থমকে পার্ক স্ট্রিট। বৃহস্পতিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
সকালে বহুতলে আগুন, দুপুরে একটি রাজনৈতিক দলের আইন অমান্য এবং পার্ক স্ট্রিটের রাস্তার একাংশ আটকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের মঞ্চ।
এই ত্র্যহস্পর্শের জেরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় যানজটে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। তবে শুধু যানজটই নয়, আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে এসইউসি-র সমর্থকরা এস এন ব্যানার্জি রোডে পুরসভার কাছে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়ায় খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। এ দিনের ঘটনায় পুলিশের এসি, মহিলা কনস্টেবল থেকে শুরু করে ডিসি (নর্থ)-র এক দেহরক্ষী-সহ ১০ জন পুলিশকর্মী আহত হন।
লালবাজার সূত্রের খবর, পূর্ব-নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ দিন এসইউসি-র আইন অমান্য মিছিল ছিল। দলের তরফে বলা হয়েছিল, কলেজ স্কোয়ার থেকে তাদের মিছিল নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, ওয়েলিংটন, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছবে। যার জেরে এ দিন বেলা গড়িয়ে মধ্য কলকাতায় যানজট হয়। সেখানে ট্রাফিক সামলানোর সময়ে আচমকা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে এগোতে থাকেন মিছিলকারীরা। সেখানে তখন আর একটি সমাবেশ চলছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তাই আইন ভাঙা হচ্ছে দেখে পুলিশ মিছিলটিকে আটকায়। তখনই এসইউসি সমর্থকেরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়ার পাশাপাশি লাঠি দিয়ে মারতে থাকায় আত্মরক্ষার্থে পাল্টা লাঠিচার্জ করতে হয় বলে লালবাজারের কর্তাদের দাবি।
যদিও এসইউসি-র বক্তব্য, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই পুলিশ এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ শুরু করে। তাতে দলের কয়েক জন কর্মী জখম হন। অন্য দিকে, লালবাজার সূত্রে বলা হয়েছে, এসইউসি-র সমর্থকদের মারধরে তাঁদের এক জন এসি, নর্থ ডিভিশনের ডিসি-র এক দেহরক্ষী, এক মহিলা কনস্টেবল-সহ ১০ পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলে যোগ দিতে কলেজ স্কোয়ারে প্রায় দশ হাজার লোক জড়ো হলে কলেজ স্ট্রিট ও মহাত্মা গাঁধী রোডে যানচলাচল থমকে যায়। এতেই যানজট শুরু হয়। দুপুর সওয়া দুটো নাগাদ মিছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার দিকে রওনা দেয়। মিছিল কলেজ স্ট্রিট হয়ে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের দিকে এগোনোর সময়ে থমকে যায় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট। মিছিল যে সব রাস্তা ধরে এগিয়েছে, সেখানেই থমকে গিয়েছে গাড়ি চলাচল।
পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিল এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ধর্মতলায় যাওয়ার সময়ে শিয়ালদহ থেকে আসা যানচলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। এর মধ্যে পুরসভার সামনে পুলিশ ও এসইউসি কর্মীদের খণ্ডযুদ্ধে গাড়ির গতি আরও শ্লথ হয়ে যায়। মিছিলের জেরে লেনিন সরণি, জওহরলাল নেহরু রোড, এসপ্ল্যানেড ইস্ট ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে গাড়ি আটকে পড়ে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এর আগে সকালে আগুন লাগে জওহরলাল নেহরু রোডের এক বহুতলে। দমকলের সুবিধার্থে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই রাস্তার দক্ষিণমুখী গাড়ি চলাচল। যার বেশির ভাগই মেয়ো রোড এবং কিড স্ট্রিট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ওয়াই-ফাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য পার্ক স্ট্রিট মোড়ের কাছে রাস্তার একটি বড় অংশ জুড়ে তৈরি হয়েছিল মঞ্চ। যার জেরে সকাল থেকে পার্ক স্ট্রিটে ছিল লম্বা গাড়ির সারি। এক পুলিশকর্তা জানান, রাস্তার এক দিক দিয়ে গাড়ি চলায় দিনভর যানজট ছিল।
যানজট হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন লালবাজারের ট্রাফিক কর্তারাও। তবে তাঁদের বক্তব্য, পরিস্থিতি সামাল দিতে মিছিলের রাস্তার যানবাহন অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাতেও যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, তা-ও মেনেছেন তাঁরা। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “মধ্য কলকাতার রাস্তার যে পরিসর, তাতে মিছিলের যানজট এড়ানো প্রায় অসম্ভব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy