Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
এজেসি বসু রোড উড়ালপুল

নিয়ম ভেঙে গাড়ি ফের বেপরোয়া, বলি যুবক

রাতের রাজপথে গাড়ির উদ্দাম গতি ও তার চাকার তলায় মৃত্যু এখন যেন রোজকার ঘটনা। তারই সর্বশেষ নজির শনিবার গভীর রাতের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড উড়ালপুল। একটি বেপরোয়া গাড়ি পিষে দেয় এক রোড রোলারের চালককে। শুক্রবার রাতে চারু মার্কেটে একটি বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক মোটরবাইক আরোহীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

রাতের রাজপথে গাড়ির উদ্দাম গতি ও তার চাকার তলায় মৃত্যু এখন যেন রোজকার ঘটনা। তারই সর্বশেষ নজির শনিবার গভীর রাতের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড উড়ালপুল। একটি বেপরোয়া গাড়ি পিষে দেয় এক রোড রোলারের চালককে।

শুক্রবার রাতে চারু মার্কেটে একটি বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক মোটরবাইক আরোহীর। আর, শনিবার রাত ১২টার পরে এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের এক দিকে যান চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার চলছিল। ব্যবহার করা হচ্ছিল রোড রোলার। পাশে ঘুমোচ্ছিলেন রোলারের চালক।

পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি গাড়ি ট্রাফিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভুল দিক দিয়ে উড়ালপুলে উঠে যে প্রান্তে যান চলাচল বন্ধ ছিল, সেই দিক ধরে তীব্র গতিতে গিয়ে ওই রোড রোলারের চালককে পিষে দেয়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম নওলকিশোর রায় (৩৫)। বাড়ি বিহারের বৈশালীতে। তিনি হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি)-এর অফিসে ঠিকাকর্মী ছিলেন। মেরামতির কাজে নিযুক্ত অন্য ঠিকাকর্মীরাই পুলিশকে খবর দেন। নওলকিশোরকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।

পুলিশ জেনেছে, যে দিক দিয়ে চালক উড়ালপুলে উঠেছিলেন, দুর্ঘটনার পরে অন্য ঠিকাকর্মীদের চেঁচামেচিতে তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে সেই দিক দিয়েই নেমে বেপাত্তা হয়ে যান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, উড়ালপুল সংস্কারের কাজে নিযুক্ত তিন মহিলা শ্রমিকের বয়ান শুনে পুলিশের অনুমান, ঘাতক গাড়িটি একটি এসইউভি। তাঁরা গাড়ির নম্বর নিতে পারেননি। আশপাশের সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাত পর্যন্ত একটি লাল রঙের গাড়িকে চিহ্নিত করা গিয়েছে।

এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের যে প্রান্ত দিয়ে যানবাহন পার্ক সার্কাস থেকে হেস্টিংস-এর দিকে যায়, সংস্কারের জন্য সেটি শনিবার মাঝরাত থেকে বন্ধ রাখা হয়েছিল। হেস্টিংসগামী গাড়িগুলি যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে। তবে উড়ালপুলে হেস্টিংস থেকে পার্ক সার্কাস আসার দিকটি খোলা ছিল। পুলিশ জানায়, হেস্টিংসের দিকে যানবাহনের যে প্রান্ত ধরে উড়ালপুল থেকে নামার কথা, মেরামতির জন্য বন্ধ সেই দিক দিয়েই ঘাতক গাড়িটি উঠেছিল। এক কিমি গিয়ে পিষে দেয় ঘুমন্ত যুবককে।

কিন্তু উড়ালপুলের দুই প্রান্তে ওঠা-নামার জায়গায় মোতায়েন পুলিশ কী করছিল? লালবাজার সূত্রের খবর, পার্ক সার্কাসের দিক থেকে গাড়ি যাতে উড়ালপুলে উঠতে না পারে, সে জন্য গার্ডরেল দিয়ে ওই জায়গা আটকানো ছিল। মোতায়েন ছিল পুলিশও। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘যে প্রান্ত দিয়ে উড়ালপুলে ওঠারই কথা নয়, হেস্টিংসের দিকে সেই প্রান্ত দিয়ে কোনও গাড়ি আদৌ যে উঠতে পারে, তা ভাবাই যায়নি।’’ কিন্তু হেস্টিংসের দিকে যে প্রান্ত দিয়ে যানবাহন উড়ালপুলে ওঠে, সেই দিকটি খোলা ছিল ও সেখানে মোতায়েন ছিল পুলিশও। তা হলে নিয়ম ভেঙে ওঠা এসইউভি কী ভাবে নজর এড়িয়ে যেতে পারল?

ওই পথে নিয়মিত চলা গাড়িচালক ও আরোহীদের অভিযোগ, টহলরত পুলিশের একাংশ লরি থেকে টাকা তুলতে ব্যস্ত থাকেন। যদিও লালবাজারের কর্তারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তার যুক্তি, ‘‘সংস্কারের কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কয়েকটি গাড়ি ওই দিক দিয়ে, বন্ধ প্রান্ত ধরে উঠছিল। ভাবা হয়েছিল, ঘাতক গাড়িটিও ঠিকাদার সংস্থার।’’ তবে রবিবারের দুর্ঘটনায় ঠেকে শিখে রাতে মেরামতির সময়ে এ বার থেকে উড়ালপুলের দু’প্রান্তে, দু’দিকেই প্রহরার দাবি উঠেছে পুলিশের অন্দরে।

অন্য বিষয়গুলি:

AJC Bose Road Youth dies road accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE