয়ে লাফ দিয়েছিলেন।’’ সোমবার বিকেলে বেলেঘাটার বাড়িতে বসেই মায়ের মৃত্যুসংবাদ পান মলিদেবীর ছেলে সানি। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে মলিদেবীর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন জহর পাল এবং তাঁর স্ত্রী মলিদেবী। সেখান থেকেই কয়েক জন আত্মীয়ের সঙ্গে তাঁরা দার্জিলিং যান। শিলিগুড়ি জংশন থেকে গয়াবাড়ি পর্যন্ত টয় ট্রেনে ‘জঙ্গল রাইড’ হয়। সোমবার সেই যাত্রাতেই বিপদ ঘটে। এ দিন জখম যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে রেলের তদন্তকারী দল। টয় ট্রেনের চালক ও গার্ডের বয়ানও নথিভুক্ত করা হয়।
রেলের একটি সূত্রের দাবি, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামার সময়ে ইঞ্জিনের ‘এয়ার ব্রেক’ কাজ করতে সময় লাগাতেই ট্রেনটি কিছুটা পথ হুড়মুড়িয়ে নেমেছিল। তাতেই অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুগত লাহিড়ি বলেন, “যাত্রীদের একাংশ যে ভাবে ব্রেক ফেল হয়েছে বলে দাবি করেছেন, বাস্তবে তা হয়নি। তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy