Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মৃত্যু তরুণীর

ভাটপাড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী সুনীল জানান, তাঁর পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু দিন পরে আরও কম খরচে অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব দেন অনির্বাণবাবু। রাজি হন অঞ্জনা এবং সুনীল।

অঞ্জনা সাহা

অঞ্জনা সাহা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০২:২২
Share: Save:

অস্ত্রোপচারের সাহায্যে মাড়ির উঁচু ভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে চেয়েছিলেন তিরিশ বছরের বধূ। কিন্তু অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে মৃত্যুই হল জগদ্দলের আতপুরের বাসিন্দা অঞ্জনা সাহার (৩০)। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট দন্ত চিকিৎসককে কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁর পরিজনেরা।

অঞ্জনার পাঁচ বছরের একটি ছেলে আছে। স্বামী সুনীল সাহা জানান, জানুয়ারিতে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সল্টলেকের বাসিন্দা, দন্ত চিকিৎসক অনির্বাণ সেনগুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। এপ্রিলে অনির্বাণবাবু জানান, অস্ত্রোপচারে দু’লক্ষ টাকা খরচ হবে। ভাটপাড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী সুনীল জানান, তাঁর পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু দিন পরে আরও কম খরচে অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব দেন অনির্বাণবাবু। রাজি হন অঞ্জনা এবং সুনীল। সুনীল জানিয়েছেন, ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়ার পরে গত মঙ্গলবার পার্ক স্ট্রিটের এক নার্সিংহোমে তাঁর স্ত্রীর অস্ত্রোপচার হবে বলে জানানো হয়।

পরিবার সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ শুরু হয় অস্ত্রোপচার। ঘণ্টা তিনেক পরে চিকিৎসক জানান, কিছু ক্ষণের মধ্যে অঞ্জনাকে বেডে দেওয়া হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় পরিজনেরা ফের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সুনীলের কথায়, ‘‘তখনই জানতে পারি, স্ত্রীর অবস্থা সঙ্কটজনক। বুধবার সকালে বলা হয়, রোগীর মস্তিষ্ক সাড়া দিচ্ছে না। স্নায়ু চিকিৎসককে দেখান।’’ ওই দিনই মুকুন্দপুরের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অঞ্জনাকে। শনিবার বিকেলে সেখানেই মারা যান তিনি।

সুনীলের অভিযোগ, ‘‘দাঁতের অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে স্ত্রীকে হারাতে হবে ভাবিনি। ওই দন্ত চিকিৎসকের শাস্তি চাই।’’ তাঁর দাদা ভোলানাথ সাহার অভিযোগ, অনির্বাণবাবুর কাছে অঞ্জনার চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি চাইতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। এ নিয়ে বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগও জমা পড়েছে। অন্য দিকে ওই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠেরা পাল্টা অভিযোগে জানিয়েছেন, রোগিণীর পরিজনেরা অনির্বাণবাবুর উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান।

অভিযুক্ত চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠদের দাবি, অনির্বাণবাবু শয্যাশায়ী। তাঁর আইনজীবী রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের থেকে যেটুকু জেনেছি, অস্ত্রোপচারে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল না। অস্ত্রোপচারের আগেই রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। এমন অস্ত্রোপচারে দন্ত চিকিৎসকের ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম। অ্যানাস্থেটিস্টের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’ দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যানাস্থেটিস্ট তপন বসু বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের আগে দেওয়া কোনও একটি ওষুধ থেকে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। যাতে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সমস্যা তৈরি করে।’’ মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে জানানো হয়েছে, মস্তিষ্কে আঘাতের কারণেই অঞ্জনার মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতি হল কেন? তপনবাবুর সাফাই, ‘‘রোগীর যে অ্যালার্জি ছিল, তা গোপন করা হয়েছিল। কোনও ওষুধ থেকে সে জন্যই প্রতিক্রিয়া হয়ে বিপত্তি ঘটেছে।’’

যদিও এই সব যুক্তি খারিজ করে অঞ্জনার স্বামী সুনীল পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীর শারীরিক অবস্থা উপযুক্ত কি না, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার? অঞ্জনার অ্যালার্জি সংক্রান্ত পরীক্ষা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। সদ্য মা-হারা সন্তানকে আগলে সুনীল বলেন, ‘‘এমন কী দাঁত উঁচু ছিল বলুন? তবুও বলত, মাড়ি উঁচু বলে প্রাণ খুলে হাসতে পারে না। হাসতে গিয়ে প্রাণটাই চলে গেল।’’ আজ, সোমবার স্বাস্থ্য কমিশন এবং ডেন্টাল কাউন্সিলের রাজ্য শাখায় ওই দন্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন মৃতার পরিজনেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Woman Dental Operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy