Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Women Rights Commission

বধূ ‘খুনের’ মামলায় মহিলা কমিশনের তোপে নিমতা থানা

মহিলা কমিশন সূত্রের খবর, মধুমিতার দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে তারা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে চায়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১০:০১
Share: Save:

এক বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্য মহিলা কমিশনের তোপের মুখে পড়ল নিমতা থানার পুলিশ। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশকে ওই মামলার তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানাতে গত বুধবার নির্দেশ দিয়েছে মহিলা কমিশন। এমনকি, মৃতার নাবালিকা মেয়ে তথা ঘটনার অন্যতম সাক্ষীকেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে।

২০১১ সালে নিমতা থানার বিশরপাড়ার সপ্তগ্রাম রোডের বাসিন্দা এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় মধুমিতা পালের। তাঁদের ১১ বছরের একটি মেয়ে আছে। মধুমিতার পরিবার জানায়, গত ১ জুলাই মৃত্যু হয় মধুমিতার। তাঁর মা কল্পনা পালের অভিযোগ, জামাই বিয়ের পর থেকে মেয়ের উপরে অত্যাচার করতেন। ঘটনার দিনেও মেয়েকে জামাই মারধর করেছিলেন বলে অভিযোগ কল্পনার।

কল্পনা বলেন, ‘‘মারধর না করলে মৃত্যুর আগে আমার মেয়ের তলপেটে এত রক্ত জমল কী ভাবে? মেয়ের চোখেমুখে কালশিটে দাগের ছবি দেখেছি। ঘটনার দিন নাতনি স্নান করতে করতে বাবা-মায়ের চিৎকার শুনতে পায়। বেরিয়ে সে দেখে, তার মা যন্ত্রণায় তলপেট চেপে বসে রয়েছে। আর বাবা কাজে বেরিয়ে গিয়েছে। এর খানিক বাদেই আমার মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে মারা যায়।’’

উত্তর দমদম পুর হাসপাতালে মারা যান মধুমিতা। পরিবার জানায়, ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, মধুমিতার ফ্যালোপিয়ান টিউব ও জরায়ুতে গুরুতর আঘাত ছিল। তলপেটে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে নিমতা থানার পুলিশ মধুমিতার স্বামীকে বধূ নির্যাতন ও খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে। কিন্তু এত দিনেও পুলিশ চার্জশিট দিতে পারেনি। ফলে ৮৫ দিন জেল হেফাজতে থাকার পরে ব্যারাকপুর আদালত থেকে অভিযুক্ত জামিন পান।

মধুমিতার স্বামীর পাল্টা দাবি, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। শাশুড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে পুলিশের কাছে মিথ্যে বলিয়েছেন। আমার স্ত্রীর কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। হয়তো সে জন্য ওর তলপেটে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। ওর রক্তাল্পতা ছিল। আমি বার বার বলা সত্ত্বেও চিকিৎসা করাত না।’’ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তাঁর জবাব, ‘‘কিছু কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি হয়েছে। তবে মারা যাওয়ার দিন সকালে কোনও অশান্তি হয়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও স্ত্রীর শরীরের বাইরে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।’’

মহিলা কমিশন সূত্রের খবর, মধুমিতার দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে তারা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। মামলাটি কমিশনে নথিভুক্ত হওয়ার কথা জানালেও পুলিশের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি শুধু বলেন, ‘‘কমিশন মহিলাদের সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ায়। তদন্ত নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার মা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

কমিশন সূত্রের খবর, কেন ৮৫ দিন অভিযুক্ত জেলে থাকা সত্ত্বেও আদালতে চার্জশিট দিতে পারল না পুলিশ, তা নিয়ে মামলার তদন্তকারী আধিকারিককে কার্যত তিরস্কার করা হয়েছে। বধূর পরিবার জানায়, মধুমিতার মেয়ের বক্তব্য পুলিশ শুনলেও কোনও গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। জানা গিয়েছে, শরীরে মারধরের আঘাত না থাকা কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়ার বিষয়টি তদন্তকারী আধিকারিক কমিশনকে জানান। সেই যুক্তি উড়িয়ে কমিশন তদন্তকারী আধিকারিককে পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ খোঁজায় গুরুত্ব দিতে বলে।

কেন চার্জশিট দেওয়া গেল না? ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, ‘‘ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক তাঁর অনুমান জানিয়েছেন। সেটির বিষয়ে নিশ্চিত হতে হিস্টো-প্যাথোলজিক্যাল রিপোর্ট জরুরি। না হলে শুধু বধূ নির্যাতনের উপরে চার্জশিট দিতে হত। খুনের বিষয়টিতে জোর দিতেই ওই পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে।’’

মধুমিতার মায়ের দাবি, ‘‘ওই রিপোর্ট পেতে আর কত সময় লাগবে, তা পুলিশ জানায়নি। এমনকি, কিসের ভিত্তিতে জামাই জামিন পেলেন, সেটাও স্পষ্ট করেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Nimta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy